বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে লিবিয়ার অনেক শহর, গাদ্দাফি দুষলেন লাদেনকে
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১গাদ্দাফি দুষলেন লাদেনকে
ত্রিপোলিতে সংবাদকর্মীদের চলাচলের কার্যত কোন উপায়ই নেই৷ সরকারী সমর্থক ‘গুন্ডা'রা সেখানে অবাধে গুলি চালাচ্ছে৷ ফলে নিরাপত্তাও তো একটি বড় প্রশ্ন৷ বৃহস্পতিবার মুয়াম্মার গাদ্দাফি ত্রিপোলির পশ্চিমে অধিবাসীদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে বললেন, সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভের সঙ্গে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের হাত রয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত অডিও বার্তায় তিনি এই কথা বলেছেন৷ আল জাইয়াহ শহরের মানুষের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি বললেন, ‘‘তোমরা বিন লাদেন হয়ে গেছো৷ ওরা তোমাদের মাদক দ্রব্য দিয়েছে৷’’ তিনি সে দেশের বয়োজ্যেষ্ঠদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,‘‘তরুণরা নেশা করছে এবং খারাপ ব্যবহার করছে৷ আল কায়েদা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে৷’’তবে এদের সংখ্যা খুব বেশী নয় বলে উল্লেখ করে গাদ্দাফি বলেন, এদেরকে আটক করা হবে৷ তিনি আবারো পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
ভূতুড়ে ত্রিপোলি
একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ যখন বিক্ষোভকারীদের হাতে, তখন রাজধানী ত্রিপোলির পরিস্থিতি কী? এর উত্তরে বলা যায়, ভূতুড়ে শহরের গল্পটা বোধ হয় ত্রিপোলির জন্যই প্রযোজ্য৷ এই শহরকে এখন ভূতুড়ে বলেই উল্লেখ করছেন সাংবাদিকরা৷প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্রসহ সবুজ আন্দোলনের নেতা গাদ্দাফির অনুসারীরা পাহারা দিচ্ছে শহরটিতে৷ যেখানে যখন ইচ্ছে গুলি ছুঁড়ছে৷ জনগণ রাস্তায় নেই৷ মূলত রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ দখলে রাখতে চাইছে গাদ্দাফি অনুসারীরা৷ ইতিমধ্যে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর বেনগাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আন্দোলনকারীরা৷ সে শহরের নিরাপত্তা প্রধান সরকারের সঙ্গ ত্যাগ করে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন৷ ইতিমধ্যে খবর এসেছে, দেশটির তৃতীয় বৃহত্তর শহর মিসুরাতা'র নিয়ন্ত্রণভার নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা৷ আরও বেশ কিছু ছোট ছোট শহর রয়েছে তাদের হাতে৷ ত্রিপোলি সীমান্তে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হচ্ছে বলে এক খবরে জানা গেছে৷
আন্দোলনকারীরা রাজধানীর দিকে
রাজধানী থেকে মাত্র ৭৫ মাইল দূরে জুয়ারা শহরের নিয়ন্ত্রণ বিরোধীদের হাতে৷ শহরে ঢোকার জন্য আশেপাশের আরও কয়েকটি এলাকাতেও রয়েছে তারা৷ মূলত আন্দোলনকারীরা এখন ত্রিপোলিতে ঢোকারই চেষ্টা করবে – এমন পরিকল্পনার কথাই জানা যাচ্ছে৷ তবে এদের ঠেকাতে যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ‘লৌহমানব' বলে পরিচিত লিবীয় নেতা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা৷
তেলের বাজারে আগুন
বিশ্বে তেলের বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে লিবিয়া৷ সেই লিবিয়ায় যখন অচলাবস্থা, তখন বাজারে কী এর প্রভাব পড়ছে না? জানা গেছে, নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইতিমধ্যেই৷ বৃহস্পতিবার অশোধিত তেলের ব্যারেলপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২০ মার্কিন ডলার৷ যা গত আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ লিবিয়ায় কাজ করছে, এমন কোম্পানিগুলো তেল উত্তোলন বন্ধ করে দেবার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানে কর্মরত ফরাসি কোম্পানি টোটাল, স্পেনের রেপসল. ইটালির ইএনআই তাদের আংশিক উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে৷ অস্ট্রিয়ার ওওমভি এবং জার্মান কোম্পানি উইন্টার শেল সেখানে তেল উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেছে আজই৷ ফলে সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ আর যদি কোন কারণে সরকার সমর্থকরা তেল সরবরাহ পাইপে হামলা চালায়, তাহলে তা ভয়ঙ্কর বিপদ রয়ে আনবে বিশ্ববাসীর জন্য, জানাচ্ছে একটি সংবাদ সংস্থা৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন