1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার আশঙ্কায় বিএনপি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ আগস্ট ২০২৩

বিএনপি মনে করছে, আন্দোলনের মুখে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তারপরও যেন তাদের শীর্ষ নেতা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন তার ব্যবস্থা করছে সরকার৷ আর সে কারণেই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর দ্রুত বিচার হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4UkBa
জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ফটো)
জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ফটো)ছবি: Al Amin Khondokar

অবশ্য আওয়ামী লীগের কথা হলো, মামলাগুলোর বিচার বরং দেরিতে হচ্ছে৷ বিএনপি নানা বাহানা করে বিচার প্রলম্বিত করছে৷ সরকার আদালতের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করছে না৷
দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছর এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদ দিয়েছেন আদালত বুধবার৷ এটা তারেক রহমানের পঞ্চম এবং জুবাইদা রহমানের প্রথম মামলায় দণ্ড৷
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিচার বিভাগকে সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন,"একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা, মন্ত্রীসহ অনেককে জামিন দেয়া হয়েছে৷ এমনকি তাদের কেউ কেউ খালাসও পেয়েছেন৷ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ ধরনের ১৫টি মামলা ছিল, তারপরও কৌশলে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ওই মামলাগুলো খারিজ করা হয়েছে৷ এটি আওয়ামী লীগ সরকারের কারসাজির বিচার ব্যবস্থা৷”
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা আছে৷ এর মধ্যে দুই মামলায় তিনি কারাভোগ করছেন৷ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷  আর নাইকো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ দন্ডের কারণে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ কারণ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কেউ কোনো মামলায় কমপক্ষে দুই বছরের দন্ডপ্রাপ্ত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য৷
তারেক রহমানও পাঁচটি মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত৷ বুধবার দুর্নীতির মামলায় দন্ডের আগে মানি লন্ডারিং মামলায় সাত বছর, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই বছর, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির মামলায় দুই বছরের কারাদন্ড হয়েছে তার৷
ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়ের করা মামলায় হাই কোর্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের ১৩ বছর ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের তিন বছরের সাজা বহাল রেখেছে৷
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর দুর্নীতি মামলার বিচার চলবে বলে সম্প্রতি আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,  মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দুর্নীতি মামলা সচলের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল৷
তার অভিযোগ, "কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা ছাড়াও ২০১৩-১৪ সালে দায়ের করা কমপক্ষে ৭৯টি মামলা সচল করা হয়েছে৷ এই মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করে শুধু শীর্ষ পর্যায়ের নয়, যারা মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন সংগঠিত করেন তাদেরও দমনের  পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার৷ সরকার তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে৷”

‘আপিল মামলা চললে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে’

তিনি বলেন,"যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের জুয়েল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতিসহ আরো অনেক তরুণ নেতা যারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থাকেন তাদেরও পুরনো মামলায় বিচার শুরু হয়েছে৷ এমনকি তাদের বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য দুই দিনে এক মামলায় ১৪ জনের সাক্ষ্যও নেয়া হয়েছে৷ যারা সাক্ষী দিতে চান না তাদের জোর করে আদালতে আনা হচ্ছে৷”
তার কথা,"সরকার মামলার মাধ্যমে দুই উদ্দেশ্যে কাজ করছে৷ প্রথমত যারা সরকার পতনের আন্দোলন মাঠে সংগঠিত করছে তাদের দমন ও নিষ্ক্রিয় করা এবং দ্বিতীয়ত সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলেও যাতে শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পরেন৷”
তিনি বলেন,"এই প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি৷ তার আপিল চলমান থাকার পরও তাকে নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হয়নি৷ এই নজীর একমাত্র খালেদা জিয়া ছাড়া উপমহাদেশের আর কোথাও নাই৷  সরকার এবার এই কৌশল আরো বিস্তৃত করার চেষ্টায় আছে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে৷”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন," এরশাদের মামলায় এটা পরিস্কার হয়েছে যে আপিল চলমান থাকলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় কোনো বাধা নেই৷ তবে আপিল চলমান না থাকলে নিম্ন আদালতে সর্বনিম্ন দুই বছরের দন্ড হলেই কেউ নির্বাচনের অযোগ্য হবেন৷”
তার কথা,"বাংলাদেশের বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন নয়৷ মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে পুরোপুরি অলাদা করা যায়নি৷ ফলে এখানে প্রভাব বিস্তার করা যায়৷ তাই আমরা দেখি একই ধরনের অপরাধে দুই ধরনের রায় হয়৷ যে অপরাধে বিএনপি নেতাদের বিচার বা সাজা হচ্ছে একই অপরাধ আরো অনেকে করেছেন৷ তাদের কিছু হচ্ছে না৷ বাংলাদেশে সব কিছুই সম্ভব৷”
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন,"তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর শাস্তি হয়েছে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়ের করা মামলায়৷ এই সরকারের সময় তো মামলা হয়নি৷ তাহলে সরকার কীভাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে?  বিএনপির কাজই হচ্ছে মিথ্যাচার করা৷ তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে, কোনো মামলার রায় হলে সবই মিথ্যা৷ আসলে তারাই মিথ্যাচার করে সবকিছু আড়াল করতে চায়৷”
তার কথা, "২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কেও তারা বলতে চাচ্ছে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে করা হয়েছে৷ কিন্তু ওই ঘটনা তো সবাই জানে, সবাই দেখেছে৷ তারপরও তারা মিথ্যাচার করছে৷ আদালত কি কারো কথায় রায় দেয়? আদালত তো তার সন্তুষ্টির ভিত্তিতে রায় দেয়৷”
" ১৬ বছর পর যদি একটি মামলার রায় হয়ে তাহলে কি তা দ্রুত হয়ে গেল? আরো কত বছর পর দিলে সেটা দ্রুত হবে না বিএনপি বলুক৷ আবার পুরানো মামলার কথাও বলা হচ্ছে৷ মামলা পুরনো হলে কি তার বিচার করা যাবে না? তারাই নানা কৌশল করে মামলাগুলো পিছিয়ে দেয়৷ বিচার প্রলম্বিত করে”, বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা৷