1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির টার্গেট সেপ্টেম্বর

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ আগস্ট ২০২৩

সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে সেপ্টেম্বরকেই টার্গেট করছে বিএনপি। তবে সেই কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

https://p.dw.com/p/4VoCv
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ (ফাইল ফটো)
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ (ফাইল ফটো)ছবি: Mortuza Rashed/DW

আর শাসক দল আওয়ামী লীগও সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামছে। তারা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে।

১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী । বলা হয়েছিল ওই দিন ঢাকায় ব্যাপক শো-ডাউন করে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বড় কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করার সম্ভাবনা কম। শনিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফিরলে বড় সমাবেশ করে বা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘেষাণা করা হবে। শুক্রবার দলের  প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি ঢাকায় শোভাযাত্রা  করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছে। ওইদিন বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ, মগবাজার হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত এই শোভাযাত্রার কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির।

একই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশ আছে। এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এই সমাবেশে ছাত্র-যুবকদের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটাতে চায় তারা। পরদিন শনিবারও ঢাকার পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে সমাবেশ আছে আওয়ামী লীগের। সেখানে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে যে তারা মনে করেন, সেপ্টেম্বর মাসেই আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটাতে হবে। বড় জোর অক্টোবরের প্রথম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে। এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। তার আগে কিছু করতে না পারলে নির্বাচনের আবহ তৈরি হলে আর কিছু করা কঠিন হবে। তাদের কথা আন্দোলনের জন্য মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত আছে। কর্মসূচি দিলেই তা সফল হবে। তারা আরেকটি দিক বিবেচনায় রাখছে। তাহলো চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হলে সরকারের আচরণ কেমন হবে। সরকারের আচরণ দেখে তারা কর্মসূচি এবং এর কৌশল নির্ধারণ করবেন। হরতাল নিয়ে তাদের মধ্যে নানা বিতর্ক থাকলেও তা বিবেচনার বাইরে নেই। তবে জোর দেয়া হচ্ছে  ঘেরাও এবং অবরোধের উপর। এরমধ্যে সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিচারালয় ঘোরাওয়ের কর্মসূচি থাকছে। ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিও দেয়া হতে পারে। তবে কোনো কর্মসূচিই  ধারাবাহিকভাবে ঘোষণা করা হবে না। একটি কর্মসূচি শেষে আরেকটি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচিতে কোনো বিরতি থাকবে না। সরকার যাতে আগেই  কর্মসূচি ঠেকাতে প্রস্তুতি নিতে না পারে তাই এইধরনের কৌশল। একই সঙ্গে তারা মনে করছে সেপ্টেম্বরে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো বাড়বে।

‘সেপ্টেম্বরেই আমরা সরকারকে হটাতে চাই’

বিএনপির তৃণমূলে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এরইমধ্যে কর্মসূচি সম্পর্কে নেতারা ধারণা দিয়েছেন। কখন কোন কর্মসূচি আসবে তা না বললেও সবাইকে টানা কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আর গ্রেপ্তার এড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তৃণমূলের একাংশকে পুরো সেপ্টেম্বর ঢাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে যতদূর সম্ভব সবাইকে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তাদের এখন যেকোনো কর্মসূচি পালনে স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন,"সেপ্টেম্বরই আমাদের টার্গেট। এইমাসেই আমরা সরকারকে হটাতে চাই। আমরা নানা ধরনের ঘোরাও-অবরোধ ছাড়াও আরো নতুন কিছু কর্মসূচি দেব যা আগে প্রকাশ করা হবে না। আর হরতালও আমাদের বিবেচনায় বাইরে নেই। আমরা মনে করি জনগণের প্রস্তুতি এবং আন্তর্জাতিক চাপ মিলে এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে সরকারকে চূড়ান্ত চাপে ফেলার সঠিক সময় সেপ্টেম্বর। বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে টানা কর্মসূচিতে চলে যাচ্ছে।”

তার কথা,"সরকারের আচরণের কারণে আমরা একসঙ্গে সব কর্মসূচি প্রকাশ করব না। আমরা ধারাবাহিকভাবে একটি একটি করে কর্মসূচি প্রকাশ করব। আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব, বাস্তবায়ন করব। পুলিশের কোনো অনুমতি আর নেব না। শুধু তাদের অবহিত করব। তাদের অনুমতির অপেক্ষায় থাকব না।”

‘আমরা মাঠে নেমে গেছি এবং নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবো’

তিনি জানান, "মহাসচিব দেশে ফিরলেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমাদের হাতে আর সময় নেই। আর ছাড় দেয়া যাবে না।”

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,"আমরা এখন যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছি তারা লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে কাজ করছি। আগামী ২-৩ তারিখে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হবে। সেখানেই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। বিক্ষোভ, অবরোধ , ঘেরাও ও হরতালসহ সব কর্মসূচিই আমাদের বিবেচনায় আছে। তবে কখন কোন কোন কর্মসূচি দেয়া হবে তা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। সরকারের মনোভাবের ওপর। যুগপৎ কর্মসূচির বাইরেও আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি থাকবে।”

তিনি জানান,"চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে সেপ্টেম্বরের ১৪-১৫ তারিখের পর। তার আগে এইচএসসি পরীক্ষা থাকার কারণে প্রথম দুই সপ্তাহ কর্মসূচি একটু নরম হতে পারে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে পরের দুই-তিন সপ্তাহই আমাদের টার্গেট। এই সময়ে আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিতে চাই আমরা।”

এদিকে  ঢাকায় ছাত্রলীগের শুক্রবারের  সমাবেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো মাঠে নেমে যাচ্ছে। জানা গেছে, এখন থেকে বিএনপির যেকোনো কর্মসূচির দিনই ঢাকা এবং সারাদেশে আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচি থাকবে। তাদের টার্গেট হলো বিএনপিকেও একদিনের জন্যও  এককভাবে মাঠে না থাকতে দেয়া।  আর এজন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে সারাদেশে প্রস্তুত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন,"নির্বাচনের প্রচার আর নির্বাচন ঠেকানোর বিরুদ্ধে আমরা মাঠে নেমে গেছি।”

আওয়ামী লীগ মনে করে, তারা যদি সার্বক্ষণিক মাঠে থাকে তাহলে বিএনপি তেমন কিছু করতে পারবে না। তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে থাকবে। আর বিদেশি চাপ যতই থাকুক মাঠের শোডাউন এবং শক্তিই আসল বলে তাদের ধারণা।

আওয়ামী লীগ নিজস্ব কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করলেও তারা আসলে বিএনপির কর্মসূচি দেখেই কর্মসূচি দেবে। পাল্টা কর্মসূচি থেকে কোনোভাবেই সরে আসবেনা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক  এস এম কামাল হোসেন বলেন,"আমরা মাঠে নেমে গেছি এবং নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। শুক্রবার ছাত্রলীগের সমাবেশ, শনিবার আওয়ামী লীগের সমাবেশ-এরপর এভাবেই চলতে থাকবে। আমরা  মানুষকে নির্বাচনমুখী করার জন্য প্রচার চলাবো। আর যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইবে তাদের প্রতিরোধ করব।”

বিএনপির কর্মসূচি দেখে পাল্টা কর্মসূচি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সেটা তো বলা যাবে না যে আমরা কখন কোন কর্মসূচি দেব। যখন প্রয়োজন হবে তখনই কর্মসূচি দেব। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তো আমরা মাঠেই থাকব। তাই কর্মসূচি যখন প্রয়োজন তখনই হবে।”

বিদেশি চাপ আরো বাড়লে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কেনো বিদেশি চাপে কাজ হবে না।  বিএনপিকে কি বিদেশিরা জনগণ সাপ্লাই দেবে? জনগণের চাপ ছাড়া আর কোনো চাপকে আওয়ামী লীগ চাপ মনে করে না। শেখ হাসিনা চাপ মনে করে না। আমরা জনগণের প্রতি আস্থাশীল। কোনো বিদেশি চাপে কাজ হবে না।”