1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাসাভাড়া বাড়লেও আয় বাড়ছে না পর্তুগালে

১৩ অক্টোবর ২০২৩

ইউরোপের অপেক্ষাকৃত গরিব দেশ পর্তুগাল আজ যথেষ্ট বিনিয়োগ ও কর্মী আকর্ষণ করছে৷ কিন্তু সেই প্রবণতার কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে ন্যায্য মূল্যে বাসস্থান পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে৷

https://p.dw.com/p/4XTqR
Portugal Lissabon | Demonstration gegen Portugals Wohnungskrise
বাসা ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে পর্তুগালে প্রতিবাদ করছেন স্থানীয়রা৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়৷ ফাইল ফটো৷ ছবি: Armando Franca/AP Photo/picture alliance

লিসবন শহরের উপকণ্ঠে বেআইনি বসতি আবার বেড়ে উঠছে৷ বেড়ে চলা বাসাভাড়ার কারণে শহরাঞ্চলের মানুষ কতটা সমস্যার মুখে পড়ছেন, জর্জিনা শিমোয়েসের অভিজ্ঞতা তা দেখিয়ে দিচ্ছে৷

৫৮ বছর বয়সি এই নারী ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুটি রেলপথের মাঝে বাস করেন৷ এতকাল মাসে ৩০০ ইউরো গুনতে হয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতেই ভাড়া বেড়ে ৫০০ ইউরো হতে পারে৷ জর্জিনা বলেন, ‘‘৭৬০ ইউরো ন্যূনতম আয় সম্বল করে বাঁচলে বাসাভাড়া খুবই বেশি মনে হয়৷ সেটা খুব কঠিন৷ গাড়ির খরচ মেটাতে আমাকে দ্বিতীয় চাকরিও করতে হয়৷ কাজে পৌঁছতে আমার গাড়ির প্রয়োজন হয়৷ দিনে ১৩ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷''

পর্তুগালে কী ঘটছে? এককালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গরিব হিসেবে পরিচিত এই দেশটির আকর্ষণ বর্তমানে আচমকা বেড়ে গেছে৷ অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটের সময়ে সরকার টের পেয়েছিল যে বাইরে থেকে বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে৷ বিদেশিরা পাঁচ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করলেই রেসিডেন্স পার্মিট পেতে পারেন৷ বিশেষ করে চীন ও ব্রাজিল থেকে অনেক বিনিয়োগকারী সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন৷ ফ্রান্সের অনেক বয়স্ক মানুষও পর্তুগালে চলে আসেন৷

কয়েক বছর ধরে পর্তুগালের প্রতি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিরও আগ্রহ বেড়েছে৷ কারণ সে দেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ বর্তমানে লিসবন ও পোর্টো শহরের মাঝে ডেভেলাপমেন্ট সেন্টর গড়ে উঠছে৷ এমনকি মাঝারি মাপের কোম্পানিগুলির জন্যও ব্যবসার আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে৷ বারিক্স কোম্পানির কর্ণধার ইয়োহানেস রিচেল মনে করেন, ‘‘অন্য কোম্পানিগুলিও সেটা বুঝতে পেরেছে৷ বশ এখানে উপস্থিত৷ পর্তুগাল টেলিকমের ইনোভেশন সেন্টারে ৯০০ ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছেন৷ এখানে এসে সেই স্বাদ না পেলে শুধু জার্মানিতে বসে সেটা প্রায় টেরই পাওয়া যায় না৷’’

ভালো কর্মী, অথচ বেতন কম৷ ফলে পর্তুগাল আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে৷ শুধু পর্তুগাল নয়, অন্য দেশের দক্ষ কর্মীরাও আকর্ষণ বোধ করছেন৷ ব্যাপক নির্মাণের কাজ চলছে৷ লিসবন শহরে তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে৷ স্থপতি রেনজো পিয়ানোর ডিজাইন অনুযায়ী সেরা এলাকায় গোটা বসতি তৈরির কাজ চলছে৷

তবে প্রপার্টি এজেন্ট হিসেবে জোসে কাব্রালস্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কোন ধরনের গ্রাহকের জন্য এই বাসস্থান তৈরি হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে বর্গমিটার প্রতি ৬,০০০ ইউরো থেকে দাম শুরু হচ্ছে৷ সবকিছু একেবারে নতুন৷ কয়েক বছর আগেও মানুষ মানচিত্রে এই জায়গাটি সহজে চিহ্নিত করতে পারতো না৷’’

দুই রেলপথের মাঝে থাকেন পর্তুগালের যে নারী

সাধারণ মানুষের জন্য বাসস্থানের সংখ্যা অত্যন্ত কম৷ জর্জিনা নিজের পাড়ায় এক উদাহরণ তুলে ধরলেন৷ এককালে সরকার থেকে প্রান্তিক মানুষদের জন্য সেই বাসস্থান ধার্য করা হতো৷

সরকারও নড়েচড়ে বসেছে৷ এয়ারবিএনবি-র জন্য নতুন করে আর কোনো ফ্ল্যাটের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না৷ সেইসঙ্গে অনেক পাবলিক বিল্ডিং বাসস্থানে রূপান্তরিত করা হচ্ছে৷ বেসরকারি মালিকানার ভবন খালি থাকলে সেগুলি ভাড়া দেওয়া বাধ্যতামূলক করছে সরকার৷

পর্তুগালের যে সব মানুষ ন্যায্য মূল্যের বাসস্থানের জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছেন, তাঁদের মনে অবশ্য তেমন প্রত্যাশা নেই৷ হাবিতা সংগঠনের আন্তোনিয়ো গোরি মনে করেন, আবার লোক দেখানো কিছু করা হচ্ছে৷ তাঁর মতে, সেটাই এই সরকারের বৈশিষ্ট্য৷

লিসবনের প্রতিবেশী শহর ওয়েইরাশের মেয়র ইসালতিনো মোরাইশও এমন উদ্যোগ সম্পর্কে সন্দিহান৷ তিনি বলেন, ‘‘নিজস্ব জমিতে সরকারি উদ্যোগে বাসস্থান নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে৷ প্রয়োজনে এমনকি মালিকানা কেড়ে নিতে হবে৷ জাতীয় কৃষি রিজার্ভ থেকে জমি বার করে সেখানে নির্মাণ করা আরো গুরুত্বপূর্ণ৷ সরকারি উদ্যোগে আরো বাসস্থানের ব্যবস্থা না করলে আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারবো না৷''

ওয়েরিয়াশ শহরে এমন বাসস্থান নির্মাণ করা হচ্ছে৷ পর্তুগালের সরকারের পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে কিছু একটা যে করতে হবে, এজেন্ট হিসেবে কাব্রালও সেটা টের পাচ্ছেন৷ তাঁর মতে, সামাজিক শান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটা হারালে বিনিয়োগের কিছু অংশও পর্তুগাল হারাবে৷

শুধু সুন্দর ভাবমূর্তি মানুষের জন্য আর যথেষ্ট নয়৷ মাসে ১,৪০০ ইউরো গড় আয়ের এই দেশে মাত্র তিন শতাংশ বাসস্থান সরকারি উদ্যোগে ন্যায্য মূল্যে ধার্য করা হয়, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড়ের মাত্র এক তৃতীয়াংশ৷

মার্কুস ব্যোনিশ/এসবি