1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজেটে ঢালাও অর্থ অন্ধ্র ও বিহারকে, আয়করে সামান্য বদল

২৩ জুলাই ২০২৪

তার সপ্তম ও তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই বাজেটে ঘোষণা আছে প্রচুর।

https://p.dw.com/p/4icZu
সংসদের বাইরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার হাতে ধরা বাজেট বক্তৃতার কপিষ
সংসদে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: Imtiyaz Khan/Anadolu/picture alliance

কেন্দ্রীয়  অর্থমন্ত্রী সরকারের দুই শরিক নেতার রাজ্য বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ঢালাও বরাদ্দ করেছেন। যুবকদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন। আয়করে সামান্য পরিবর্তন করে মধ্যবিত্তদের পাশে পেতে চেয়েছেন। তবে ক্যাপিটাল গেইনসের উপর কর বসানোর সিদ্ধান্তের পর শেয়ার বাজার চারশ পয়েন্ট পড়েছে।

আয়করে পরিবর্তন

গত বেশ কয়েকটা বাজেটে আয়করের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনেনি মোদী সরকার। কিন্তু তিন নম্বর মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে আয়করের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করে মধ্যবিত্তদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এখন আয়করের ক্ষেত্রে দুই ধরনের ব্যবস্থা চালু আছে। নতন ব্যবস্থা ও পুরনো ব্যবস্থা। নতুন ব্যবস্থায় কোনো করছাড় পাওযা যায় না। কিন্তু সেখানে কর কিছুটা কম দিতে হয়। পুরনো ব্যবস্থায় করছাড় পাওয়া যায়।

নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, এবার নতুন ব্যবস্থায় স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তিন লাখ পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কোনো কর লাগবে না। তিন থেকে সাত লাখ পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। সাত থেকে ১০ লাখ টাকা বার্ষিক আয় হলে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ লাখ পর্যন্ত আয় হলে ১৫ শতাংমশ হারে এবং ১২ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ এবং তার বেশি হলবে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

সীতারামনের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় ক্ষেত্রে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা বেশি কর বাঁচাতে পারবেন করদাতারা। পুরনো ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।

যুবক ও কর্মসংস্থান

সীতারামন ঘোষণা করেছেন, এবারের বাজেটে তিনি যুব ও কর্মসলংস্থানের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তার ঘোষণা, দেশের এক কোটি যুবকে শীর্ষসংস্থায় ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেয়া হবে।  যারা চাকরি পাননি, তারা ইন্টার্নশিপ করলে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা ও এককালীন ছয় হাজার টাকা পাবেন। পুরো টাকাটাই সিএসআর বা কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি তহবিল থেকে দেবে সংস্থাগুলি।

প্রথমবার যা ফর্মাল সেক্টরে চাকরির দুনিয়ায় ঢুকছেন, তাদের এক মাসের বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করবে সরকার।

দুই শরিকের রাজ্যের জন্য

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সরকার বানাবার জন্য তারা এনডিএ-র শরিকদের উপর নির্ভরশীল। বাজেটে তার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা দিয়েছে। দুই প্রধান শরিক অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের নীতীশ কুমারের অনেক দাবি মেনে নেয়া হয়েছে।

নির্মলা জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন মেনে তাদের রাজধানী বানাবার জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার সাহায্য দেয়া হবে। অন্ধ্রে পোলাভরম প্রকল্প দ্রুত শেষ হবে। অন্ধ্রে জল, বিদ্যুৎ ও রেলের জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। পিছিয়ে থাকা এলাকার জন্য তারা ঋণ নিতে পারবে।

বিহারের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নীতীশ কুমারের রাজ্যে নতুন বিমানবন্দর ও স্পোর্টস কমপ্লেক্সও হবে। এছাড়া ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণে।

নির্মলা জানিয়েছেন, পাটনা-পূর্ণিয়া, বক্সা-ভাগলপুর-সহ তিনটি এক্সপ্রেসওয়ে হবে। বক্সায় গঙ্গার উপর সেতু হবে। একটি দুই হাজার তিনশ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। 

গয়ায় বিষ্ণুপাদ ও মহাবোধি মন্দিরে বারাণসীর ধাঁচে মন্দির করিডোর হবে।

গয়াতে একটি শিল্পতালুকও হবে।

এছাড়া আসামেও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্র সাহায্য করবে।

অন্য সিদ্ধান্ত

নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, কিছু আর্থিক সম্পদের ক্ষেত্রে শর্ট টার্ম গেইনের উপর ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। লং টার্ম গেইনের ক্ষেত্রে কর দিতে হবে সাড়ে বারো শতাংশ। নথিভুক্ত নয় এমন বন্ড, ডিবেঞ্চার, ডেট মার্কেট ফান্ড, বাজারের সঙ্গে যুক্ত ডিবেঞ্চারের ক্ষেত্রেও কর দিতে হবে।

সীতারামন জানিয়েছেন, গ্রাম ও শহরের গরিবদের জন্য তিন কোটি বাড়ি বানানো হবে। শিল্প শ্রমিকদের জন্য ডর্মিটারি বানানো হবে। শহরের গরিবদের জন্য বাড়ি তৈরির জন্য ১০ লাখ কোটি টাকা দেয়া হবে। কৃষিখাতে দেড় লাখ কোটি টাকা দেয়া হবে।

দাম কমছে

মোবাইল ও তার যন্ত্রাংশের উপর থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে। সোনা ও রুপোর ক্ষেত্রে ছয় শতাংশ  ও প্ল্যাটিনামের ক্ষেত্রে ছয় দশমিক চার শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে।

ক্যানসারের তিনটি ওযুধের উপর থেকে শুল্ক কমানো হয়েছে। ফলে এইসব জিনিসের দাম কমবে।

প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, ''এই বাজেট হলো, বিকশিত ভারতের বাজেট। শিল্পোন্নয়ন থেকে শুরু করে সমাজের সব বর্গের সবার উন্নতির জন্য বাজেটে ব্যবস্থা রয়েছে। এভাবেই ভারত উন্নত রাষ্ট্র হবে।''

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ''নির্মলা সীতারামনকে ধন্যবাদ, তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ছয় লাখ ২১ হাজার ৯৪০ কোটির বরাদ্দ করেছেন।''

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মত হলো, ''এই বাজেট ভারতের নতুন আশা  উদ্দেশ্যর প্রতীক।''

বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, এটা হলো, কুর্সি বাঁচাও বাজেট। 

কংগ্রেসের তরফ থেকে জয়রাম রমেশ বলেছেন, ''সরকার এতদিনে বেকারত্ব ও ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংকটটা স্বীকার করে নিলো।'' কংগ্রেসের দাবি, বাজেটে শিক্ষা নিয়ে কোনো কথা নেই। নন পারফর্মিং অ্যাসেট বা এমপিএ নিয়ে একটা শব্দও খরচ করা হয়নি।

তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ওব্রায়েনের মতে, ''এই বাজেটে সরকারের ব্যর্থতার ছবিই প্রকট হয়েছে।''

'রাজনৈতিক বাজেট'

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডি ডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এই বাজেটের অনেকটাই রাজনৈতিক। এনডিএ-র দুই প্রধান শরিক দলের নেতা চন্দ্রবাবু ও নীতীশকে খুশি করতে বিহার ও অন্ধ্রের জন্য ঢালাও প্রকল্প দেয়া হয়েছে।  বোঝা যাচ্ছে, এতদিন বিজেপি-র বাজেট হতো, এবার এনডিএ-র বাজেট হয়েছে। মজার কথা হলো, অন্ধ্র যাতে একটি প্রকল্পের সুবিধা পায়, সেজন্য তাদের পূর্ব ভারতের রাজ্য বলা হয়েছে। কিন্তু তেলেঙ্গানা বা ছত্তিশগড়ের ক্ষেত্রে তা বলা হয়নি।''

জয়ন্তের মতে, ''আয়করে সামান্য পরিবরে্তন করা হয়েছে। এটা প্রত্যাশিত ছিল। বাকি কোনো জায়গায় বরাদ্দের খুব বেশি হেরফের করা হয়নি। করা সম্ভবও ছিল না।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''প্রতিশ্রুতি খুবই ভালো, আসল কথা হলো, বাস্তবায়িত করা।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)