1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে: সফিকুজ্জামান

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৫ মার্চ ২০২৪

রমজান মাস এলেই নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়৷ প্রতিবছরই এটা হয়৷ তাহলে আগে থেকে কেন এই পণ্যগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা হয় না? এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের প্রভাব কতটুকু?

https://p.dw.com/p/4ddjp
কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেট
অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কোনো কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে রাখেন, এমন অভিযোগও রয়েছেছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান৷

ডয়চে ভেলে : রোজা আসলেই কিছু পণ্যের দাম বাড়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না কেন?

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান : রমজানে তো অনেক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় এবং সেই সুযোগ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়ে থাকেন৷ আমরা চেষ্টা করছি, সরবরাহটা ঠিক রাখার৷ এবার কিন্তু একটা ব্যতিক্রম হয়েছে৷ আমরা সুপার শপসহ বড় ব্যবসায়ীদের আহবান করেছিলাম গায়ের দামের চেয়েও যেন পণ্যের দাম তারা কম রাখেন৷ সেই কথা তারা শুনেছেন৷ বিভিন্ন জায়গায় অফার দিয়ে তারা বিক্রি করছেন৷ আমাদের উদ্যোগের কারণেই তারা সাড়া দিয়েছেন৷

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রমজানে মাসে আপনারা যে অভিযান চালান, সেটা কি পর্যাপ্ত?

আমাদের কাজটাকে শুধু অভিযান বললে সঠিক হবে না৷ আমরা মনিটরিং করি৷ বিশেষ বিশেষ জায়গায় অভিযান করি৷ সম্প্রতি আমরা নারায়ণগঞ্জে অভিযান করেছি, সেখানে আগের বছরের খেজুর মজুদ করে রেখেছিল৷ বাজার অস্থির করতে তারা সেটা করছিল৷ ওই খেজুরগুলো আমরা জব্দ করেছি৷ এগুলো অভিযান৷ আর মনিটরিং কার্যক্রম চলে সবসময়৷ ঢাকাসহ সারাদেশে আমাদের ৪০ থেকে ৪৫টি টিম মনিটরিং বা অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷

আপনারা অভিযানে গিয়ে কি কখনও সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছেন?

এই শব্দটা আমি উচ্চারণও করতে চাই না৷ কর্পোরেট গ্রুপগুলো এমন করতে পারে৷ তাদের কিন্তু আমরা মনিটরিংয়ে রেখেছি৷ আর যেখানে লাখ লাখ কৃষক সবজি উৎপাদনে জড়িত সেখানে এই শব্দটা প্রযোজ্য না৷ বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে৷ হাত বদলে প্রতিটি পক্ষই অহেতুক, অনৈতিকভাবে, অন্যায্যভাবে অনেক লাভ করে৷ যে কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়৷ এই কারণে কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে রাতভর অভিযান পরিচালনা করছি৷ যৌক্তিক মূল্যে যেন মানুষ পণ্যটি পায় সে কারণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷

ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা নিয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে?

রমজানে যেহেতু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগটা নেয়, তাই আমরা অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসি৷ পর্যায়ক্রমে আমরা সবার সঙ্গেই বসার চেষ্টা করি৷ বোঝানোর চেষ্টা করি৷ এবার যেটা হয়েছে, আমরা ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি৷ অনেক ক্ষেত্রেই তারা দাম কমিয়ে দিয়েছেন৷

আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ আছে: এ এইচ এম সফিকুজ্জামান

রমজানে তো নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা বাড়ে এগুলো কি আগে থেকেই পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়, নাকি আসলেই সংকট থাকে? আপনারা অভিযানে গিয়ে কী দেখেছেন?

এখানে দুই ধরনের পণ্যের চাহিদা আছে৷ একটা আমদানি করা হয়, আরেকটা দেশের মার্কেটেই পাওয়া যায়৷ আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে যদি বলি চিনি, তেল, ছোলা, খেজুর এগুলো তো আগে থেকেই প্রক্রিয়া করতে হয়৷ এগুলো কিন্তু পুরোটাই প্রাইভেট সেক্টর আমদানি করে৷ চাহিদা অনুযায়ী তারা সেটা করেন৷ এগুলো আমরা মনিটরিং করি৷ সেখানে মজুদ আর সরবরাহের একটা ব্যালান্স আছে৷ সেটা আছে বলেই কয়েকদিন আগে একটা বড় সুগার রিফাইনারিতে আগুন লাগার পরও চিনির দাম বাড়েনি৷ মজুদ পরিস্থিতি ভালো ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ দেশীয় পণ্যের মধ্যে দেখেন এখন লেবুর মৌসুম না৷ কিন্তু রমজানে লেবুর চাহিদা অনেক বাড়ে৷ ফলে এখানে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য থাকে না৷ এসব কারণেও অনেক পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে৷   

কোনো এলাকায় অভিযান চালিয়ে চলে আসার পর কী আবার ফলোআপ করেন?

আমাদের যে লজিস্টিক, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রতুল৷ ১৭ জেলায় আমাদের কোনো অফিসার নেই৷ জেলা পর্যায়ে একজন অফিসার ও একজন কম্পিউটার অপারেটর আছে৷ দেশে এত বড় বড় বাজার, তার সবগুলোতে আমাদের পক্ষে সবসময় নজরদারি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তথ্যভিত্তিক কাজ করি৷ বিশেষ তথ্য পাওয়ার পরই আমরা অভিযান পরিচালনা করি৷

অভিযানে জেল-জারিমানা করেন এতেই কী সমাধান? নাকি বিকল্প কিছু ভাবনা আছে?

আমরা কিন্তু ভোক্তাদেরও সচেতন করি৷ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের যদি আমরা সচেতন করতে না পারি তাহলে অভিযান দিয়ে সমাধান হবে না৷ আমাদের বাইরেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং জেলা প্রশাসন এ নিয়ে কাজ করে৷ আমরা সবাই মিলেই সম্মিলিতভাবে কাজটা করছি৷ আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ আছে৷ গতানুগতিক ধারায় এখানে পণ্যের হাতবদল হয়৷ ৪-৫ বার হাতবদলে দামটা বেড়ে যাচ্ছে৷ সে কারণে আমরা অ্যাপ নির্ভর বিপণন ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি৷

সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আপনাদের কোনো কার্যক্রম আছে?

অনেক ধরনের কর্মসূচী আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা সেমিনার করি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালাই৷ গণশুনানি করছি৷ নানাভাবে আমরা এই কাজগুলো করছি৷

কত শতাংশ বাজার আপনারা দেখভাল করতে পারেন?

এইভাবে কোনো পরিসংখ্যান নেই৷ তবে এখন প্রতিদিন আমাদের ৪০ থেকে ৪৫টি টিম বাজারে কাজ করছে৷ সারাদেশের সব বাজারে আমাদের পক্ষে অভিযান চালানো সম্ভব না৷ স্থানীয় প্রশাসন সেখানে কাজ করছে৷

রোজায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফেরাতে এই মুহূর্তে করণীয় কী?

রোজা তো শুরু হয়ে গেছে৷ ফলে স্বস্তি-অস্বস্তি তো আপেক্ষিক বিষয়৷ এখন ধরেন ইফতারে চকবাজারের ‘বড় বাপের পোলায় খায়' এর যদি ব্যাপক চাহিদা থাকে, তাহলে সেটা তো ভিন্ন কথা৷ হালিমের যদি ব্যাপক চাহিদা থাকে, সেটাও ভিন্ন কথা৷ কিন্তু মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷