মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
৩১ ডিসেম্বর ২০১৩আসক মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান হতে পারে৷
সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ৮৪৮টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে৷ যাতে নিহত হয়েছেন প্রায় ৫০৭ জন৷ আর আহত ২২,৪০৭ জন৷ নিহতদের মধ্যে ১৫ জন পুলিশ এবং দু'জন বিজিবি সদস্যও রয়েছেন৷
রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে পেট্রোল বোমা হামলায় আহত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ৯৭ জনের মধ্যে ২৫ জন মারা গেছেন৷ সন্ত্রাসী তত্পরতায় নতুন সংযোজন গুম বা গুপ্ত হত্যা৷ ২০১৩ সালে এ ধরণের গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন৷ এছাড়া, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৭২ জন৷
আসক-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা মনে করেন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতার কারণে ২০১৩ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটেছে৷ এর জন্য প্রধানত দায়ী সরকার ও বিরোধী দলীয় প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট৷ তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে সহিংস রাজনীতির চর্চা শুরু করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷
কিন্তু তারা সহিংস হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নূর খান বলেন, জনগণের ওপর আস্থা না রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকা ও যাওয়ার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে৷ কারণ নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ঐক্যমত না থাকায় কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ চাইছে যে যার সুবিধা অনুযায়ী নির্বাচন করতে৷
নূর খান বলেন, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট যদি সমঝোতায় আসতে না পারে তাহলে বাংলাদেশে সশস্ত্র ধর্মীয় জঙ্গি এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উত্থান ঘটতে পারে৷ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে টিকে থাকার জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সশস্ত্র রজনীতির দিকে মানুষের ঝুঁকে পড়ার যথেষ্ঠ কারণ আছে৷ তাদের কাছে আত্মরক্ষার জন্য এই পথকে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তত্পর৷ আর তাদের সহায়তা দিতে বাইরের অপশক্তিও কাজ করছে৷
নূর খানের কথায়, রাজনৈতিক সহিংসতার যাঁরা শিকার হয়েছেন তাঁদের বড় একটি অংশ সাধারণ মানুষ৷ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি তাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই৷ সহিংসতার শিকার হয়ে যাঁরা নিহত হয়েছেন বা আহত হয়েছেন, তাঁদের রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে৷ এমনকি যাঁরা বোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, তাঁরাও ঠিকমতো চিকিত্সা সুবিধাও পাচ্ছেন না৷ শুধু তাই নয়, অনেকে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন৷ তাই সরকারের দায়িত্ব হলো তাঁদের নিরাপত্তা, চিকিত্সা এবং আবাসের ব্যবস্থা করা৷ তাছাড়া সহিংসতার শিকার পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন৷
নূর খান বলেন, এবার রাজনৈতিক সহিংসতা দেশের মানুষের মধ্যে নিরপত্তাহীনতা তৈরি করেছে৷ সৃষ্টি করেছে আতঙ্কের পরিবেশ৷