1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘উচ্চ ঝুঁকি’ দেখছে ডাব্লিউইএফ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ জানুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধান পাঁচটি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ)৷ প্রথমে আছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি৷

https://p.dw.com/p/4M9fH
ঢাকার কারওয়ান বাজার
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধান পাঁচটি ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি৷ছবি: Samir Kumar Dey/DW

আরো যে চারটি ঝুঁকি রয়েছে, তা হলো, ঋণসংকট, উচ্চ পণ্যমূল্যের ধাক্কা, মানবসৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষতি ও সম্পদের জন্য ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা৷

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২২ সালের প্রথম ভাগের প্রেক্ষাপটে এই জরিপ৷ কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে রিজার্ভ ও ডলার সংকটই বাংলাদেশের অর্থনীতির এক নাম্বার ঝুঁকি৷ এখন জরিপ হলে এটাই হবে শীর্ষ ঝুঁকি৷

ডাব্লিউইএফ-এর ধারণাগত এই জরিপে মোট ৩৫টি ঝুঁকির কথা বলা হয়৷ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের শীর্ষ পাঁচটি ঝুঁকি চিহ্নিত করতে বলা হলে তারা ক্রমানুসারে ওই পাাঁচটি ঝুঁকি চিহ্নিত করেন৷ জরিপে অংশগ্রহণকারীরা হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷ বাংলাদেশের মোট ৭২টি কোম্পানি জরিপে অংশ নেয়৷

অন্যান্য দেশেও তারা এই জরিপ করেছে৷ তাদেরও শীর্ষ পাঁচটি ঝুঁকি চিহ্নিত করতে বলা হয়৷ সার্বিক জরিপ থেকে তারা সারা বিশ্বে আগামী দুই বছরের অর্থনৈতিক ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে৷ জরিপের ফলাফল থেকে তারা বলছে, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে৷

বাংলাদেশে ডাব্লিউইএফ-এর অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)৷

পরিস্থিতির ব্যাখ্যা

২০২১ সালের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে মূল্যস্ফীতি মাত্রা ছাড়িয়েছে৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, ২০২২ সালের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৮৬ শতাংশ৷ পরের মাসে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে ৯.১ শতাংশ হয়৷ ওই দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল৷ খাদ্য মূল্যস্ফীতির বড় কারণ ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি৷ সেই সঙ্গে আছে জ্বালানির উচ্চ মূল্য৷

চলতি বছরের শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে৷ আর ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ হবে ১৩০ বিলিয়ন ডলার৷ বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২১ সালে সুদসহ দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১১.৭ বিলিয়ন ডলার৷ ২২ সালে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশকে দ্বিগুণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে৷ এর পরিমাণ ২৩.৪ বিলিয়ন ডলার৷

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ খাদ্য, জ্বালানি তেল ও বিশ্ব রাজনীতিতে নানা সংকটের মুখে পড়ছে৷

এখন যা পরিস্থিতি তাতে সহসা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমবে না: ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

লার ও রিজার্ভ সংকটই শীর্ষে

সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরো ১৪০ দেশে একই প্রশ্নপত্রে এই জরিপ করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে সহসা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমবে না৷ ডলার সংকট, খাদ্যপণ্যের বিশ্বব্যাপী উচ্চমূল্য ও সংরক্ষণবাদী মনোভাব এখন চলমান৷ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও সব কিছু বিবেচনা করে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন৷ চলতি বছরের প্রথমার্ধে এরকমই চলবে৷ দ্বিতীয়ার্ধে যদি ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে যায়, জ্বালানি তেল ও ডলারের সংকট কমে যায়, তবে বিছুটা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে৷ একটাই স্বস্তিদায়ক বিষয় হলো আমাদের অভ্যন্তরীণ কৃষি এই সময়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে৷’’

তার কথা, ‘‘প্রতি মাসে এখন রিজার্ভের এক বিলিয়নের বেশি ডলার কমে যাচ্ছে৷ এইভাবে রিজার্ভ সংকুচিত হতে থাকলে ২০-২৪ মাসে আমাদের রিজার্ভ তলানিতে চলে যাবে৷ তাই ডলার ও রিজার্ভ সংকট অনেক বড় আকারে দেখা দিচ্ছে৷ জরিপটি করা হয় গত বছরের প্রথম দিকে৷ যদি এই বছর করা হতো, তাহলে হয়ত এই সংকটটিই এক নাম্বার সংকট হিসবে আসতো৷ এই ডলার সংকট পিছিয়ে দিতে আমাদের বিদেশি ঋণ প্রয়োজন৷ সেটার ব্যবস্থা করতে হবে৷ এখানো বৈদেশি ঋণ-পরিস্থিতি ভালো আছে৷ আরো ঋণ নিয়ে তার ব্যবস্থাপনা ভালো করলে সংকট কাটাতে সহায়তা করবে৷’’

মূল্যস্ফীতি, ডলার ক্রাইসিস এগুলোর জন্য ব্যাংক রেট বাড়ানো দরকার ছিল: ড. আহসান এইচ মনসুর

তিনি বলেন, ‘‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের ওপর ভূ-রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে৷ খাদ্য, জ্বালানি তেল নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ হচ্ছে৷ তেমনি ইউক্রেন ইস্যুতে রাজনৈতিক অবস্থানের চাপও বাড়ছে৷ বাংলাদেশ এখনো মধ্যবর্তী অবস্থানে আছে৷’’

সংকট মোকাবেলার পরিকল্পনা

পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক, অর্থনীতিবিদ ড.আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব অর্থনীতিই ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ ঝুঁকি থাকবে, কিন্তু ঝুঁকি মোকাবেলার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নই আসল কথা৷ ভারত যত সক্ষমতার সঙ্গে এটা করছে, আমরা তা পারছি না৷ আমরা চেষ্টাও করিনি৷ মূল্যস্ফীতি, ডলার ক্রাইসিস- এগুলোর জন্য ব্যাংকরেট বাড়ানো দরকার ছিল৷ মূদ্রানীতিকে আমরা ব্যবহার করিনি৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘ঋণ সংকটটা মধ্য মেয়াদী৷ তবে ঋণ নিয়ে তা ঠিকমতো ব্যবহার করলে সংকট হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু এখনো অনেক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, যা এখন নেয়া ঠিক না৷ হওড়ে এত টাকা খরচ করে উড়াল সেতু এখন আমাদের জন্য উচ্চাভিলাষী৷ আর ক্লাইমেট নিয়ে কথা হয়, কিন্তু কাজ হয় না৷’’

‘‘তবে যেটা ওরা (ডাব্লিউইএফ) যেটা বলেনি, সেটা হলো, ডলার সংকট, ব্যাংকে তারল্য সংকট, রিজার্ভের সংকট৷ ওরা গত বছরের যে সময়ে জরিপ করে, তখন এই সংকট সামনে আসেনি৷ এখন জরিপ করলে এই সংকট এক নাম্বারে চলে আসতো,’’ অভিমত এই অর্থনীতিবিদের৷