1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবন, নাকি অন্তর্জলি যাত্রা?

জনি হক ঢাকা
১৯ মে ২০২৩

বাংলাদেশে সাফটা চুক্তির নীতিমালায় আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দি সিনেমা আমদানি শুরু হয়েছে৷ শর্তসাপেক্ষে আগামী দুই বছরে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮টি উপমহাদেশীয় সিনেমা আসবে৷

https://p.dw.com/p/4RZ4I
ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলে ‘পাঠান’ এর প্রচার৷
ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলে ‘পাঠান’ এর প্রচার৷ছবি: Johny Hoque

সিনেমা হল মালিকরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে এর মাধ্যমে বাংলাদেশি সিনেমার কফিনে শেষ পেরেকটা ঠোকা হয়ে গেল কিনা এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সিনেপাড়ায়৷

তথ্য মন্ত্রণালয় হিন্দি সিনেমা আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার পর বাংলাদেশে প্রথমে এসেছে ‘বলিউড বাদশা' শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান'৷ যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত সিনেমাটি হাজার কোটি ছাড়ানো ব্যবসা করেছে৷ এরপর অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে৷ সেজন্য সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তির প্রথম দুই দিন ছাড়া আশানুরূপ দর্শক পায়নি৷ তবে ভবিষ্যতে কোনো হিন্দি ছবি বলিউডের সঙ্গে একই দিনে মুক্তি পেলে সুফল আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ৷ একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (মিডিয়া ও বিপণন) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ৷

প্রদর্শক সমিতির নেতারা বলছেন, শুধুই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দিয়ে সিনেমা হল সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সিনেমার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে৷ এর পরিণতিতে সিনেমা হলের সংখ্যাও কমেছে৷ সিনেমা হল মালিকদের মতে, জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে এখন বছরে চার-পাঁচটি মানসম্পন্ন সিনেমার দেখাও মেলে না৷ হিট কিংবা গড়পড়তা চলার মতো সিনেমার সংখ্যা বছরে ৩০-৪০টি না হলে সিনেমা হল টিকে থাকার কথাও নয়৷ এমন পরিস্থিতিতে সত্যিকার অর্থেই তারা অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছেন৷ তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা দিতে পারছে না ঢালিউড৷ সেজন্য সিনেমা হল মালিকরা জনপ্রিয় সিনেমা প্রত্যাশা করেন, যেগুলো দেখতে দর্শকরা ভিড় জমাবে৷ সেই বাস্তবতা মেনে হিন্দি সিনেমা আমদানির সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে সরকার৷

আনন্দ সিনেমা হল৷
আনন্দ সিনেমা হলের বাইরে ‘পাঠান’ এর প্রচারছবি: Johny Hoque

প্রশ্ন হলো, এমন সিদ্ধান্তের পরে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির টিকে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু দেখা যাচ্ছে? সংশ্লিষ্টদের বিশ্লেষণে বোঝা গেছে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ৷

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এখন টেনেটুনে প্রায় অর্ধশত সিনেমা হল সারাবছর চালু থাকে৷ এছাড়া দুই ঈদে আরো ১০০ সিনেমা হলের দরজা খোলে৷ অর্থাৎ, এখন মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ২০০ বলারও সুযোগ নেই৷এ অবস্থায় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের বড় একটা অংশই মনে করছেন, সিনেমা হল মালিকদের ব্যবসা দিতে না পারলে সংখ্যাটা আরো কমবে৷ যিনি পুঁজি বিনিয়োগ করেন, দিনের শেষে তিনি লাভ খুঁজবেনই৷ সুতরাং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখতে গেলে সিনেমা হল মালিকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে৷ তাদেরও তো ঘর চালানো প্রয়োজন, সেজন্য লাভজনক ব্যবসা হতে হবে৷

বাংলাদেশে মুম্বাইয়ের তুলনায় অনেক স্বল্প বাজেটের সিনেমাগুলো সবসময় মানসম্পন্ন হয় না৷ ভারতের একটি সিনেমার তুলনায় ঢাকাই সিনেমার বাজেট অনেক ক্ষেত্রে ১০০ ভাগের এক ভাগেরও কম৷ অনেক ক্ষেত্রে বলিউডে একেকটি সিনেমা তৈরিতে খরচ হয় ১০০ কোটি রুপি৷ ১ কোটি তো বলিউডের অনেক তারকারই পারিশ্রমিক৷ বাংলাদেশে ১-২ কোটি টাকায় পুরো সিনেমা বানানো হয়৷ তাই বিশাল বাজেট, উন্নত প্রযুক্তি, হেভিওয়েট তারকাসমৃদ্ধ বলিউডের হিন্দি ছবি এসে ঢালিউকে গ্রাস করে ফেলবে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না অনেকেই৷

বাংলাদেশে একটি ফিল্ম কমিশন খুব দরকার : খিজির হায়াত খান

চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিনেমা হল মালিকদের বাঁচাতে হিন্দি ছবি আনবো ভালো কথা, কিন্তু এ কারণে আমরা কী হারাবো সেই হিসাব কি কেউ করেছি? ‘পাঠান’ এসেছে, এরপর আসবে ‘কিসি কি ভাই কিসি কা জান' ও ‘টাইগার থ্রি'৷ এসব ২০০ কোটি রুপি বাজেটের ছবির সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করবো কী দিয়ে? এক কোটি টাকার ছবি দিয়ে? বিএমডাব্লিউর সঙ্গে তো সিএনজি পেরে উঠবে না৷ হিন্দি ছবি আসায় অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে৷ এজন্য আমরা প্রস্তুত নই৷ আমাদের আগে প্রস্তুত করা হোক৷ শুধু হিন্দি না; কোরিয়ান, মালায়লামসহ সব অঞ্চলের সব ভাষার ছবি আসুক, তাতে অসুবিধা নেই৷ কিন্তু আমার দেশের ছবি আগে নিরাপদ হোক৷ আমাকে তো লড়াইয়ের জায়গা দিতে হবে৷ লড়াই করার তো কোনো জায়গাই এখন নেই৷ আমাদের সংগ্রাম এ নিয়ে যে, আমাকে আমার জায়গা একটু সুরক্ষিত করতে দাও, তারপর যা খুশি তাই আমদানি করা হোক, কোনো কষ্ট থাকবে না৷’’

এমনিতে অভিযোগ শোনা যায়, তথাকথিত ‘বড় তারকা' না থাকলে মাল্টিপ্লেক্সে বাংলা সিনেমা যথাযথ সময়ে শো পায় না৷ এক্ষেত্রে সাধারণত সকালের শো দেওয়া হয় তাদের৷ এর নেপথ্যে রয়েছে হলিউড সিনেমার চাপ৷ এখন হিন্দি সিনেমাও যুক্ত হলো৷ এ কারণে বাংলা সিনেমার জন্য জায়গাটা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়– এবারের মা দিবস উপলক্ষে অরণ্য আনোয়ার পরিচালিত ও পরীমণি অভিনীত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘মা' মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ১৯ মে৷ কিন্তু বেশিরভাগ সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১২ মে বলিউডের ‘পাঠান', ১৯ মে হলিউডের ‘ফার্স্ট টেন', ২৬ মে বলিউডের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান' চালাবেন তারা৷

মধুমিতা সিনেমা হলে দর্শক৷
মধুমিতা সিনেমা হলে দর্শকছবি: Johny Hoque

আগামী ২৬ মে মুক্তির জন্য যুবরাজ শামীমের ‘আদিম' কেবল নারায়ণগঞ্জের একটি সিনেমা হল পেয়েছে৷ অথচ মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে এই ছবি৷ সম্প্রতি খন্দকার সুমন পরিচালিত ‘সাঁতাও' মাত্র তিনটি সিনেমা হল পেয়েছে৷ অথচ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে এটি দেখতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে৷ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগের সেরা সিনেমা হয়েছে এটি৷ কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে স্থান পাওয়া বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর'-ও কেবল  ১০টি সিনেমা হল পেয়েছিল৷

এ কারণেই খিজির হায়াত খানের শঙ্কা, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে, তরুণ নির্মাতারা সিনেমা বানানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন৷ কারণ, তাদের কাছে কোনো ম্যাপ থাকছে যে, ছবিটি চালাবেন কোথায়৷ আগামী দুই বছর পর সিনেমা হল মালিকরা বলে বসতে পারেন– আমি হিন্দি সিনেমা চালিয়ে ব্যবসা করার জন্য সিনেমা হল রেখেছি, এজন্য এত টাকা ঋণ নিয়েছি৷ তখন কিন্তু পুরো ব্যাপারটি তাদের পক্ষে চলে যাবে৷ এখন যদি বছরে ১০টি হিন্দি সিনেমার আশা তারা করেন, তখন সেই সংখ্যা ২০টিতে বাড়ানোর দাবি উঠতে পারে৷ তখন আমরা কোথায় যাবো? আমার ভয়– আগামী পাঁচ বছরে আমাদের সিনেমা হলভিত্তিক বাংলা চলচ্চিত্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷''

সিনেমা হলে ‘পাঠান’ দেখছে দর্শক৷
সিনেমা হলে ‘পাঠান’ দেখছে দর্শকছবি: Anonno Mamun

তবে বিদেশি ছবির কারণে সিনেমা হল পাচ্ছে না বাংলা চলচ্চিত্র, এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের সব সিনেমা হলে হিন্দি ছবি চালানোর সুযোগ নেই, কারণ, সবার কাছে সেই সার্ভার নেই৷ তারা বাংলা সিনেমাই চালাবে৷ ব্যবসা যার যার পদ্ধতিতে চলবে৷ বাংলা কন্টেন্ট যদি ভালো হয়, তাহলে অবশ্যই চলবে৷ আগামী ঈদে শুধুই বাংলা সিনেমা চালাবো আমরা৷ গত ঈদের সিনেমা ভালো চলেছে৷ আরো ভালো চলতো যদি প্রচারণা ভালো হতো৷ কারণ, সিনেমার প্রচারেই প্রসার৷''

‘পাঠান' বাংলাদেশে আমদানি করেছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট৷ হিন্দি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী অনন্য মামুনের যুক্তি, ‘‘সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ভালো কনটেন্ট বানাতে ও বড় কিছু করতে হলে ভালো সিনেমা দরকার৷ হিন্দি সিনেমা সেই অভাব পূর্ণ করতে পারে৷ টাকায় টাকা আনে বলে একটা কথা আছে৷ সিনেমা হলে যখন টাকা উঠে আসবে, তখন এই খাতে ঠিকই বিনিয়োগ বাড়বে৷ হিন্দি সিনেমা সেই পথ খুলে দিতে পারে৷ সরকার কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছরের জন্য উপমহাদেশের সিনেমা আমদানির অনুমোদন দিয়েছেন৷ দুই বছর পরে কী হবে আমরা এখন বলতে পারছি না৷ দুই বছর চলার পর বোঝা যাবে, হিন্দি সিনেমা আমদানি করাটা সিনেমা হলের জন্য কতটা উপকারে আসতে পেরেছে৷''

হিন্দি ছবিতে সিনেমা হল মালিকের পেট ভরবে, লাভ হবে না: দেলোয়ার জাহান ঝন্টু

অনেকে বলছেন, হিন্দি সিনেমার কারণে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অনিষ্ট হবে- এই যুক্তিতে ‘ভিনদেশি সংস্কৃতি' আমদানির বিরোধিতা করছেন প্রবীণ চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে ভিন্ন সংস্কৃতি আসা উচিত না৷ এগুলো আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না৷ হিন্দি সিনেমা আসায় সিনেমা হল মালিকের পেট ভরতে পারে, তাছাড়া কোনো লাভ হবে না৷ সিনেমা হল বাঁচবে না, আমাদের চলচ্চিত্রও ধ্বংস হবে৷''

অভিনেতা-প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজলের বিশ্বাস, ‘‘এদেশে হিন্দি চলবে না৷ আমাদের দেশ বাংলাদেশ, বাংলা ভাষাই চলবে৷''

তবে পরিচালক-পরিবেশক অনন্য মামুন বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে প্রতিটি হিন্দি টিভি চ্যানেল চালু আছে৷ প্রত্যেকের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন, সবাই সবকিছু দেখছে৷ হিন্দি ছবি সিনেমা হলে না চালালেও দেখার সুযোগ অনেক৷ সুতরাং আমাদের টিকে থাকতে হলে সার্বিকভাবে ভালো কনটেন্ট বানাতে হবে৷ সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক করতে হবে৷''

বাংলাদেশের কোনও জেলায় আরাম করে দেখার মতো সিনেমা হল নাই: জায়েদ খান

সিঙ্গেল স্ক্রিনে দর্শক খরার পেছনে সিনেমা হল মালিকদের দুষছেন অনেকে৷ চিত্রনায়ক জায়েদ খানের মন্তব্য, ‘‘সিঙ্গেল স্ক্রিনের দর্শক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোকে সরকার প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে৷ কিন্তু সিনেমা হল মালিকরা নিচ্ছেন না৷ কেউই সিনেমা হল সংস্কার করছে না৷ বাংলাদেশের যেকোনো জেলায় আরাম করে দেখার মতো সিনেমা হল পাওয়া কঠিন৷ কোথাও কোথাও গোডাউনের মধ্যে টিনের চালা দিয়ে সিনেমা হল বানিয়ে রাখা হয়েছে৷ সেখানে দর্শক আশা করা বোকামি৷ ভাঙাচোরা সিনেমা হলে কে ছবি দেখতে যাবে? সিনেমা হলে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ চান দর্শক৷ কনটেন্ট তো পরে৷ আপনার দোকানই যদি ঠিক না থাকে মালামাল রাখবেন কোথায়? সিনেমা হলের পরিবেশ থেকে শুরু করে বসার আসনসহ সবকিছু ভালো হওয়া চাই৷ মোদ্দা কথা, নিজেদের সংস্কৃতি দিয়েই সিনেমা হল বাঁচাতে হবে৷’’

সিনেমা হল কমে যাওয়ার পাশাপাশি আরেকটি সংকটও রয়েছে৷ যেকোনো সিনেমা মুক্তি পেলে প্রযোজক টিকিটপ্রতি তিন ভাগের এক ভাগ পেয়ে থাকেন৷ বাকিটা নিয়ে যান সিনেমা হল মালিকরা৷ তাই বক্স অফিস প্রথা চালু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ তাদের মতে, ই-টিকিট চালুর মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন৷

স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘পাঠান’ প্রদর্শিত হচ্ছে৷ ছবিটি ১২ মে তোলা৷
স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘পাঠান’ প্রদর্শিত হচ্ছে৷ ছবিটি ১২ মে তোলা৷ছবি: Anonno Mamun

খিজির হায়াত খানের মন্তব্য, ‘‘আমাদের বাংলা সিনেমা বাঁচবে কী করে? আমাদের যথাযথ পরিবেশনা ব্যবস্থাপনা নেই৷ আমাদের কোনো সেন্ট্রাল সার্ভার নেই৷ আমাদের কোনো ই-টিকেটিং নেই৷ আমাদের বর্তমান পরিবেশনা ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ধসে গেছে৷ আমি ২৭টি সিনেমা হলে ‘ওরা ৭ জন' ছবিটি মুক্তি দিয়েছি৷ সেই রিপোর্ট আমার কাছে এসেছে একটি চিরকুটে! আমার পরিবেশক কলম দিয়ে সেটি লিখে দিয়েছেন৷ কিছু বলার নেই আমার৷ আমার কাছে কোনো এক্সেল ফাইল, কোনো নম্বর, কিছুই নেই৷ তিনি আমাকে যা বলছেন, তাই মেনে নিতে হচ্ছে৷ বুকিং এজেন্ট যা বলছেন সেটাই আমাকে মানতে হবে৷ বুকিং এজেন্টকে সিনেমা হল মালিক যা বলবেন তাই মেনে নিতে হবে৷ সম্পূর্ণ সিস্টেম ভুয়া৷ আমরা বাংলা সিনেমাকে ইতোমধ্যে কুয়ায় ফেলে রেখেছি৷ এখন কিছু সিনেমা হল মালিকের লাভের জন্য হিন্দি সিনেমা এনে তাতে মাটিচাপা দিচ্ছি৷’’

পুরনো নিয়ম বদলানোর পক্ষে জায়েদ খানও৷ তার অভিমত, প্রযোজক বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে হবে সিনেমা হল মালিকদের৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একজন প্রযোজক সিনেমা দিচ্ছেন, শ্রম দিচ্ছেন, আবার টাকা অর্ধেকও পাচ্ছেন না৷ এখানে সমান বন্টন ব্যবস্থা থাকা জরুরি৷ বিক্রি হওয়া টিকিটের অর্ধেক টাকা প্রযোজকের পকেটে আসতে হবে৷ একটি সিনেমা মুক্তি দিলে ঠিক কতো টাকার টিকিট বিক্রি হয় প্রযোজক জানতেই পারেন না৷ তাই বাংলাদেশে বক্স অফিসের ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ই-টিকিটের স্বচ্ছতা লাগবে৷’’

অনন্য মামুন, পরিচালক-পরিবেশক
অনন্য মামুন, পরিচালক-পরিবেশক ছবি: privat

অনন্য মামুন ডয়চে ভেলেকে আশার কথা শোনালেন, ‘‘আমরা বক্স অফিস ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ই-টিকেটিং চালু করছি৷ সত্যি বলতে, দোকানে বেচাকেনা না থাকলে ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন দিয়ে কী করবেন? এ কারণে আমরা যখনই ই-টিকেটিং চালু করতে চেয়েছি, কোনো সিনেমা হল মালিক রাজি হননি৷ তবে তারা এর বিপক্ষে নন৷ অনেক সিনেমা হল মালিক সারাবছর ভাড়া দেন, কিন্তু কন্টেন্ট পান না৷ ই-টিকেটিং ব্যবস্থাপনায় প্রযোজক ও সিনেমা হল মালিক উভয়ই দেখতে পারবেন কতটি টিকিট বিক্রি হচ্ছে৷ তখন পুরো চিত্রটা পরিষ্কার দেখতে পেয়ে প্রযোজক শান্তি পাবেন৷''

তবুও তলায় বিশাল ফুটো নিয়ে ডুবতে থাকা ঢালিউডের জাহাজ কি রক্ষা করা যাবে আদৌ? সেক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন মনে করেন অনেকে৷ সেটা কেমন হতে পারে? খিজির হায়াত খানের পরামর্শ, ‘‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটি ফিল্ম কমিশন সবচেয়ে বেশি দরকার৷ যেখানে থাকবেন বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়া, ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করা, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে চিন্তার জায়গায় অনেকদিন ধরে থাকা এমন কিছু ব্যক্তি, যারা বাংলাদেশের ফিল্মকে ভবিষ্যতে একটা মজবুত জায়গায় দেখতে চান এবং এসব নিয়ে যথাযথভাবে ভাবেন৷ কমিশন থেকে আমাদের নির্মাতাদের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে তারপর একটি সমাধানে পৌঁছানো প্রয়োজন৷''