1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতায় ঘাটতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ নভেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক হিসেবে ১৩ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ আক্রান্তদের ৫০ শতাংশের বেশির কোনো লক্ষণ থাকে না৷ তাই অনেকে সচেতন নন৷

https://p.dw.com/p/42yt7
নিয়মিত হাঁটা ডায়াবেটিস রোধে সহায়ক (ফাইল ফটো)ছবি: Imago/ZUMA Press

গাজী আহমেদ উল্লাহ একজন বেসরকারি চাকুরিজীবী৷ বয়স চল্লিশ বছরের মতো৷ আট-নয় বছর আগে তার প্রথম ডায়াবেটিস ধরা পড়ে৷ এরপর তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই খাবার গ্রহণ করতেন, নিয়মিত হাঁটতেন৷ কিন্তু করোনার সময় তিনি নিয়মিত হাঁটা বন্ধ করে দেন৷ খাবারেও কিছুটা অনিয়ম করেন৷ ফলে সম্প্রতি তার ডায়াবেটিসের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়৷ এরপর তিনি আবার শৃঙ্খলায় ফিরে আসেন৷ এখন তিনি ভালো আছেন৷ 

‘‘তারা পরীক্ষাও করাননি’’

তিনি বলেন, ‘‘এখানে ডায়াবেটিস রোগীদের বড় একটি অংশ নিয়ম-শৃঙ্খলা মানতে চায় না৷ তারা ভুলেই যান যে তারা ডায়বেটিস রোগী৷ আমি এমন ডায়বেটিস রোগীকেও দেখেছি যারা প্রতিদিন দুধ চিনি দিয়ে কাপের পর কাপ চা খান৷ খাবারদাবারে কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখেন না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং ইনস্যুলিনের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে থাকলে গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য তা দামীই মনে হবে৷''

নাজমুল হক তপনের বয়স ৫১ বছর৷ ১৩ বছর আগে তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে৷ তিনি শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁটা এবং  খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলেন৷ এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ৷

তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস ক্যান্সার নয়৷ ডায়াবেটিস হলেই অনেকে ভয় পেয়ে যান৷ আসলে শৃঙ্খলাই ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখে৷'' 

সরকারের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শতকরা ১৩ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত৷ এর মধ্যে ৬২ শতাংশই রোগটি নিয়ে সচেতন নন৷ আর মাত্র ৩৫ শতাংশ নিয়মিত চিকিৎসা নেন৷ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে আবার উচ্চশিক্ষিত বেশি৷ 

চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব৷ তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রক্তচাপ ও লিপিড নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, স্থূলতা কমাতে হবে,  ছাড়তে হবে ধূমপান৷

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সোসাইটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাফি পারভেজ বলেন, ‘‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে হৃদরোগ, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, মুখের ও দাঁতের নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে৷ চোখ ক্ষতিগ্রন্ত হতে পারে৷ পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে৷ কিন্তু সচেতনতা ও সুশৃঙ্খল জীবন ডায়াবেটিস রোগীকে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন দিতে পারে৷''

তবে তিনি বড় একটি আশঙ্কার কথাও জানান৷ পারভেজ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়েই কাজ হচ্ছে৷ কিন্তু এখানে এখন শিশুরাও ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হচ্ছে৷ যেকোনো বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারে৷ বাংলাদেশে তারা আক্রান্তের হিসেবের বাইরে থেকে যাচ্ছে৷ তবে এটা নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন প্রতি দুইজন ডায়বেটিস রোগীদের মধ্যে একজনের ওষুধ কেনার ক্ষমতা নেই৷ বিশ্বে চারজনের মধ্যে তিনজন ডায়াবেটিস রোগী বিশ্বের মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশে বসবাস করছেন৷ আমাদের দেশের অবস্থাও সেরকম৷

এভাবে চলতে থাকলে ২০৫৪ সাল নাগাদ বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হবে ৭০ কোটি৷ তখন বাংলাদেশে প্রতি দশজনে দুই থেকে তিনজন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘‘২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশের ৫৬  ভাগেরও বেশি ডায়বেটিসের রোগী মনে করেন তাদের ডায়াবেটিস নেই৷ তারা পরীক্ষাও করাননি৷  এই বছরের এপ্রিলে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ জনের মধ্যে ৬২ জন ডায়াবেটিসের রোগী অশনাক্তকৃত৷ ফলে এখন যে দেশের ১৩ ভাগ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলা হচ্ছে তা তাদের চিকিৎসা নেয়ার ভিত্তিতে৷ কিন্তু অশনাক্তকৃত ধরা হলে তা মোট জনসংখ্যার ২৫ ভাগ হবে৷'' 

‘‘চোখ ক্ষতিগ্রন্ত হতে পারে’’

এবার বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ডায়াবেটিস সেবা নিতে আর দেরি নয়'৷ এই চিকিৎসকরা বলছেন, প্রয়োজন দ্রুত ডায়াবেটিস শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা নেয়া৷ নিরাপদ খাদ্য এবং সুশৃঙ্খল জীবন ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করবে

তারা মনে করেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ওষুধ এবং ইনস্যুলিনের দাম তেমন বেশি মনে না হলেও বাস্তবে এটা একটা বোঝা৷ কারণ এই ওষুধ একদিন বা সপ্তাহ নয়, সারা জীবনের জন্য গ্রহণ করতে হয়৷ আর এর পরিমান বাড়তে থাকে৷ ফলে এটা আসলেই অনেক খরচের ব্যাপার৷

ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘‘তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিসের ওষুধের দাম কমানোর দাবি উঠছে৷ তাহলে বাংলাদেশের কথা একবার ভাবুন৷''

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা ২০৪৫ সালে দেড় কোটিতে দাঁড়াবে৷ তাই এখনই সচেতন হওয়া দরকার৷