1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশি শিশুদের সহায়তায় ইউটিউব প্রজন্ম

৭ মার্চ ২০১১

প্রকল্পের নাম আনকালচারড৷ এই শব্দটা শুনলেই কেমন যেন অভব্য, অসংস্কৃত কিছু মনে হয়৷ বাস্তবে বিষয়টি মোটেই সেরকম নয়৷ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান তরুণ শাওন আহমেদ গড়েছেন এক প্রকল্প৷ নাম আনকালচারড প্রজেক্ট৷

https://p.dw.com/p/10US5
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডার নাগরিক শাওন আহমেদছবি: cc-uncultured-nc-sa 3.0

এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের নানা প্রান্তের স্কুল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেন শাওন৷ তবে তাঁর বক্তব্য, এটি কোন দাতব্য সংস্থা, সংগঠন কিংবা আনুষ্ঠানিক কোন প্রকল্প নয়৷ এটা একান্তই এক ব্যক্তিগত চেষ্টা, যা দিয়ে অন্যদের উৎসাহিত করা যায় যে, আমরা মানে বর্তমান প্রজন্ম চাইলে চরম দারিদ্র দূর করতে পারি৷

শিশুদের ভিডিও

শাওন এর এই প্রকল্প সম্পর্কে প্রখ্যাত লেখন জন গ্রিন এর মন্তব্য, ‘‘নটরডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থাতেই একদিন শাওন চিন্তা করলো, বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিক নিয়ে কিছু একটা করা দরকার৷ এজন্য সে বাংলাদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ সে ভিডিও'র মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে৷''

শাওন ইন্টারনেটে ভিডিও আকারে শিশুদের সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ এসব ভিডিও দেখে সাহায্যে এগিয়ে আসে ইন্টারনেট প্রজন্ম৷ সাহায্য মিললে তিনি শিশুদেরকে স্কুল ঘর গড়ে দেন, কিংবা তাদের জন্য কেনেন খেলার সামগ্রী৷

Screenshot der Seite uncultured.com Flash-Galerie
শাওনের এই ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের কথাছবি: uncultured.com

ইউটিউব চ্যানেল

ইন্টারনেট প্রজন্মের এই উদ্যোগ বেশ সাড়া জাগিয়েছে ইউটিউবে৷ বর্তমানে শাওনের ইউটিউব চ্যানেলের গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় নব্বই হাজার৷ কিছুদিন আগে ভিডিওকন সম্মেলনে শাওন বলেন, ‘‘ভালো কিছু করার জন্য ইউটিউব এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷ এখানে আমাদের ভিডিওগুলো হয়তো বাণিজ্যিক ভিডিও'র মতো বিশেষ সুবিধা পায়না৷ তারপরও এই মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা গরিব, গৃহহীন, এমনকি ক্যান্সার রোগীদের সহায়তায় সক্ষম হচ্ছি৷ মোদ্দাকথা ইন্টারনেটে সচেতনতা তৈরিতে আমরা বেশ এগিয়ে আছি৷''

ডাভোসে শাওন

সম্প্রতি ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা পুরস্কারটি জিতে নেন শাওন৷ ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এক স্কুলের গল্প তুলে ধরে এই পুরস্কার পান তিনি৷

এই তরুণের বক্তব্য, ‘‘বৈশ্বিক দারিদ্র্য নিয়ে আমার সবসময়ই আগ্রহ ছিল৷ আমার বাবা-মা বাংলাদেশ থেকে এসেছে৷ ড. জেফরি স্যাক্স'এর বই দ্য এন্ড অফ পভার্টি আমাকে নাড়া দিয়েছে৷ বইতে তিনি বলেছেন, আমরা মানে এই প্রজন্ম আমাদের জীবদ্দশাতেই দারিদ্র্য দূর করতে পারি৷ এজন্য একেবারে মৌলিক পরিবর্তনের দরকার নেই৷ এজন্য আমাদেরকে মাদার টেরেসার মতোও হতে হবে না৷ এই বার্তাটাকেই আমি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি৷ এভাবে আমি বুঝতে পারি, ইউটিউব দারিদ্র্যদূরীকরণে নানাভাবে সহায়ক হতে পারে৷''

স্কুল গড়া

সাইক্লোন সিডর নিয়ে শাওনের ভিডিওগুলো যেকোন সচেতন মানুষকেই নাড়া দিতে সক্ষম৷ ২০০৭ সালে সিডর বিধ্বস্ত এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে শাওন ভিডিও করেছিলেন নানা করুণ দৃশ্যের৷ সেসময় সিডর বিধ্বস্ত একটি স্কুলের ভিডিও চিত্র ইউটিউবে সাড়া ফেলে দেয়৷ সেই স্কুলটিকে নতুন করে গড়তে এগিয়ে আসে ইন্টারনেট প্রজন্ম৷ তৈরি হয় স্কুল, শিক্ষার্থীরা আবার ফিরে আসে পড়াশোনায়৷ এভাবেই শিকড়ের সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছেন শাওন৷

ফেসবুক-টুইটারে আনকালচারড

শাওনের এই চেষ্টা কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক-টুইটারেও৷ টুইটারে তাঁর ‘আনকালচারড' প্রকল্পের ভক্তের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ৷ প্রতিমুহূর্তেই শাওন তাঁর ভাবনাচিন্তা তুলে দিচ্ছেন টুইটারে৷ এই তরুণ জানান, শুরুতে তিনি নিজেই ২০-৪০ ডলার করে দিয়ে শিশুদের সহায়তার চেষ্টা করতেন৷ কিন্তু একসময় ইউটিউবে তাঁর ভিডিওগুলো দেখে অন্যরাও সাহায্য করতে এগিয়ে আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, আমি কাউকে সাহায্যের জন্য বলিনি৷ যখনই কোন ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়, তখন ইন্টারনেট প্রজন্ম নিজে থেকেই ডোনেশন বোতামটি খুঁজে নেয়৷ এবং সাহায্য করে৷ সত্যিকার অর্থে আমাদের কোন ভিডিওতে সরাসরি সহায়তা চাওয়া হয়নি৷''

শাওনের এই প্রকল্পটি এবছর ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতায় জমা পড়েছে৷ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, যে কেউ তাঁর পছন্দের ব্লগ এই প্রতিযোগিতার জন্য জমা দিতে পারে৷

যাইহোক, ২৯ বছর বয়স্ক শাওন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে একবার ঢু মারুন তাঁর ব্লগসাইটে৷ ঠিকানা: আনকালচারড ডটকম৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম