1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মতো ফেরা ইংল্যান্ডের

সামীউর রহমান ঢাকা
১০ অক্টোবর ২০২৩

বাংলাদেশকে ১৩৭ রানে হারিয়ে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের ৯ উইকেটে করা ৩৬৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ২২৭ রানে।

https://p.dw.com/p/4XM8V
জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যাওয়ার আনন্দে ইংলিশ খেলোয়াড়দের উল্লাস
জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যাওয়ার আনন্দে ইংলিশ খেলোয়াড়দের উল্লাসছবি: Arun Sankar/AFP/Getty Images

বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জেতেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকেই টস জিতে নিলেন ফিল্ডিং। দুই দলই নেমেছিল একাদশে একটি করে পরিবর্তন নিয়ে। বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর বদলে শেখ মেহেদি হাসান আর ইংল্যান্ড মঈন আলীকে বসিয়ে খেলিয়েছে রিস টপলিকে। দুই দলেরই পরিবর্তনটা কাজে দিয়েছে। শুধু পার্থক্য বাংলাদেশের শেখ মেহেদি উইকেট পেয়েছেন ইংল্যান্ডের ইনিংসের শেষ দিকে,অনেকগুলো রান দিয়ে ফেলার পর। অন্যদিকে টপলি আঘাত হেনেছেন শুরুতেই। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া শিকার, এরপর আর নিয়মিতই উইকেট তুলে নিয়েছেন ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘদেহী এই বামহাতি পেসার। প্রাকৃতিক কোণ আর উঁচু রিলিজ পয়েন্টের সঙ্গে উইকেটের বাউন্স কাজে লাগিয়েছেন,তাতে বিভ্রান্ত হয়েছেন তানজিদ তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত আর সাকিব আল হাসান। টপ অর্ডারে তিন বাঁহাতি টপলির বলে আউট হয়েছেন ০, ১ এবং ০ রানে। ৩৬৫ রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারেই বাংলাদেশ ২৬-৩। খেলার ফল সংক্রান্ত যাবতীয় রোমাঞ্চের সেখানেই ইতি এবং হারের ব্যবধান কমানোর অপেক্ষা শুরু।

আহত সিংহ থাবা বসাবে, জানাই ছিল। বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী, সাদা বলে দুটো বৈশ্বিক ট্রফিই যাদের কাছে সেই ইংল্যান্ড হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর ধরমশালায় দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে, সেটা আঁচ করতে জ্যোতিষী হতে হয় না। হয়েছেও তাই। আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে মালান আর বেয়ারস্টো সেভাবেই ব্যাট করেছেন, যেভাবে ইংল্যান্ড ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হারের পর থেকে ব্যাট করছে।প্রথম পাওয়ার প্লে-তে ৬১ রান, বিনা উইকেটে। ১৮ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটিতে উঠেছে ১১৫ রান। আগের ম্যাচের মত এবারও ব্রেক থ্রু দিলেন সাকিবই। সোজা বলে টার্ন হবে মনে করে খেলতে গিয়ে বোল্ড বেয়ারস্টো। ওয়ানডাউনে এলেন জো রুট। স্পিনটা ভাল খেলেন, মাঝের ওভারগুলো তিনিই সামাল দিলেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মালানকে নিয়ে গড়লেন ১৫১ রানের জুটি, স্রেফ ১১৭ বলে। মালানকে বোল্ড করে শেখ মেহেদি সেই জুটিটা যখন ভাংলেন, তখন মালানের কাজ সারা। ১০৭ বলে ১৪০ রানের ইনিংস খেলে গেছেন মালান, ১৬ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায়।

এ ম্যাচে বাংলাদেশের বড় সান্ত্বনা লিটন দাসের রানের ধারায় ফেরা
এ ম্যাচে বাংলাদেশের বড় সান্ত্বনা লিটন দাসের রানের ধারায় ফেরাছবি: Ashwini Bhatia/AP/picture alliance

৩০ থেকে ৪০, এই ১০ ওভারে ১ উইকেট ১৮৭/১ থেকে ইংল্যান্ড পৌঁছে যায় ৩ উইকেটে ২৯৮ রানে। অর্থাৎ ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১১ রান যোগ করে ইংল্যান্ড। দলীয় সংগ্রহটা চারশ ছাড়িয়ে যাবে কি না এই নিয়ে যখন ধারাভাষ্যকারেরা আলাপ করছেন, তখন শেষ ১০ ওভারে বোলিংয়ে ভালভাবেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ৬৬ রান, হারায় ৬ উইকেট।

মালানের বিদায়ে উইকেট পতনের ধারাটা শুরু হয়, রানের গতিও কমে। ১০ বলে ২০ রান করে জস বাটলার বোল্ড শরিফুল ইসলামের বলে। এই বামহাতি পেসার পরপর দুই বলে বিদায় করেছেন রুট (৮২) এবং লিয়াম লিভিংস্টোন (০)কেও। উইকেটে জমতে পারেননি হ্যারি ব্রকও। তিনিও ২০ রান করে মেহেদির শিকার। বলা যায় শেষ ১০ ওভারে বেশ ভালভাবেই ম্যাচে ফেরেন বাংলাদেশের বোলাররা। উইকেট নিয়েছেন নিয়মিত বিরতিতে। তাতে ইংল্যান্ডের সংগ্রহটা বড় থেকে আর বিশাল হয়নি! যদিও টেলএন্ডারদের খুচরো ইনিংসগুলোর যোগফল কম নয়! স্যাম কারান আর আদিল রশিদের ১১ করে রান, ক্রিস ওকসের ১৪ আর মার্ক উডের ৬*; সব মিলিয়ে ৫০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩৬৪ রান।

বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে মুশফিকুরের ফিফটি
বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে মুশফিকুরের ফিফটিছবি: Ashwini Bhatia/AP/picture alliance

নতুন বলে শুরু করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান আর তাসকিন আহমেদ। দুজনের কেউই ছিলেন না ছন্দে। রান দিয়েছেন বেশ। সাকিব শুরুতে আর শেষ ওভারে তাসকিন পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।পুরানো বলে সফল হয়েছেন শরিফুল। শেষ করেছেন ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। মালানকে আউট করার আগে ৪ ওভারে কোন উইকেট না নিয়ে ৩২ রান দিয়েছিলেন শেখ মেহেদি, ইনিংস শেষে ৮ ওভারে ৭১ রানে ৪ উইকেট মেহেদির। অন্যদিকে টপলি ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৪ উইকেট, ৩৫তম ওভারের ভেতরেই টপলির ১০ ওভার শেষ করিয়ে দিয়েছেন জস বাটলার। ততক্ষণে সবচেয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ সমর্থকটিও খুব সম্ভবত পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দেখতে মনোযোগী হয়ে গেছেন!

৫০ ওভারে ৩৬৫ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের। দূর থেকে হয়তো হিমালয়ের মতই দুর্গম। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ৩২১, ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই দুর্গম লক্ষ্যের দিকে অভিযানে শুরুটা আশাজাগানিয়া। ক্রিস ওকসের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ ৩ বলে টানা ৩ বাউন্ডারি মেরে শুরু লিটনের। পরের ওভারে স্ট্রাইকে তানজিদ তামিম, বোলিংয়ে টপলি।এখানেই বদলে গেল ছবিটা।

ওভারের চতুর্থ বলে লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে স্লিপে বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিলেন তানজিদ তামিম, পরের বলেই শান্ত ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিলেন লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে। পরপর দুই বলে দুজনে নেই। সাকিব এসে হ্যাটট্রিক বলটা কোনরকমে ঠেকালেন। কিন্তু বেশিক্ষণ বাঁচতে পারলেন না। নিজের তৃতীয় ওভারেই সাকিবের স্ট্যাম্প উপড়ে দিলেন টপলি। মঈন আলীর মত অলরাউন্ডারকে বসিয়ে পেসারকে খেলানোর বাজিটা জিতে নিলেন বাটলার।

ব্যবধান কমিয়ে আনার লড়াইতে সান্ত্বনার সেঞ্চুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তেই পারতেন লিটন। ২১তম ওভারে ক্রিস ওকসের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে যখন বাটলারের হাতে ক্যাচ দিলেন তখনো ম্যাচে ২৯ ওভার বাকি। লিটন আউট হলেন ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে। ৭ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটার চেয়ে প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল তার কাছে।

৫১ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলে মুশফিক আপার-কাট খেলতে গিয়ে ডিপ-স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন টপলির বলে। পঞ্চাশের পর উদযাপন না করে মুশফিক ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বড় কিছুর, কিন্তু ১৯ ওভারের খেলা বাকি থাকার পরও কিসের তাড়ায় যে ফিরে এলেন তিনিই ভাল জানেন।

দুই দলের মাঝে বড় ব্যবধান গড়ে দেয় ডেভিড মালান আর জো রুটের ব্যাটিং
দুই দলের মাঝে বড় ব্যবধান গড়ে দেয় ডেভিড মালান আর জো রুটের ব্যাটিংছবি: ARUN SANKAR/AFP

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ইনিংসটা তাওহিদ হৃদয় একটা হাফসেঞ্চুরি দিয়ে মনে রাখতে পারতেন, ৩৯ রান করে লিয়াম লিভিংস্টোনের প্রথম বলেই উইকেটের পেছনে দিলেন ক্যাচ।

দিন তিনেক আগে, দিল্লীতে দক্ষিণ আফ্রিকার অমন মারকুটে ব্যাটিংয়ে চারশ ছাড়ানো রানের পর শ্রীলঙ্কার জবাবটাও কিন্তু মন্দ ছিল না। তারাও তিনশ রান পার করেছিল। বাংলাদেশের পক্ষে ৩৬৫ রান তাড়া করে জেতাটা কঠিনই, তবে সেই প্রয়াসটারও ছিল অভাব। তিন জন ব্যাটসম্যান নিজেদের ইনিংসের শুরুটা পেলেও পরিণতি দিতে পারলেন না। স্কোরকার্ড বলবে বাংলাদেশ হেরেছে ১৩৭ রানে, স্যাম কারানের বলে তাসকিনের বোল্ড হওয়ার মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশ হার মেনে নিয়েছে আরো আগেই। অন্যদিকে ইংল্যান্ড জানান দিল তাদের অস্তিত্বের কথা, প্রমাণ করে দিল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে উদ্বোধনী ম্যাচটা ছিল স্রেফ অঘটন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর .

ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩৬৪/৯, মালান ১৪০, রুট ৮২, বেয়ারস্টো ৫২; মেহেদি ৪/৭১

বাংলাদেশ ৪৮.২ ওভারে ২২৭, লিটন ৭:৬, মুশফিক ৫১; টপলি ৪/৪৩

ফল : ইংল্যান্ড ১৩৭ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : ডাভিড মালান