1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মামলা, গ্রেপ্তারে আশা, কতিপয়ের ‘দ্রুত' জামিনে আশঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ আগস্ট ২০২৪

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী এবং পুলিশ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4jSzp
সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা
আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানও পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেনছবি: Suvra Kanti Das/abaca/picture alliance

সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের কয়েকজন আটকও হয়েছেন। এর পাশাপাশি ৩৬ মামলার আসামীসহ কারো কারো জামিনে মুক্তি, এমনকি কারাগার থেকে পালানোর ঘটনাও ঘটেছে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রুত কিছু পদক্ষেপ না নিলে সার্বিক অবস্থা ‘নতুন বোতলে পুরোনো ওয়াইনের মতো' হয়ে যেতে পারে৷

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনার আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এই আবেদন করেছেন।

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের চার মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং প্রতিমন্ত্রী এ পর্যন্ত আটক হয়েছেন। নানা সূত্রের খবর অনুযায়ী আরো অনেক সাবেক মন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরের মধ্যেই আছেন। তারাও অচিরেই আটক হবেন।

অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে হত্যাসহ আরো দুইটি অভিযোগে মামলা হয়েছে। আরো মামলা হওয়ার কথা রয়েছে। আইন উদেষ্টা অধাাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, "গণহত্যার দায়ে মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে।”

সরকারের উচিত হবে যারা এই সময়ে জামিনে মুক্ত হয়েছেন, তাদের বিষয়গুলো রিভিউ করে দেখা: মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক

রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি দুর্নীতি ও ফৌজদারী মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং অনেক বছর ধরে কারাগারে থাকা ব্যক্তিরাও মুক্তি পেতে শুরু করেছেন।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল  বুধবার সকালে সচিবালয়ে বলেছেন, "১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যার ঘটনাগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে। সাবেক সরকারের সরকারপ্রধানসহ অন্য যাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের যদি কমান্ড রেসপনসিবিলিটি থাকে, আমরা সেটা পর্যন্ত খতিয়ে দেখবো।” তিনি এর তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে হবে বলে জানান।

সাবেক পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আটক হন সরকার পতনের পর দিন। ৬ আগস্ট আটক করা হলেও তাদের এখনো আদালতে হাজির করা হয়নি। মঙ্গলবার আটক হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। পুলিশ জানিয়েছে, তারা বুড়িগঙ্গা থেকে নৌকাযোগে পালাতে গিয়ে আটক হন৷ তাদের নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী, এমপিদের হেফাজতে নেয়া সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে  সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, " ‘অবশ্যই আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, তাহলে তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইবো না যে, বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ বা হামলা হোক। তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা (নিরাপত্তা) আমরা দেখবো।''

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক বলেন, "সেনা প্রধানের কথায় এটা স্পষ্ট যে, সাবেক সরকারের অনেক এমপি , মন্ত্রী দেশ ছাড়তে পারেননি। তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে সেনাবাহিনী নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে। এখন দ্রুত আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের পুলিশের হাতে দেয়া উচিত।”

তিনি মনে করেন, "পুলিশও বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।  হয়ত সেজন্য একটু সময় লাগছে। তবে এর মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা দরকার। এই মামলা সরকারের পক্ষ থেকে যেমন করা সম্ভব, তেমনি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের মামলা করা উচিত।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, "সেনা প্রধানের বক্তব্যের পর এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, সাবেক সরকারের মন্ত্রী এমপিদের অনেকেই দেশে আছেন এবং তারা তাদের আয়ত্তের মধ্যেই আছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সালমান এফ রহমান আটকের পর বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। এখন আমরা আরো সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের গ্রেপ্তার হতে দেখবো।”

সাবেক সরকারের আরো কয়েকজন মন্ত্রী এবং এমপি আটকের গুজব আছে। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন," এই গুজবের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, অনেকেই তো নিরাপত্তার কারণে সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে আছেন।”

এদিকে ১১ আগস্ট জামিনে মুক্তি পেয়েছেন চট্টগ্রামের শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন। দীর্ঘ ২৬ বছর চার মাস পর কারামুক্ত হন তিনি। নাছিরের বিরুদ্ধে ডাবল, ট্রিপল মার্ডার, অপহরণসহ ৩৬টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ৩১ মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। দুটি মামলার সাজার মেয়াদ ভোগ করে ফেলেছেন। বাকি তিন মামলায় জামিন পেয়ে মুক্ত হন। এর মধ্যে সবশেষ ৮ আগস্ট একটি মামলায় জামিন হয়। আগেই দুটি মামলায় জামিন হয়েছিল।

আমরা আরো সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের গ্রেপ্তার হতে দেখবো: অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ

তার আগে মুক্তি পান ওয়ান ইলেভেনের সময় দুর্নীতির অভিযোগে আটক এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টির বেশি মামলা হয় তখন। ২০১৩ সালে এক মামলায় তার সাত বছরের কারাদণ্ড  হয়। এর আগে অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে, যা পরে হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের এক মামলায়ও তিনি ১০ বছরের দণ্ডে দণ্ডিত হন। সবগুলো মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন।

মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক বলেন," সরকারের পতনের পর থেকে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার আগে দেশে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছিল। আদালতও ঠিকমতো বসেনি। এর সুযোগ নিয়েছে কেউ কেউ। সরকারের এখন উচিত হবে যারা এই সময়ে জামিনে মুক্ত হয়েছেন, তাদের বিষয়গুলো রিভিউ করে দেখা। নয়তো নতুন বোতলে পুরোনো ওয়াইনের মতো হয়ে যাবে।”

আর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, "একটি গণঅভ্যুত্থানের পর একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেকে সেই সুযোগ নিয়েছে। কারাগারে হামলা করেও তো অনেকে পালিয়েছে। এখন বিষয়গুলো আইনগতভাবে দেখা উচিত।”

গণহত্যার মামলার আবেদন

এদিকে বুধবার দুপুরের পর কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বাগেরহাটের আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এই আবেদন করেন। আবেদনে ব্যক্তির পাশাপাশি দল এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

আবেদনে আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের কিছু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, ঢাকা মহানগর ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ও কিছু অসাধু র‌্যাব কর্মকর্তা, সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।