1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি চান মমতা

৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাউথ ব্লক। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাইলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

https://p.dw.com/p/4nfjv
পার্লামেন্টের বাইরে নরেন্দ্র মোদী
ভারতের পার্লামেন্ট বাংলাদেশ প্রসঙ্গছবি: Arvind Yadav/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance

বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নানা ঘটনা ঘটছে। আলোচনা হচ্ছে পার্লামেন্ট এবং বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনেও। তারই মধ্যে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে সতর্ক সাউথ ব্লক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে ডয়চে ভেলেকে জানানো হয়েছে, ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

ত্রিপুরায় গ্রেপ্তার

সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে যে হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। ওই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ডেপুটি পুলিশ সুপার পদের এক অফিসারকে ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কলকাতায় কমেছে বাংলাদেশি পর্যটক, ব্যবসায় মন্দা

বিধানসভায় মমতা

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ''বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হলে আমরা তা সহ্য করব না। প্রয়োজনে আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে পারি।'' উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসেও মমতা একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের তিনি পশ্চিমবঙ্গে জায়গা দেবেন। যা নিয়ে বিরাট বিতর্ক হয়েছিল। একজন মুখ্যমন্ত্রীর আদৌ একথা বলার এক্তিয়ার আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবারও সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র এবং বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবাধে ঢুকতে দেওয়ার সময় এসব কথা মনে ছিল না মুখ্যমন্ত্রীর?'' শমীকের অভিযোগ, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সেফ হাউসে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

এদিন অবশ্য মমতা বলেছেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত। তার কথায়, ''আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ মেনে চলব। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টে বিবৃতি দিতে হবে। তিনি না দিলে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এবিষয়ে ভারতের অবস্থান জানাতে হবে।'' মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার জাতিসংঘে এবিষয়ে আলোচনা করুক এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী বা পিস কিপিং ফোর্স পাঠানোর জন্য আবেদন জানাক।

মুখ্যমন্ত্রী যখন বিধানসভায় একথা বলছেন, তখন পেট্রাপোল সীমান্তে একটি প্রতিবাদসভায় যোগ দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ওই সভায় সরব হন শুভেন্দু। আবারও সীমান্তের কাছে এই ধরনের প্রতিবাদসভা আয়োজনের হুমকি দিয়েছেন তিনি। শুভেন্দু বলেছেন, ''ভুলে গেলে চলবে না, ভারত একটি বড় শক্তি। প্রয়োজনে আরো কঠিন পদক্ষেপ নিতেও ভারত পিছুপা হবে না।''

আদানি প্রসঙ্গ

চলতি পরিস্থিতির মধ্যেই সংবাদসংস্থা রয়টার্স একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, গৌতম আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা বলেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি হয়েছিল আদানি গোষ্ঠীর। সেই বিদ্যুৎ কেনা এবার প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা বলেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আদানিকে বকেয়াও মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই বিদ্যুৎ বিতর্কও সার্বিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।

সাউথ ব্লকের অবস্থান

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে উত্তেজনা তৈরি হলেও গোটা পরিস্থিতি নিয়ে এখনো অত্যন্ত সতর্ক সাউথ ব্লক বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সামগ্রিকভাবে পুরো বিষয়টির দিকে ভারত নজর রাখছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। বাংলাদেশ সরকার এবিষয়ে কী অবস্থান নিচ্ছে, ভারত সেদিকে নজর রাখছে। সাউথ ব্লকের ধারণা, বাংলাদেশ পুরো বিষয়টিকেই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করছে। সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ কেবল রাজনৈতিক চোখে দেখলে চরমপন্থিদের আরো উৎসাহ দেওয়া হয় বলেই ভারত মনে করে। তবে সরকারিভাবে ভারত এখনই এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায় না। আপাতত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখাই ভারতের অবস্থান বলে জানিয়েছেন ওই অফিসার।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথা বলতে চাননি ওই অফিসার। তবে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারত এখনই কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।

বিজেপি নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য হুমকি দিয়েছেন যে, ''প্রয়োজন হলে ভারত বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেবে।'' বস্তুত, আসামের করিমগঞ্জে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও এমনই একটি বিবৃতি দিয়েছে সোমবার। তবে জেলাশাসক প্রদীপ কুমার দ্বিবেদী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যারা ব্যবসা বন্ধ রাখার কথা বলছেন, তা তাদের ব্যক্তিগত মতামত। সরকারের তরফে এমন কোনো নির্দেশ আসেনি।''

পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ তথা ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। তবে এই পরিস্থিতিতে সতর্কভাবে পা ফেলাই বিচক্ষণতার পরিচয়। ভারত সরকার সে কাজই করছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখাই এখন একমাত্র কাজ।'' উৎপলের বক্তব্য, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের বন্ধু। ভারতের এই বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হবে কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে বিরাট সীমান্ত আছে। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্যই এই বন্ধুত্ব জরুরি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও সে কথা জানে। ফলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সম্পর্ক জারি রাখা জরুরি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের যে মানুষেরা বিভিন্ন কাজে ভারতে এসেছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন উৎপল।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)