আরএসএফের প্রতিবেদনকে ‘বিদ্বেষপ্রসূত’ বললেন তথ্যমন্ত্রী
৬ মে ২০২২ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সংগঠনটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি প্যারিস বেইজড অর্গানাইজেশন। এই সংস্থা সবসময় বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। সংস্থাটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে অসত্য, ভুল ও মনগড়া রিপোর্ট করে।’’
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আরএসএফ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন ঘটেছে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৬৩ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৬২তম। বিশ্বজুড়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক স্বাধীন এই সংগঠনটির ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম, স্কোর ছিল ৫০ দশমিক ২৯। তার আগের বছর অবস্থান ছিল ১৫১তম।
আরএসএফ প্রতিবেদনে বলছে ২০২২ সালে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং তিনজন কারাবন্দি আছেন।
এই প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তারা গতবছর এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে প্রচণ্ড আপত্তিকর মন্তব্য করেছিল। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছিল এবং প্যারিস প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি ফ্রান্সের আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছিল। আইনি নোটিশে বলা ছিল, তারা কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের ব্যাপারে এ রকম মন্তব্য করতে পারে না, ফ্রান্সের আইনেই সেটি উল্লেখ আছে। তারা ফ্রান্সের আইন লঙ্ঘন করে সেটা করেছে। সুতরাং তারা এখন যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এটি আপত্তিকর এবং বিদ্বেষপ্রসূত।’’
আরএসএফের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‘যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে, সেই সমস্ত সূত্র থেকে তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। নিজেরাও বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে যে রিপোর্ট দেয় সেটির কোনো মূল্য নেই। তারা আগে থেকেই যেহেতু বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত সেজন্যই এ কাজটি করেছে। আমরা এটি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি।’’
গতবছর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ (বিএফইউজে) সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন আরএসএফ'র প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিবৃতি দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘সেই একই সংগঠন আবারও যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে কথা বলে তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিতে হবে সেই সংগঠনটা ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।’’
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এই প্রতিবেদনগুলো দিচ্ছে। তারা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়েও বলেছে। ডিজিটাল বিষয়টি যখন ছিল না, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও ছিল না। যখন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল বিষয়টি এসেছে, তখন গণমানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ আইন করেছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই আইন হয়েছে এবং হচ্ছে। সিঙ্গাপুর, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এই আইন হয়েছে।’’
এই আইন মানুষের নিরাপত্তার জন্য দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘এই আইনের সুযোগ গ্রহণ করে অনেক সাংবাদিকও তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর অনেক কিছু করার জন্য মামলা করেছে। অবশ্যই সাংবাদিক হোক, সাধারণ মানুষ হোক কারও বিরুদ্ধে এই আইনের অপব্যবহার হওয়া উচিত নয়, সে নিয়ে আমরা সতর্ক আছি।’’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ বাংলাদেশে যে সমস্ত ধারাগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, কেউ কেউ সমালোচনাও করেন, সেই ধারাগুলো ভারত পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে যে আইনগুলো হয়েছে সেখানেও অনুরূপ ধারাগুলো সন্নিবেশিত আছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফ্রেইম ওয়ার্ক ল করছে, যেটার অধীনে বিভিন্ন দেশে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, আইন করা হবে। ফ্রান্সেও একই ধরনের আইন আছে।’’
এএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গতবছরের জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...