বাংলা বর্ণপরিচয় এবং ছাপাখানার ইতিকথা
ব্রিটিশ আমলে বাংলায় যে আধুনিক শিক্ষার সূচনা, তাতে হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে ছাপাখানা৷ একালে শিল্পী হিসেবে সেকালের অক্ষরের শৈলী নিবিড়ভাবে দেখেছেন সব্যসাচী হাজরা৷
প্রাইমার টু প্রেস
ঢাকার ফরাসি সংস্কৃতিকেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ৩ মে, আর সমাপনী দিন শনিবার, ১৮ মে৷ কেমন ছিলো একসময়ের বাংলা বাল্যশিক্ষা, কীভাবে মুদ্রিত হতো তা- আয়োজনে এসব জানতে পেরেছেন দর্শনার্থীরা৷
হস্তচালিত মুদ্রণযন্ত্র
প্রদর্শন গ্যালারিতে ছিলো ছাপাখানার হস্তচালিত মুদ্রণযন্ত্র৷ হাজির ছিলেন মেশিনম্যানও৷ তিনি সেকালের প্রক্রিয়ায়, সেকালের বইয়ের পাতা ছাপানো দেখিয়েছেন৷
বাল্যশিক্ষা ও আদর্শলিপি
সব্যসাচী হাজরার গবেষণামতে, উনিশ শতকের শেষদিকে এসে ঢাকা থেকে বর্ণ পরিচয়ের বই প্রকাশ হতে শুরু করে৷ তখনকার পূর্ববঙ্গেই প্রথম প্রকাশিত হয় রামসুন্দর বসাকের আদি বাল্যশিক্ষা৷ সীতানাথ বসাকের আদর্শলিপিও এই বাংলায় প্রথম বের হয়৷
তর্কালঙ্কার এবং বিদ্যাসাগর
মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশুশিক্ষা’ (১৮৪৯ ও ১৮৫৩) এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫) প্রাথমিকের বাংলা শিক্ষায় বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করে৷ পরের দেড়শো বছর এ দুটো বইয়ের হাত ধরেই এগিয়েছে বাংলার প্রাথমিক পাঠ, বলছেন সব্যসাচী হাজরা৷
একশ’ বছরের বর্ণ পরিচয়
প্রদর্শনীতেই উন্মোচিত হয়েছে সব্যসাচী হাজরা সংকলিত নতুন বই ‘বর্ণমালা: বাংলা বর্ণ পরিচয় সংকলন’৷ যেখানে ১৮৪৯ থেকে ১৯৪৮ সাল- এই ১০০ বছরের আটখানা প্রাথমিক পাঠের বই তুলে ধরা হয়েছে৷
বাংলায় প্রথম, বাঙালির প্রথম
সব্যসাচী হাজরা লিখেছেন, বর্ণশিক্ষার প্রথম বাংলা বই ‘লিপিধারা’৷ যা ১৮১৬ সালে শ্রীরামপুরের মিশনারিরা প্রকাশ করেন৷ আর প্রথম বাঙালি হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বসু লিখেছেন ‘শব্দসার’৷ বর্ণশিক্ষার এই বইয়ের প্রকাশকাল ১৮৩৫৷
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত সহজপাঠ
‘ছোটো খোকা বলে অ আ/ শেখে নি সে কথা কওয়া’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশুপাঠ্য ‘সহজপাঠ’ শুরু হয়েছে এভাবেই৷ ১৯৩০ সালে প্রকাশিত এ বই অলঙ্করণ করেছিলেন চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু৷
বাংলা অক্ষর: বাঙালির জীবন
পটুয়া কামরুল হাসানের গড়া মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার- ‘এক একটি বাংলা অক্ষর/ এক একটি বাঙালির জীবন’: উপস্থাপিত হয়েছে প্রদর্শনীতে৷ তুলে ধরা হয়েছে এর মুদ্রণ-কৌশল৷
লেটার প্রেসের উপকরণ
প্রদর্শনীতে ছিলো হস্তচালিত মুদ্রণযন্ত্রের পাশাপাশি ছাপাখানায় ব্যবহৃত প্রাচীন নানা উপকরণ৷ প্রযুক্তির উৎকর্ষে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের ব্লক, সীসার হরফ৷
‘ওবিন ঠাকুর—ছবি লেখে’
‘তিনি যে চিত্রাক্ষর নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তার মূল অর্থটি হল অক্ষরের আড়ালে চিত্রকে খোঁজার প্রয়াস৷’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার বিরচিত ‘চিত্রাক্ষর’ নিয়ে এমনটাই লিখেছেন ভারতের শিল্প-ইতিহাসবিদ দেবদত্ত গুপ্ত৷ অবনীন্দ্রনাথের হরফ নিয়ে কাজের মাঝে চিত্রশিল্পী সব্যসাচী হাজরাও হয়তো সেই খোঁজের প্রয়াস নিয়েছেন৷