বস্তিতে করোনার টিকা দেয়া শুরু
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বস্তিবাসীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার কড়াইল বস্তিতে এ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।ছবিঘরে বিস্তারিত...
নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই
ঢাকার বনানীস্থ কড়াইল মাঠের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বস্তিবাসীদের দীর্ঘ লাইন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। বারবার বলার পরেও কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে জানান কর্তব্যরত একাধিক স্বেচ্ছাসেবক।
সপ্তাহব্যাপী চলবে টিকাদান কার্যক্রম
কড়াইলের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে কতদিন টিকা কার্যক্রম চলবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এটি আসলে ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা সাত থেকে ১০ দিন এ কর্মসূচি চালাবো। তবে বস্তির প্রায় তিন লাখ বাসিন্দাকে টিকা দিতে যতদিন প্রয়োজন, ততদিনই এ টিকাদান চলবে।’’
ভোর থেকে অপেক্ষা
ঢাকার কড়াইল বস্তিতে থাকেন আজিমন নেসা। তিনি জানান, ভোর ৬টা থেকে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন কোলে বাচ্চা নিয়ে। বেলা ১১টা বাজলেও টিকা দিতে পারেননি। তার বাচ্চা ক্ষুধায় কান্নাকাটি করছে, তবু কিছু করার নেই, টিকা না নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
পুরুষদের উপস্থিতি কম
কড়াইল মাঠের একটি টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরুষের তুলনায় নারী দ্বিগুনেরও বেশি। পুরুষদের উপস্থিতি এত কম কেন জানতে চাইলে টিকা নিতে আসা আসগর আলী বলেন, “আমরা সকালে কামে বাইর হয়া যাই। টিকার জন্য প্যাট তো আর বন্ধ থাকবো না। তাই যারা কামে গেসে, তারা আইতে পারে নাই। মহিলারা বাড়িতে থাকে, হ্যারা আইসে।“
বয়স্ক ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার
পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ষাটোর্ধ্ব অনেকেই এসেছেন টিকা নিতে। মোছাম্মাত আমিরন বেগমের বয়স ৮০-র বেশি। তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না দেখে একজন স্বেচ্ছাসেবক তাকে ধরে লাইনে সবার আগে দাঁড় করিয়ে দিলেন। জানা গেল, টিকাকেন্দ্রে বয়স্ক, অসুস্থ, গর্ভবতীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
‘আমি কি টিকা দিতে পারুম?’
টিকাকেন্দ্রে এসেছেন মোছাম্মাত জুলেখা আক্তার। একজন স্বেচ্ছাসেবককে দেখে তিনি জানতে চাইলেন, “আমার দুই বছরের বাচ্চা আছে ভাই, বুকের দুধ খায়। আমি টিকা দিলে কি বাচ্চা দুধ খাইতে পারবো?” স্বেচ্ছাসেবক ‘হ্যাঁ’ বলার পর তিনি পুনরায় লাইনে গিয়ে দাঁড়ান।
স্পট রেজিস্ট্রেশন
টিকাদানের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, যারা সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারেননি, তারাও এ কর্মসূচিতে টিকা দিতে পারবেন। যাদের টিকা রেজিস্ট্রেশন কার্ড নেই, তাদের ভোটার আইডি কার্ড অথবা জন্মনিবন্ধনের সনদ লাগবে। আপাতত এ দুটির একটিও না থাকলে টিকা দিতে পারছেন না তারা।
যে টিকা দেওয়া হচ্ছে
কড়াইল বস্তিবাসীদের কোন টিকা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে রেড ক্রিসেন্টের নাফিস আহমেদ খান নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, সবাইকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
টিকার লক্ষ্যমাত্রা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ১৫ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ টিকা নিতে পারছেন এখন। আমরা মোট আট কোটির বেশি ভ্যাক্সিন দিয়ে ফেলেছি। জানুয়ারির মধ্যে আমাদের ইচ্ছা আছে দেশের ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’’
একটু ভয়...
কড়াইলের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে টিকা নিতে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রিপন মিয়া। টিকা নেওয়ার পর বিদ্যালয়ের একটি খালি কক্ষে কিছুক্ষণ বসেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদিও লাখ লাখ মানুষ টিকা নিতাসে সারা দুনিয়ায়, তা-ও একটু ভয় তো লাগতাসেই। তাই কিছুক্ষণ বইছি এহানে, যদি কোনো সমস্যা হয়, হেগোরে জানামু।“
বয়সের সীমাবদ্ধতা
বস্তিবাসীদের টিকা নেওয়ায় বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কিনা জানতে চাইলে কর্তব্যরত একজন কর্মকর্তা জানান, এখানে ১৮ বছরের বেশি বয়সের যে কেউ এ টিকা নিতে পারবেন।
‘সরকার এত কষ্ট কইরা টিকা দিতাসে, লমু না কেন?’
ঢাকার কড়াইল বস্তিতে গিয়ে কথা হলো মুদি দোকানি আবুল কালামের সাথে। টিকা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি এখনো টিকা নেননি, তবে কাল-পরশুর মধ্যে নিয়ে নেবেন। বস্তিবাসীদের টিকাগ্রহণে আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, শুরুতে সবাই ভয় পেলেও এখন সবাই আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘‘সরকার এত টাকাপয়সা খরচ করে আমাদের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করছে, আমরা কেন টিকা নিবো না?’’