1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন্যায় গরু আর ধান নিয়ে বিপাকে হাওরবাসীরা

২০ জুন ২০২২

হাওরের কৃষকরা কিছুদিন আগেই ধান গোলায় তুলে নিশ্চিন্তে ছিলেন৷ এখন বন্যা তাদের এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ বড় সম্বল গরু নিয়েও সংকটে তারা৷ ছয়টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামের চিত্র প্রায় একই৷

https://p.dw.com/p/4CvhQ
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/ZUMA Press/picture alliance

নেত্রকোণার হাওর সংলগ্ন সবচেয়ে বেশি প্লাবিত খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের পাশেই উত্তর আঁটিপাড়ার বাসিন্দা ফালাক মিয়া মাসখানেক আগেই গোলায় ধান তুলেছিলেন৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রোববার বিকালে বলেন,  ‘‘ আমার প্রায় ৮০০ মণ ধানের গোলায় এখন তিন থেকে চার ফুট পানি৷ বাজারের ভাড়া গুদামে রাখছিলাম৷ পানির নিচে যে ধান তলিয়েছে সেই ধান যে কী হয়, জানি না৷ বাড়িতে গরু-বাছুর-ছাগল আছে, হাঁস-মুরগি আছে৷ এসব নিয়ে কই যামু?’’

পঞ্চাশোর্ধ্ব এই কৃষক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন,  ‘‘ যাওয়ার মতো অবস্থা নাই৷ এইবার এক্কেরে সর্বনাশের মইধ্যে পড়ছি৷’’

একই গ্রামের ৪০ বছর বয়সি মনির হোসেন বলেন,  ‘‘ আমার গোলায় প্রায় দুই হাজার মণ ধান৷ ঘরের মধ্যে তিন থেকে চার ফুট বানের পানি৷ ধান পানিতে ভেইজ্যা আছে৷ কী করতাম, কিবায় বাঁচাম৷ ’’

একই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের রিপন সরকারের গোলায় থাকা প্রায় ৫০০ মণ ধান এখন পানির নিচে৷ সেই সঙ্গে গবাদি পশু রাখা নিয়েও পড়েছেন সংকটে৷  ‘‘ আমার আটটা গরু৷ তারারে সরানির জায়গা নাই৷ পানির মধ্যেই একটু উঁচু জায়গা দেইখ্যা রাখছি৷ চোরের ভয়ে নিজেও হেইখানে থাকি৷’’

গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানালেন খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের পাশের উত্তর আঁটিপাড়ার মিন্টু মিয়া, রূপনগর গ্রামের একদিল মিয়া৷

মিন্টুর গরু-বাছুর মিলিয়ে ছয়টি আর একদিল মিয়ার চারটি৷ এর মধ্যে কোরবানির জন্য তৈরি করা পশুও আছে৷ গবাদিপশু রাখার পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকটের কথা বললেন তারা৷

একদিল মিয়ার চারটি গরুর মধ্যে একটি শংকর জাতের বড় ষাঁড়৷  এটা বিক্রি করেই তার সারা বছরের পরিবারের খোরাকি, মহাজনের ঋণ শোধ, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানোর কথা৷ এগুলো নিয়ে দুই দিন ধরে উপজেলার ডাকবাংলোর সামনে পড়ে আছেন তিনি৷ পরিবার উঠেছে খালিয়াজুরী কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে৷পানি নামলে পরে বাড়ি ফিরবেন৷

একদিল বলেন,  ‘‘ খড়ের লাচিও ডুবে গেছে৷ সব আশা শেষ৷ গরুরে খাওয়াব কী? এখন ভরসা কিনে খাবার খাওয়ানো৷ আমার সেই সামর্থ্য নেই৷ গরুগুলো না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে৷ সামনে কী করব বুঝতে পারছি না৷’’

মিন্টু মিয়ারও একটি বড় ষাঁড় এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রি করার কথা৷ এখন সেই ষাঁড় তার জন্য গলার ফাঁস হয়ে গেছে৷ তিনি উঠেছেন খালিয়াজুরী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে৷

তিনি বলেন,  ‘‘ নিজেদের ঘরই ডুবে গেছে, গরু রাখব কোথায়? নিজেদেরই খাবার নেই গরুকে কী খাওয়াব?’’

একদিল মিয়া, মিন্টু মিয়ার মতো হাওরে অনেক কৃষক কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু লালন-পালন করেছেন৷ প্রতিবছরই তারা এটা করেন৷ কৃষির পাশাপাশি এটা তাদের উপার্জনের একটি বড় মাধ্যম৷ এখন না পারছেন গরু বিক্রি করতে, না পারছেন রাখতে৷ খোলা আকাশের নিচে এখন গবাদি পশুর সঙ্গে মিলেমিশে দিন কাটাচ্ছেন হাওরবাসী৷  এই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামের চিত্র প্রায় একই৷

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সবচেয়ে সব সমস্যা হচ্ছে, মানুষের গবাদিপশু ও সারা বছরের জমা ধান রয়েছে বাড়িতে৷ এ নিয়ে মানুষ খুব বিপদে আছেন৷ এগুলো রেখে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না৷ এখন বড় নৌকাও পাওয়া যাচ্ছে না৷ উপজেলা প্রশাসন একটা বড় নৌকা সংগ্রহ করেছে৷ এটা দিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে৷ ’’

মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম৷

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান