1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন শহরের পরিবহন ব্যবস্থা

২৬ নভেম্বর ২০০৯

পশ্চিম ইউরোপের বেশ কিছু দেশের মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থার তুলনা করলে জার্মানি অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে অনেক বেশি৷ বলা যেতে পারে একেবারে শীর্ষে তার স্থান৷

https://p.dw.com/p/Kgrj
ছবি: AP

একটি দেশ কত উন্নত তার একটা বড় প্রমাণ মেলে সে দেশের পরিবহন ব্যবস্থার দিকে তাকালে৷ এদিক থেকে ইউরোপ বেশ এগিয়ে রয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপ৷ আর জার্মান রেলওয়ে ডয়চে বান এখানকার পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ৷ তাছাড়া প্রায় প্রতিটি শহরেই রয়েছে ট্রাম বা পাতাল রেল - মেট্রো৷ বাসতো রয়েছেই৷ বন শহরও এর ব্যতিক্রম নয়৷

বন শহরের সেন্ট্রাল স্টেশন হ'ল শহরের অন্যন্য স্থানে যাওয়ার অন্যতম স্থান৷ এখানে শুধু ট্রাম বা মেট্রো নয় রয়েছে সেন্ট্রাল বাস স্টেশন এবং অবশ্যই রেল লাইন৷ যে ট্রাম বা ট্রেন হোক না কেন বনের সেন্ট্রাল স্টেশন তাকে ছুঁয়ে যেতে হবেই৷ কারণ এখানেই হয়তো সবাই নেমে পড়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য এই সেন্ট্রাল স্টেশন থেকেই তারা নিয়ে নেয় অন্য আরেকটি পরিবহন মাধ্যম যা তাদের সময়মত পৌছে দেবে নির্দিষ্ট জায়গায়৷ প্রতিদিন অন্তত ৫০০ বার বিভিন্ন ট্রেন বা ট্রাম বনের সেন্ট্রাল স্টেশনের ওপর দিয়ে আসা যাওয়া করে৷ বন শহরের এই পরিবহনের দায়িত্বে রয়েছে এস ডাব্লিউ বি বাস এন্ড ট্রেইন সার্ভিস৷

ঠিক কত মানুষ প্রতিদিন এস ডাব্লিউবি-র এই পরিবহন সেবা গ্রহণ করছে ? আরেকটু সহজভাবে প্রশ্ন করলে, প্রতিদিন কত মানুষ এই পরিবহন মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে ? অন্তত ৫০ হাজার মানুষ৷ অবাক হচ্ছেন ? গোটা বন শহরে বসবাস করছে প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ৷ তাদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে ৬টি মেট্রো লাইন , ৩টি ট্রাম লাইন এবং ৪২টি বাস লাইন৷ এগুলোর সাহায্যে বনের যে কোন জায়গায় যে কেউ অনায়াসে যেতে পারবে৷

বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যা পাহাড়ের ওপরে সেখানে ট্রেন বা ট্রাম নয় শুধু বাস সার্ভিস চালু৷ প্রতি বছর বন শহরে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ এই পরিবহন মাধ্যমগুলোর সেবা ভোগ করে আসছে৷ প্রশ্ন উঠতে পারে মাত্র ৩ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ কি করে বছরে ৮০ লক্ষ মানুষে পরিণত হয় ? খুব সহজ - কারণ এক জন প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৬ বার চড়ছে এই বাস এবং ট্রেনগুলোতে৷ আর সপ্তাহান্তে তো কথাই নেই !

Deutschland Tarifvertrag Verkehr Bahn Deutsche Bahn Streik S-Bahn Hamburg
ছবি: AP

এস ডাব্লিউ বি বাস এবং ট্রেন কর্তৃপক্ষ একটি জরিপে জানিয়েছে প্রতি বছর যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে৷ যার ফলে বাড়াতে হচ্ছে বাসের সংখ্যা, ট্রেনের সংখ্যা৷ যে বাস বা ট্রেন প্রতি দশ মিনিট পরপর আসা যাওয়া করতো সেখানে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সময়ের ব্যবধান কমিয়ে ৮ বা ৭ মিনটে নিয়ে আসা হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে তা ৫ মিনিট৷ তবে বলে রাখা প্রয়োজন দিনে কয়েকটি ‘পিক আওয়ার' রয়েছে৷ স্কুল এবং কর্মস্থলে যাওয়ার সময়, স্কুল ছুটি এবং কাজের শেষে বাড়ি ফেরার সময়৷ তখন বাস, ট্রাম, ট্রেন সব জায়গাতেই থাকে প্রচন্ড ভীড়৷

তবে একটি কথা সত্যি - তা হল পৃথিবীর অন্য সব বড় শহরগুলোর মত বনেও এই পিক আওয়ারে রাস্তায় ট্রাফিক থাকে সবচেয়ে বেশি৷ অনেকেই গাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকার চেয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা বাসে-ট্রামে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তারা দ্রুত তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে চান৷ এস ডাব্লিউ বি-র স্লোগান - খুব সহজেই সকলকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য৷

এস ডাব্লিউ বি বাস এবং ট্রেন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ একেবারে নিয়ম করে প্রতিদিন এই পরিবহন মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে থাকে৷ অর্থাৎ তারা সাপ্তাহিক, মাসিক বা বাৎসরিক হিসেবে টিকিট কেনে৷ তারা এস ডাব্লিউ বি- র বিশেষ কাস্টমার৷ অনেকের আছে জব টিকিট৷ জব টিকিট হচ্ছে কাজের জায়গায় যাওয়ার জন্য খুব সুলভ মূল্যের টিকিট৷ এই টিকিট দিয়ে কোলন শহর ছাড়িয়ে আরো বেশ কিছুদূর পর্যন্ত যাওয়া যায় আলাদা করে টিকিট কিনতে হয় না৷ শুধু তাই নয় প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটার পর জব টিকিটের যাত্রী আরেকজন প্রাপ্ত বয়স্ক, একজন শিশু এ বং একটি কুকুর বিনা ভাড়ায় সঙ্গে নিতে পারবেন৷ আর সপ্তাহান্তে সারা দিন রাতই এই সুবিধা ভোগ করেন জবটিকিটের যাত্রী৷ আর এই সুবিধা শুধু বন নয়, অন্যান্য শহরেও লভ্য৷

বন আদতে বিশ্ববিদ্যালয় শহর৷ খুব স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী৷ পরীক্ষার শেষে পার্টি, সপ্তাহান্তে পার্টি অথবা পড়াশোনার কারণে দেরি করে বাড়ি ফেরা৷ তখন কি করা ? এস ডাব্লিউ বি গভীর রাতে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য দিয়েছে ৯টি নাইট বাস৷ এই বাসগুলো রাত সাড়ে বারোটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নিজস্ব রুটে চলে৷ গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয় যাত্রীদের৷

আগেই বলা হয়েছে বনে রয়েছে ৪২টি বাস লাইন সার্ভিস৷ যাত্রীবাহী এই বাসগুলো সবমিলে প্রায় ৬৬৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে৷ রাতে নাইট বাসগুলো যাচ্ছে ১৮৪ কিলোমিটার পথ পর্যন্ত৷ ৪২টি বাস রুট চালু রাখতে চলাচল করছে ২০১টি বাস৷

এবার দেখা যাক ট্রাম এবং মেট্রো সার্ভিসের দিকে৷ ৬টি মেট্রো লাইন এবং ৩টি ট্রাম লাইন৷ এই ট্রাম এবং মেট্রো প্রতিদিন প্রায় ১২৬ কিলোমিটার পথ আসা-যাওয়া করছে৷ বছরে প্রায় ৭ মিলিয়ন কিলোমিটার৷

একটি কথা না বললেই নয় - তাহল যে বাসগুলো বন শহরে যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে সে বাসগুলো সবই মার্সিডিজ গাড়ি৷ যে দেশের যে চল !

প্রায় ১২৯ বছর ধরে বন শহরের পরিবহন কর্তৃপক্ষ সেবা দিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা, দিনের শেষে দ্রুত বাড়ি ফেরা - সবকিছুর দিকেই রয়েছে তাদের নজর৷ বন-এর সেন্ট্রাল রেল স্টেশন জার্মানির অত্যন্ত দ্রুতগামী রেল বা আই সি ই খুব অল্প সময়ে দূর পাল্লার যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছে তাদের গন্তব্যস্থলে৷ আই সি ই জার্মানি ছাড়িয়ে আশে-পাশের দেশ পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে যাত্রীদের৷

এস ডাব্লিউ বি এবার নজর দিচ্ছে প্রতি ট্রাম এবং মেট্রো স্টেশনের দিকে৷ ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় প্রতিটি স্টেশনে এসক্যালেটরের ব্যবস্থা করা হবে৷ এর জন্য অবশ্য খরচ হবে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার ইউরো৷ এবং ধীরে ধীরে এই প্রকল্প বন ছাড়িয়ে যাবে আশে পাশের বেশ কিছু শহরে৷ এসব করা হচ্ছে শুধুমাত্র যাত্রীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ার্দার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক