বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফেরত আনায় অগ্রগতি
১৫ আগস্ট ২০১৭আনিসুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফেরত আনার আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সেরও প্রধান৷ তিনি জানান, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডায় দু'জন পলাতক আসামির ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি৷ তাদের ফেরত আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ শুধু কিছু আইনগত জটিলতা আছে৷ তবে বাকি চারজন কোথায় আছে আমরা তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি৷''
জানা গেছে, এদের মধ্যে ক্যানাডায় নূর চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরী অবস্থান করছেন৷ মন্ত্রী জানান, ‘‘ক্যানাডার সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে৷'' বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাশেদ চৌধুরি ১৯৬৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন৷ পরে ১৯৭৬ সালে জেদ্দায় কূটনীতিক হিসেবে যোগদান করেন৷ তারও পরে তিনি নাইরোবি, টোকিও, কুয়ালালামপুর ও ব্রাসিলিয়াতে বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেন৷
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময়ে তিনি ব্রাসিলিয়াতে কর্মরত ছিলেন৷ ঐ বছরের জুলাই মাসে তাকে ঢাকায় ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হয়৷ কিন্তু তিনি দেশে ফিরে না এসে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷ আজও তিনি সেখানেই আছেন৷
২০১৪ সালে দু'দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলি ২০১৫ সালে রাশেদ চৌধুরীতে ফেরত দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে অনুরোধ জানান৷ ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব হোয়াইট হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন৷ জানা গেছে, সম্প্রতি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট রাশেদ চৌধুরিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে৷ নূর চৌধুরীও ব্রাসিলিয়াতে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত ছিলেন৷ ১৯৯৬ সালে তাকেও দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হলে তিনি ক্যানাডাতে পালিয়ে যান৷
২০০৭ সালে ক্যানাডার সর্বোচ্চ আদালত নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেন৷ নূর চৌধুরী এখন প্রি রিস্ক রিমুভাল এসেসমেন্ট বিধির আওতায় ক্যানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে আবেদনের সুযোগ নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন৷
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্যানাডা সফরে গিয়ে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা করেন৷ তাকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করতেও রাজি হয় ক্যানাডা৷
নূর চৌধরীর ব্যাপারেঅনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন বাংলাদেশের ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশেনের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল রাফি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি, এ মুহূর্তে নূর চৌধুরী ক্যানাডার টরেন্টো থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কিটোবিকো নামে একটি শহরে অবস্থান করছেন৷ তিনি তার পরিবার-পরিজন নিয়েই সেখানে আছেন৷ তবে তিনি বাইরে বের হন না৷''
রাফি জানান, ‘‘ঐ শহরে বাংলাদেশিদের বসবাস নেই বললেই চলে৷ একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে তিনি সেখানে আছেন৷ এর আগে বেশ কয়েকবার তিনি বাসা পরিবর্তন করেন৷''
বকি চারজন কেথায় আছেন, তা আইনমন্ত্রী নিশ্চিত করতে না পরলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে, শরীফুল হক ডালিমকে গত মার্চে স্পেনে দেখা গেছে৷ তার কেনিয়া এবং জিম্বাবোয়েতে ব্যবসা আছে বলে খবর৷ বাংলাদেশ গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তান সরকারকে দেয়া এক চিঠিতে জানতে চায় ডালিম পাকিস্তানের কোথায় আছে? প্রশ্নটির জবাব দেয়নি পাকিস্তান৷ বাংলাদেশ সরকারের ধারণা, ডালিম পাকিস্তানেই স্থায়ীভাবে থাকেন৷
রিসালদার মোসলেহউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পর সরকার এখন ধারণা করছে সে এখন জার্মানিতে আছে৷ গত বছর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জার্মান সরকারকে এ নিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়৷ জার্মানি এ বিষয়ে আরো তথ্য জানতে চেয়েছে এবং জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে৷
খন্দকার আব্দুর রশীদকে সর্বশেষ পাকিস্তানে দেখা গেছে বলে বাংলাদেশের কাছে তথ্য রয়েছে৷ এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানকে একটি চিঠি দেওয়া হয় গত ডিসেম্বরে৷ পাকিস্তান সরকার অবশ্য এখনো কোনো জবাব দেয়নি৷ এছাড়া আব্দুল মাজেদের অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই সরকারের কোনো সংস্থার কাছে৷
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত রায়ে ২০০৯ সালে৷ তাতে মোট ১২ জনকে মৃত্যুদনণ্ডের আদেশ দেয়া হয়৷ এরপর ২০১০ সালে আটক পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়৷ বাকি সাতজনের মধ্যে আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবোয়েতে মারা যান৷ তারপর থেকেই এই ছয়জনকে সরকার দেশে ফেরত আনার চেষ্ঠা চলছে৷
আইনমন্ত্রী জানান, ‘‘আমরা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সবাইকেই ফেরত আনার চেষ্টা করছি৷ আমাদের কাজে অগ্রগতি আছে৷''
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন টাস্কফোর্সেরই দায়িত্ব তাদের ফেরত আনা৷ আর এখন তারা সেই চেষ্টাই করছেন৷''
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের কি আদৌ ফিরিযে আনা সম্ভব হবে? মন্তব্য জানান নীচের ঘরে৷