1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রান্সে প্যাটির নামে স্কুলের নামকরণে আপত্তি

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শিক্ষক, অবিভাবকদের আপত্তি, তাই ফ্রান্সে একটি স্কুলের নাম স্যামুয়েল প্যাটির নামে রাখা গেল না।

https://p.dw.com/p/3p8sm
প্যাটির নামে স্কুলের নামকরণ করা নিয়ে আপত্তি ফ্রান্সে।ছবি: Lewis Joly/dpa/picture-alliance

স্কুলের নাম 'দ্য ইউক্যালিপটাস'। দক্ষিণ ফ্রান্সে ভূমধ্যসাগরের তীরের গ্রাম অলিউলের স্কুল। কিন্তু সেই স্কুল নিয়ে মিডিয়ার কাছে কেউ একটা কথাও বলতে রাজি নন। স্কুলের অঙ্কের শিক্ষিকা এবং টিচার্স ইউনিয়নের সদস্য সান্দ্রা অলিভিয়ের ডিডাব্লিউকে টেক্সট মেসেজ করে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরে পেতে চান।

স্থানীয় মেয়র রবার্ট বেনেভেনেটি হলেন লে রিপাবলিকান দলের সদস্য। তিনিও কোনো মন্তব্য করবেন না বলে আমাদের জানিয়ে দিলেন। অথচ এই মিডল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে স্যামুয়েল প্যাটির নামে রাখার প্রস্তাব তাঁরই ছিল। গতবছর অক্টোবরে চরমপন্থিরা স্যামুয়েল প্যাটির মাথা কেটে দিয়েছিল। কারণ, তিনি মহানবী(সা:)-র কার্টুন দেখিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাখ্যা করেছিলেন।

বেনেভেনেটিকে তাঁর পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। কারণ, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবে শিক্ষক, অবিভাবক, স্থানীয় মানুষের সায় নেই। এই প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে প্রবল তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে ফরাসি সমাজ কতটা বিভক্ত।

মেয়র সম্প্রতি টিভি চ্যানেল ফ্রান্স ৩-এ বলেছিলেন, ''আমি ওই শিক্ষককে সম্মান দিতে চাই। এটা হবে আমাদের প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।''

'এর ফলে আমরাও টার্গেট হব'

স্কুলের নামবদল করতে গেলে গভর্নিং বোর্ডকে সহমত হতে হয়। বোর্ডে শিক্ষক, অবিভাবক, ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব আছে। অনলাইন সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাঁদের অধিকাংশই নতুন নামের বিরুদ্ধে। তাই মেয়র তাঁর প্রস্তাব বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।

ফ্রান্স ৩ চ্যানেলে অলিভার বলেছেন, ''আমরা আমাদের সহকর্মীকে সম্মান জানাতে চাই। কিন্তু এভাবে নয়। ওরা তাহলে আমাদের টার্গেট করবে। আমরা সেটা এড়াতে চাই।'' তিনি বলেছেন, ''প্যাটির সঙ্গে এই গ্রামের কোনো সম্পর্ক নেই। আর স্কুলের সামনের রাস্তার নাম ইতিমধ্যেই ২০১৮ সালে সুপারমার্কেট আক্রমণে নিহতের নামে রাখা হয়েছে। ''

খুশি নন অনেকে

কিন্তু উল্টো প্রতিক্রিয়াও হয়েছে। একটি বামপন্থি এডুকেশন ফাউন্ডেশনের প্রধান আয়নিস রডের যেমন বলছেন, ''এটা তো বিপদের হুমকির কাছে আত্মসমর্পণ।'' তিনি মনে করেন, ''শিক্ষকরা ভয় পেয়েছেন। ধারণা বা আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কট্টরপন্থিদের জয় হলো। শিক্ষকরা তো লড়াই করতেই চাইলেন না।''

আইফপের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের মধ্যে আশঙ্কা আছে। ৪২ শতাংশ শিক্ষক স্বীকার করেছেন, সমস্যা এড়াতে চাইছেন তাঁরা। রডের ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমি বুঝতে পারছি, কেউ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বিশেষ করে ২০১৫ সালে শার্লি এব্দোর ঘটনার পর। সত্তর বছর আগে আমরা যে সমাজে বাস করতাম, এখন তা আর নেই। তবে এই প্রজাতন্ত্রের আদর্শ বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারি কর্মীদের উপর বর্তায়।'' তিনি ১৯৩৮ সালে পার্লামেন্টে চার্চিলের বক্তৃতা উদ্ধৃত করেছেন। চার্চিল বলেছিলেন, ''আপনাকে যদি যুদ্ধ ও অমর্যাদার মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বলা হয় এবং আপনি যদি অমর্যাদা বেছে নেন, তা হলে আপনাকে যুদ্ধের মুখেই পড়তে হবে।''

ফরাসি সমাজে ফাটল?

তবে মিডিয়া সোসিওলজির অধ্যাপক মিশেল অ্যালেকজান্দ্রা টিউডর মনে করেন, স্কুলের নামকরণ নিয়ে আপত্তি বুঝিয়ে দিচ্ছে, ফরাসি সমাজে ফাটল বাড়ছে। টিউডর মনে করেন মানুষ রাজনীতিবিদদের থেকে আস্থা হারাচ্ছেন। কারণ, রাজনীতিবিদরা এই আদর্শগুলিকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করছে। তা নিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাইছে। তাছাড়া সকলেই এখন ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের উপর বিশ্বাস রাখছে না। তার সংজ্ঞা বদলের সময় এসেছে।

অন্যত্র প্যাটির নামে স্কুল

তবে প্যাটির নামে অন্যত্র স্কুলের নাম রাখা হয়েছে। বেজিয়ে শহরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্যাটির নামে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্যাটিকে হত্যার কয়েকদিনের মধ্যে ক্যাপ দ্য-অ্যালি শহরে একটি স্কুলের নাম বদল করে নিহত শিক্ষকের নামে রাখা হয়েছে। তবে এগুলি প্রাথমিক স্কুল। মিডল স্কুলের নাম এখনো পরিবর্তন করে প্যাটির নামে রাখা হয়নি।

লিসা সুইস/জিএইচ