ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েই অভিনব ভাস্কর্য
২৪ মার্চ ২০২২গ্রিক ডিজাইনার কস্টাস লামব্রিডিস আসবাবপত্র দিয়ে যে ভাস্কর্য গড়ে তোলেন, আকার-আকৃতি ও উপকরণের বিচারে সেগুলি সত্যি প্রথাবিরোধী৷ হাতে যা পান, তাই দিয়েই তিনি সামগ্রিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ শিল্পকীর্তি সৃষ্টি করেন৷ নিজের কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করে কস্টাস বলেন, ‘‘আমি নির্দিষ্ট কোনো উপকরণের বিশেষজ্ঞ হবার চেষ্টা করি না, বরং সব সময় উপকরণ বদল করি৷ নানা ধরনের উপকরণ ঘেঁটে নতুন উদ্যম নিয়ে নতুন বস্তু তৈরি করি, পরীক্ষা করি, ভুলও করি৷’’
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ৩৩ বছর বয়সি শিল্পীর স্টুডিওতে জটিল সব সৃষ্টি রূপ পায়৷ বর্তমানে তিনি একটি ফোয়ারা তৈরির কাজে ব্যস্ত৷ কস্টাস বলেন, ‘‘মাথায় একটা আইডিয়া থাকে৷ তারপর সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু উপকরণেরও নিজস্ব চরিত্র ও পদার্থ রয়েছে, যার নিজস্ব অভিব্যক্তি বোঝা যায়৷ কখনো সেই জবাব পছন্দ নাও হতে পারে৷ ফলে শিল্পী হিসেবে হয় সংঘাত, কিংবা সহযোগিতার পথ বেছে নিতে হয়৷ সেগুলি একত্র করাই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ যেমন এক টুকরো সেরামিকের সঙ্গে এক টুকরো মার্বেল কীভাবে জোড়া সম্ভব? অথবা ইস্পাতের সঙ্গে কাচ?’’
তাঁর উপকরণ বোঝাই শিল্পকীর্তিগুলি বারোকের মতো শিল্পের একাধিক শৈলির প্রতিফলন ঘটায়৷ তাঁর ‘এলিমেন্টাল ক্যাবিনেট' নামের সৃষ্টি শিল্পের ইতিহাসের এক মাস্টারপিসের আদলে তৈরি, যেটির নাম ‘ব্যাডমিন্টন ক্যাবিনেট’৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর বারোক শৈলির এই আলমারি নিলামে রেকর্ড তিন কোটি ইউরো দামে বিক্রি হয়েছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে দামী আসবাব হিসেবে সেটি পরিচিত৷ কস্টাস লামব্রিডিস মনে করেন, ‘‘ব্যাডমিন্টন ক্যাবিনেটের মতো এত দামী কোনো বস্তুর সঙ্গে আমার সংগ্রহ করা অতি সাধারণ, মূল্যহীন, এমনকি কখনো জঞ্জাল হিসেবে বিবেচিত উপকরণের বৈপরিত্য আমি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম৷’’
কস্টাস লামব্রিডিস নেদারল্যান্ডসের আইন্ডহোফেন শহরে ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে পুরস্কারও পেয়েছেন৷ নিজেই সব কাজ করতে ভালবাসেন৷ সোল্ডারিং, টাইলস বসানো অথবা কাচের বুদবুদ সৃষ্টির মতো কোনো কাজেই তিনি পিছপা হন না৷ কস্টাস বলেন, ‘‘আমার মতে, আমরা সবাই সব কিছু করতে পারি৷ অন্য কিছু আমাদের থামিয়ে দেয়৷ আমার কাছে দক্ষতাই সবকিছু নয়, বরং ইচ্ছাই আসল কথা৷ আমার কাছে সবকিছুই ইন্টারেস্টিং৷ একই সঙ্গে সবকিছুর মধ্যে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমার চলে না৷’’
স্টুডিওতে উপকরণের অভাব নেই৷ বাকিরা যা ফেলে দেয় বা হাটে বেচে দেয়, সেগুলি তাঁর কাছে বড় সম্পদ৷ কস্টাস লামব্রিডিস বলেন, ‘‘পথঘাট থেকে এই সব আমি সংগ্রহ করি, যেমন পুরানো প্লাস্টিকের খেলনা বা ছাদের টালি৷ কেউ বাসার মেরামতি করানোর সময় সেগুলি ফেলে দিয়েছিল৷ আমার কাছে এ সব সোনার মতো৷ কুড়িয়ে পাওয়া ভাঙা মার্বেলের বস্তু আমার অত্যন্ত পছন্দের৷ ভীষণ ভারি বলে আমি ছাড়া কেউ সে সব চায় না৷’’
ডিজাইনার হিসেবে তিনি প্যারিসের বিখ্যাত ‘কার্পেন্টার্স ওয়ার্কশপ গ্যালারি’-র প্রতিনিধিত্ব করেন৷ সেখানে অভিনব আসবাবের কোলাজ চড়া দামে বিক্রি হয়৷ কস্টাস বলেন, ‘‘আমার কাছে কাজ জীবন্ত কোনো প্রাণীর মতো৷ অর্থাৎ প্রথমে একটা আইডিয়া আসে, একটা বীজ থাকে যা স্টুডিওতে বপন করা হয়, যা মাটির মতো৷ আমাদের ভালোবাসা ও যত্ন পেলে, আমাদের শক্তি ও সময় উজাড় করে দিলে তখন সেটি বাড়তে শুরু করে৷’’
কস্টাস লামব্রিডিস একই সঙ্গে ডিজাইনার ও কিছুটা দার্শনিকও বটে৷ তিনি প্রকৃত অর্থে নিজেকেও ছাপিয়ে যাবার ক্ষমতা রাখেন৷
ক্রিস্টিনে লেবার্ট/এসবি