ফিলিপাইন্সের পৌঁছাচ্ছে ত্রাণ
১১ নভেম্বর ২০১৩সুপার টাইফুন হাইয়ানের ধ্বংসের চিহ্ন এখনও ফিলিপাইন্সের টাকলোবান শহরের প্রতিটি কোনায়৷ লাখো মানুষ খোলা আকাশের নীচে, ত্রাণের অপেক্ষায়৷ কিন্তু ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দিয়ে চলছে লুটপাট৷ এই পরিস্থিতি সামলাতে ফিলিপাইন্সে কয়েকশ সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করেছে সরকার৷ শুধু তাই নয়, আরো নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বেনিগনো অ্যাকুইনো৷ রবিবার টাকলোবান শহর পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেন তিনি৷
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
ফিলিপাইন্সের জাতীয় পুলিশ-বাহিনীর মুখপাত্র সোমবার এবিএস-সিবিএন টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশবাহিনী লুটপাটকারীদের হামলার শিকার হচ্ছেন, এমনকি তাঁদের পরিবারও বাদ যাচ্ছে না৷ সেনা মুখপাত্র কর্নেল রেমন জাগালা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, সামারে চার হাজার সেনা আছে৷ কিন্তু তাঁদের অনেকেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তাই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তারক্ষী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ধ্বংসের মাঝেও প্রাণের স্পন্দন
টাকলোবানের চারপাশে যখন ধ্বংসচিহ্ন ছাড়া আর কিছুই নেই, তখন এক শিশুর জন্ম কিছুটা হলেও বেদনা ভুলিয়ে দিয়েছে স্বজন হারাদের৷ টাকলোবানের বিমানবন্দরে ২১ বছর বয়সি এমিলি ওর্তেগা একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেন৷ নাম রেখেছেন বি জয়৷ ১০ হাজার মানুষ যেখানে নিহত, সেখানে এই প্রাণের স্পন্দনে হাসি ফুটেছে অনেকের মুখে৷ তবে শিশুটির জন্মকে অলৌকিক হিসেবেই দেখছেন তাঁর মা৷ কেননা ঝড় আঘাত হানার সময় তিনি একটি শরণার্থী শিবিরে ছিলেন৷ ঝড় আঘাত হানার পর পানির তোড়ে ভাসতে থাকেন তিনি৷ এরপর পৌঁছে যান বিমানবন্দরে, যেখানে সেনা চিকিৎসকদের সহায়তায় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন৷
দুর্গত এলাকায় পৌঁছাচ্ছে ত্রাণ
হাইয়ান আঘাত হানায় ফিলিপাইন্সের ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৯৫ লাখ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে ত্রাণ পাঠাতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো৷ ম্যানিলার মার্কিন দুতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ব্রায়ান গোল্ডবেক অবিলম্বে ত্রাণ কাজে ১ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এরই মধ্যে ত্রাণ নিয়ে মার্কিন একটি বিমান ফিলিপাইন্সে পৌঁছেছে৷ সেই দলে আছে ৯০ জন মার্কিন নৌ-বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্য৷
ব্রিটেন ৯৬ লাখ ইউরোর ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে৷ ম্যানিলার জার্মান দূতাবাস জানিয়েছে, এর মধ্যে ২৩ টন খাদ্য সহায়তা এবং উদ্ধারকারী দল দুর্গত এলাকায় কাজ করছে৷
অস্ট্রেলিয়া ১ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে৷ এর মধ্যে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসা সহায়তা, জাতিসংঘের ত্রাণ তহবিলে সহায়তা এবং অস্ট্রেলিয়ার বেসরকারি সংস্থাগুলোকে উদ্ধারকাজে সাহায্যের উপকরণ কেনায় সহায়তা করা হবে৷
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, লেটে ও সামার প্রদেশে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান নির্ধারণে ২০ লাখ ডলার বরাদ্দ দিচ্ছে তারা৷ এছাড়া তারা ৪০ টন বিস্কুট এবং উদ্ধারকাজের জন্য সবধরনের যন্ত্রপাতি সরবরাহও করবে৷ জরুরিভিত্তিতে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ১০ ডলার www.wfpusa.org বা AID লিখে ২৭৭২২ এই নম্বরে ম্যাসেজ করে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ইউনিসেফ জানিয়েছে, কোপেনহেগেন থেকে ৬৬ টন ত্রাণ পাঠানো হয়েছে৷ এছাড়া পানি বিশুদ্ধিকরণ উপকরণসহ অন্যান্য দ্রব্য মঙ্গলবার পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে তারা৷ কেউ সাহায্য করতে চাইলে তাদের unicef.org/support – এই ঠিকানায় অর্থ সাহায্য পাঠাতে বলেছে ইউনিসেফ৷
জাপান এরইমধ্যে ২৫ সদস্যের একটি মেডিক্যাল দল পাঠিয়েছে৷ তাইওয়ান ২ লাখ ডলার অর্থ সাহায্য পাঠাচ্ছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো সাহায্য পাঠানো শুরু করেছে৷
ভিয়েতনাম ও চীনের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত
ফিলিপাইন্সে ১০ হাজার মানুষের প্রাণ নিয়ে ঘূর্ণিঝড় হাইয়ান দুর্বল হয়ে সোমবার সকালে আঘাত হেনেছে ভিয়েতনামে৷ কুয়াংনিনহ প্রদেশে স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটায় ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে হাইয়ান৷ ঝড়ের প্রভাবে কোথাও কোথাও গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে বাড়ি-ঘর ঠিক করতে গিয়ে নিহত হয়েছে ১০ জন৷
ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে সোমবার সকালে চীনের গুয়াংসির নিংমিং কাউন্টিতে আঘাত হানে ঝড়টি৷ ঝড়ের প্রভাবে হাইনান প্রদেশে তিন জন নিহত হয়েছেন এবং ৩৯ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে সোমবার৷ ঝড়ে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুয়াঙসি এবং গুয়াংডং প্রদেশ৷
এপিবি/ডিজি (এপি,ডিপিএ,এএফপি,রয়টার্স)