1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফাঁসি কি শিশুধর্ষণ কমাতে পারবে?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২৪ এপ্রিল ২০১৮

১২ বছরের কম বয়সি শিশুদের ধর্ষণ করা হলে অপরাধীর ফাঁসি হবে– এমন এক অর্ডিন্যান্স জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু ধর্ষণ নিবারণে ফাঁসি খুব কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে সুশীল সমাজ দ্বিধাবিভক্ত৷

https://p.dw.com/p/2wZKV
Indien Vergewaltigung Uttar Pradesh Proteste
ছবি: picture-alliance/dpa

শিশু ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে, তাই নিয়ে দিশাহারা গোটা দেশ৷ জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া এবং উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে নাবালিকা ধর্ষণকাণ্ডের প্রেক্ষিতে গোটা দেশের জনরোষ সামাল দিতে মোদী সরকার তড়িঘড়ি জারি করেছেন এক অর্ডিন্যান্স৷ এতে ১২ বছরের কম বয়সি নাবালিকা ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অপরাধে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাবাস৷ন্যূনতম শাস্তি ২০ বছরের কারাদণ্ড৷ ১৬ বছরের কম বয়সি বালিকাকে গণধর্ষণের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ বিচারপর্ব শেষ করতে হবে দুই মাসের মধ্যে৷  ফাঁসির সাজাসহ আইন কঠোর করা হয়েছে এই অর্ডিন্যান্সে তাতে সন্দেহ নেই৷ সেটা দরকারও বটে৷ কিন্তু তারপরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়৷ ফাঁসির বিধান দিয়ে এই ঘৃণ্য অপরাধ কতটা আটকানো যাবে?

কারণ, দেখা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের পর ভার্মা কমিশনের সুপারিশে শিশু যৌন নিপীড়ন ও নাবালিকা ধর্ষণ প্রতিরোধ আইন (পকসো) আরও কঠোর করা হয়েছিল, কিন্তু তারপরেও ধর্ষণ কমেনি, বরং ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে৷ জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যানে সেটাই উঠে এসেছে৷ ২০১৬ সালে গোটা দেশে প্রায় ৩৯ হাজার ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়৷ তারমধ্যে ৩৬ হাজার শিশু ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের ঘটনা৷ এই তো গত সোমবার দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানার একটি গ্রাম থেকে ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় পাঁচ জন৷ তারপর গণধর্ষণ করে৷ পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে, অন্য দুজন এখনও পলাতক৷ তিন দিন আগে ওড়িষার  স্কুলের এক বাচ্চা মেয়েকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ করে এক যুবক৷ ধরা পড়ার ভয়ে বাচ্চাটাকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করে সে৷ কিন্তু বাচ্চা মেয়েটি মরেনি৷ তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ একই ধরনের নাবালিকার উপরে যৌন নিগ্রহের খবর এসেছে সুরাট থেকে৷ এসেছে উত্তর প্রদেশের বেরিলি থেকে৷ আট বছরের এক বালিকাকে ধর্ষণ করে ১৪ বছরের এক নাবালক৷ এটা শুধু গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান৷ সব দিতে গেলে তালিকা আরো দীর্ঘ হবে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই এইসব অপরাধ আটকাতে মৃত্যুদণ্ডের যথার্থতা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে বিভিন্ন মহলে৷

‘এটা একটা দীর্ঘ মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা যাকে বলে সিজোফেনিয়া, এর মূলে আছে সৃষ্টিতন্ত্রের কিছু অবিকশিত দিক’

পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের পূর্বতন চেয়ারম্যান সুনন্দা মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ফাঁসির মতো শর্টকার্ট সমাধানে কাজ হবার নয়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা দীর্ঘ মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, যাকে বলে সিজোফ্রেনিয়া৷ এর মূলে আছে সৃষ্টিতন্ত্রের কিছু অবিকশিত দিক৷ সেক্স সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকা৷ এর থেকে বের হতে হলে দরকার সেক্স এডুকেশন৷ নিজের দেহকে জানো, মনকে জানো৷ দ্বিতীয়ত, শিশু ধর্ষণ প্রমাণ করা সহজ নয়৷ এজন্য দরকার ফরেনসিক ল্যাব৷ একটি শিশু ধর্ষণ সম্পর্কে নিজে কিছু বলতে পারবে না৷ ঠিকমতো বোঝাতে পারবে না৷ তবুও আদালতে তাকে বারংবার জেরা করা হবে৷ তার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও এটা ঠিক নয়৷ বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার৷  যাঁরা শিশু ও মহিলাদের নিয়ে কাজ করেন তাঁরাই এটা করতে পারবেন৷''

‘‘ফাঁসির বিধান দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা একটা আলটপকা ব্যবস্থা৷ রাজনৈতিক চটজলদি সিদ্ধান্ত৷ সমাজে এক্ষেত্রে বদল আনতে গেলে প্রয়োজন গভীর বিচার-বিশ্লেষণ৷ ফাঁসির বিধান দিয়ে কিছু হবার নয়৷ বরং হিংস্রতা আরও বাড়বে৷ তাতে হবে কি, আগে শিশু বা নাবালিকাকে ধর্ষণ করতো, এখন খুন করে ছেড়ে দেবে'', ডয়চে ভেলেকে বললেন পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের প্রাক্তন প্রধান সুনন্দা মুখোপাধ্যায়৷

মহিলা অধিকার আন্দোলনের কর্মী তথা আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার মনে করেন,বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাবালিকা ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহ হয় আত্মীয়-পরিজন ও প্রতিবেশীদের দ্বারা৷ এখন এই ধরনের ঘটনা চেপে যাবার একটা প্রবণতা দেখা দেবে লোকলজ্জার ভয়ে৷ কাজেই ফাঁসির সাজা এর প্রতিষেধক হতে পারে না৷  ‘প্রয়াস' নামের এক এনজিওর প্রধান আমোদ কান্ত মনে করেন, বিচার ব্যবস্থার বর্তমান কাঠামোর মধ্যে ব্যতিক্রমী এবং বিরল থেকে বিরলতম ঘটনায় ফাঁসির সংস্থান আছে৷ নতুন করে ফাঁসির অধ্যাদেশ জারি করে লাভ বিশেষ হবে না৷ আসল কথা হচ্ছে, আইন কড়া করলেই লড়াই শেষ হয়ে যায় না৷ আইনের উপযুক্ত প্রয়োগ যখন ঘটে, সুফল তখনই পাওয়া যায়৷ প্রয়োগটা হবে পুলিশ প্রশাসনের স্তরে৷ তদন্ত প্রক্রিয়া দুর্বল হলে অপরাধীদের সাজা হয় না৷

সারা দেশে যখন কন্যা সন্তানের যৌন নিগ্রহ নিয়ে তোলপাড়, তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ারে একটি বেফাঁস মন্তব্য যেন আগুণে ঘি ঢেলেছে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের মতো বিরাট দেশে দু-একটা ধর্ষণের ঘটনা তো ঘটতেই পারে, তা নিয়ে এত হৈ চৈ করার কী আছে ?'' এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদীও তাঁকে এই ধরনের কথা বলতে বারণ করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান