1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একটা ডিম দিতে পারে না রাষ্ট্র?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২১ এপ্রিল ২০২২

উত্তরোত্তর জিনিসের দাম বৃদ্ধিতে স্কুলে স্কুলে মিড ডে মিলের জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকেরা। আকাশছোঁয়া খরচের যুগে কীভাবে সম্ভব মিড ডে মিল প্রকল্প চালানো?

https://p.dw.com/p/4ACbo
Indien | Mittagessen in staatlichen Grundschulen
ছবি: Payel Samanta/DW

পড়ুয়াদের বিদ্যালয়মুখী করে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সাল থেকে স্কুলে স্কুলে শুরু হয়েছে মিড ডে মিল প্রকল্প। শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি স্কুলে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করে তোলার লক্ষ্যে ভারত সরকারের এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধির বাজারে আদৌ কি পুষ্টিকর খাদ্য পাচ্ছে পড়ুয়ারা?

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট এক নম্বর সার্কেলের ভোগপুর মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩১১ জন ছাত্র পড়ে। নিম্নআয়ের এই এলাকায় স্কুলে মিড ডে মিলের ওপর নির্ভর করেন পড়ুয়ারা। মিড ডে মিলে এরা কী পাচ্ছে? মিড ডে মিলে এরা পাচ্ছে মূলত আলু সেদ্ধ, কোনোদিন আলুর সঙ্গে কুমড়ো, অন্য সবজি বা সয়াবিন বা একদিন হয়তো ডাল। তবে ডাল প্রায় হারিয়ে যাওয়ার মুখে। এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক আনন্দ হান্ডা বলেন, "ডিম দেওয়া কোনোমতেই সম্ভব নয়। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া, অথচ সরকার মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ বাড়ায়নি।"

এই ছবি কেবল একটি স্কুলের নয়। জেলায় জেলায় গ্রামে গ্রামে এই ছবি। সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, "যখনই আমরা ছেলেমেয়েদের একটা ডিম খাওয়াব ভাবি, তখন ভাবতে হয় সাড়ে পাঁচ টাকায় ডিম কিনবার পরে বাকি পয়সায় রান্নার বাকি সরঞ্জাম আয়োজন কার্যত অসম্ভব। স্কুলের ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাউন্ট যা অন্য কাজে ব্যবহার করার কথা, তাতে হাত পড়ে যাচ্ছে।" পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়ক বলেন, "খুব কষ্ট করেই সপ্তাহে একদিন ডিমের বন্দোবস্ত করতে হয়। দরিদ্র, আদিবাসী এলাকা বলে এদের বোঝানোও মুশকিল যে বরাদ্দ কম। কখনো কখনো শিক্ষকদের পকেট থেকে টাকা দিতে হচ্ছে।"

পুলক রায়চৌধুরী

কিন্তু কেন এই দশা? শিক্ষকরা জানান, মিড ডে মিলের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি পড়ুয়ার জন্য বরাদ্দ চার টাকা ৯৭ পয়সা, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত সাত টাকা ৪৫ পয়সা। ষেখানে একটা ডিমের দাম পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা। আনন্দ হান্ডা বলেন, "আমরা খুব বিপদে পড়েই মিড ডে মিল চালাচ্ছি। আগে সপ্তাহে একাট করে ডিম দেওয়া হত, এখন সেটা ভাবাই যাবে না।"

পুলক বলেন, "তারওপর ধোঁয়ামুক্ত করতে বিদ্যালয়ে গ্যাস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ পড়ুয়া আমাদের স্কুলে মিড ডে মিলে অংশ নেয়। প্রতিদিন একটি করে গ্যাসের সিলিন্ডার লাগছে। সে ক্ষেত্রে যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে, আর যা বরাদ্দ, সেটা মিলছে না।"

মিড ডে মিল যেহেতু কেন্দ্রীয় প্রকল্প। তাই খরচের ৬০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র, এবং বাকি ৪০ শতাংশ দেয় রাজ্য। কিন্তু তেল, সব্জি থেকে জ্বালানি সবেরই দাম এত বেড়েছে, তাতে সরকারের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত বলেই মনে করছেন শিক্ষকরা। তাঁদের মতে, ইতিমধ্যে এ ব্যপারে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর শুরু হয়েছে। কিন্তু শিশুদের পুষ্টির কী হবে? যেখানে একটা বাচ্চার ২৪ ঘন্টায় যতটা ক্যালোরি দরকার, তার এক তৃতীয়াংশ জোগানোর কথা মিড ডে মিলের মাধ্যমে। একইরকমভাবে ২৪ ঘন্টায় তার যতটা প্রোটিন প্রয়োজন, তার অর্ধেক জোগানোর কথা এই মিড ডে মিলে। এই প্রশ্ন তুলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী। তিনি বলেন, "বাচ্চারা যাতে পুষ্টি ঠিকমতো পায়, সে জন্যই মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন ডিমই যদি না দেয়, তাহলে প্রোটিন কোথা থেকে আসবে? ফলে পুষ্টির ঘাটতির দরুণ লেখাপড়াতেও ঘাটতি হবে।"

অনেক স্কুলগুলিতে পুকুরে মাছ চাষ বা বাগানে সব্জি চাষ করে পড়ুয়াদের পুষ্টি সম্পন্ন করা হয়। পুলক রায়চৌধুরীর স্কুলেও তেমনই ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সব স্কুলে তেমন পরিকাঠামো কই?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহু শিশু অপুষ্টির ফলে মারা যায় এবং বেঁচে থাকলেও আজীবন রোগে ভোগে। ডাঃ গোস্বামীর দাবি, "মিড ডে মিলের মতো একটী গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে এতটা অবহেলা করা হচ্ছে কেন? হয় সরকার দাম নিয়ন্ত্রণ করুক নইলে মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়াক।"

Indien | Mittagessen in staatlichen Grundschulen
ছবি: Payel Samanta/DW

লকডাউনের পরে ছাত্রসংখ্যা সরকারি স্কুলে বেড়েছে। বেসরকারি স্কুলে ফি দিতে পারেনি অনেকেই, ফলে তারা সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। পাশাপাশি বহু পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছল্য কমে যাওয়ায় বাচ্চাদের মিড ডে মিলের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।

হলদিয়া গভর্মেন্ট স্পনসর্ড বিবেকানন্দ বিদ্যাভবন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডঃ হরিদাস ঘটক বলেন, "আমাদের স্কুল শহরে, প্রায় ৯০ শতাংশ পড়ুয়াদের উপস্থিতি রোজ। শহরের স্কুলের তুলনায় গ্রামের স্কুলে সমস্যাটা আরও প্রকট। আমাদের প্রতি বুধবার দিন ডিম হয়। যেখানে ছাত্রসংখ্যা অত্যন্ত কম, সেখানে মিড ডে মিল চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। "

দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাইমারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অজিত নায়েক এ ব্যাপারে শুধু বলেন, "ব্যাপারটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করছি।"

তাহলে শিশুদের পুষ্টি কি হবে না? বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা সমাধানের পথ বাতলেছেন। তিনি বলেন, "করোনার জন্য এতদিন স্কুলগুলিতে মিড ডে মিলের পরিবর্তে শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত অর্থের অনেকটাই খরচ হয়নি। প্রাইমারিতে ছাত্রপিছু ৫০০টাকা করে রয়ে গিয়েছে সরকারি কোষাগারে। আপার প্রাইমারিতে প্রায় দেড় হাজার টাকা করে রয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি আপার প্রাইমারিতে মাসে তিন কেজি করে চালের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার দিয়েছে দু কেজি চাল।" ফলে শিক্ষকেরা মনে করছেন, দু বছর ধরে এক কেজি করে চাল উদ্বৃত্ত থেকে গেছে রাজ্যের গোডাউনে। এসব গরিব ছাত্রদের হাতে গেলে তারা পুষ্টিকর খাদ্য খেতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য