প্লাস্টিকের বোতলে ঘরের বাগান
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ট্রাকের মাল ঢাকার পুরানো চাদর থেকে ব্যাগ, সাইকেলের টায়ারের টিউব দিয়ে বেল্ট অথবা পুরানো পর্দা দিয়ে মানিব্যাগ৷ আবর্জনা এড়ানোর সৃজনশীল প্রচেষ্টা বা ‘আপসাইক্লিং'-এর কদর বাড়ছে৷ এর ফলে পরিবেশ সংরক্ষণও হচ্ছে৷
ম্যুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ুলিয়া সালোমন এক অভিনব কায়দায় ঠিক সেই কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আপসাইক্লিং-এর অর্থ হলো, যে সব বস্তুর মূল কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে, সেগুলিকে নতুন করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা৷ তখন একেবারে অন্য রূপে সেটি ব্যবহার করা যায়৷ তাই আপসাইক্লিং কোনো বস্তুকে নতুন মাত্রা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই রূপান্তর দেখতেও ভালো হয়৷''
ইয়ুলিয়া সালোমন চতুর্থ সেমেস্টারে পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ ইন্টারনেটে তিনি আপসাইক্লিং-এর এক বিশেষ স্বাস্থ্যকর রূপ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন৷ তার আওতায় পুরানো প্লাস্টিক বোতলকে মিনি-বাগানে পরিণত করা যায়, তার মধ্যে চাষ করা যায়৷ ইয়ুলিয়া বলেন, ‘‘বোতল আসলে আপসাইক্লিং বাগানের জন্য খুবই উপযুক্ত৷ সেগুলি এমনভাবে সাজানো যায়, যাতে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানিও রিসাইকেল করা যায়৷ ফলে বাড়ির মধ্যে আর্দ্রতাও এড়ানো সম্ভব৷ যে কোনো ছোট রান্নাঘরেই এমন ঝুলন্ত বাগান করা যায়৷''
অত্যন্ত ছোট ঘরেও এমন বোতলের বাগান বেড়ে উঠতে পারে৷ শীতকালে রান্নাঘরে, গরমকালে বারান্দায়৷ বোতলে গজিয়ে ওঠা শাকসবজি, ফল ও তৃণগুল্ম পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর ও তাজা খাদ্যের উৎস হতে পারে৷ যে সব দেশে প্লাস্টিক বোতল পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই, সেখানে এমন বাগান বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে৷ ইয়ুলিয়া সালোমন বলেন, ‘‘যে সব দেশে খালি বোতল ফেরত দিয়ে পয়সা পাওয়া যায় না, সেখানে এই ব্যবস্থা খুবই কাজে লাগতে পারে৷ সে কারণেই এই সব বোতল পুনর্ব্যবহার করে তার মধ্যে নিজের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা উচিত৷ এর ফলে কিছুটা খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যায়৷''
এই ব্যবস্থার আওতায় প্রায় একই মাপের পাঁচটি বোতল গাছের টব হিসেবে প্রস্তুত করতে হয়৷ সবচেয়ে উপরের বোতলে পানি ঢাললেই চলে৷ সেই পানি উপরের বোতলের ছিদ্র দিয়ে নীচেরগুলিতে নামতে থাকে৷ সবচেয়ে নীচেরটিতে বাড়তি পানি জমা হলে তা আবার উপরে ঢেলে দেওয়া যায়৷
এমন বোতল কীভাবে প্রস্তুত করতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বাগানে ইউলিয়া তাঁর বন্ধুদের হাতেনাতে তা দেখিয়ে দিচ্ছেন৷
শুধু সবচেয়ে উপরের বোতলের নীচের অংশ কেটে ফেলতে হয়৷ ছিপির উপর গর্ত করা হয়৷ এবার প্রথম বোতলটি পরেরটির মধ্যে গুঁজে দেওয়া হয়৷ দ্বিতীয় বোতলে কয়েকটি জানালা করে তাতে তুলসি বা স্ট্রবেরির মতো গাছ লাগানো যায়৷
শেষে সব বোতল উলটো করে দড়ি দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে বেঁধে ঝোলানো হয়, যাতে ছিপির দিকটা নীচে থাকে৷ তারপর তাতে মাটি ও চারাগাছ ভরে দেওয়া হয়৷ ইয়ুলিয়া সালোমন বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভালো মিশ্র জৈব সার, যা কাছের অরগ্যানিক খামারেই পাওয়া যায়৷ অথবা বাসায় জৈব সার তৈরির ব্যবস্থা থাকলে তো কথাই নেই৷ পুষ্টিভরা মাটি ব্যবহার করলে ভালো৷ গাছপালা সেটা বেশি পছন্দ করে৷''
তবে শুধু পুরানো প্লাস্টিকের বোতলই এমন বাগানের জন্য উপযুক্ত নয়৷ দুধের টেট্রা প্যাক-ও আপসাইক্লিং-এর মাধ্যমে এমন বাগানের কাজে লাগানো যায়৷
আবর্জনা বা পুরানো জুতোর মতো বাতিল হয়ে যাওয়া জিনিসপত্রও পুনর্ববহার করে নতুন ভাবে কাজে লাগানো যায়৷ পরিবেশের উপকার হয়, কাজটা করতে মজাও লাগে৷ ইয়ুলিয়া বলেন, ‘‘অবশ্যই নিজে চাষ করলে সেই খাদ্যের স্বাদ অনেক ভালো হবে৷ তার একটা আলাদা মূল্য রয়েছে৷ অন্য যে কোনো খাদ্যের তুলনায় মানুষ সেটা অনেক বেশি উপভোগ করে৷''
অপুষ্টির সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা এমন সহজ ও কার্যকর কন্টেইনার বাগান কাজে লাগাতে চান৷ সেই কাজের ফল সবাই পেতে পারে৷
মার্টিন রিবে/এসবি
দেবারতি গুহ