1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্ন-উত্তরে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার প্রেক্ষাপট

২৮ জানুয়ারি ২০১০

১৯৯৮ সালের ৮ই নভেম্বর ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক এক রায়৷ তৎকালীন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন৷

https://p.dw.com/p/LiTy
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানছবি: AP

রায়ে কি বলা হয় ?

রায়ে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট ভোর ৫টার দিকে ধানমণ্ডির নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু, তাঁর আত্মীয়স্বজন ও অন্যদের ষড়যন্ত্র ও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল এবং সেই অপরাধে খুনিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷ এছাড়া রায়ে আরো বলা হয় যে, ১৫ই অগাস্টের ঐ ঘটনার পর কোনো কোনো আসামি দেশে এবং বিদেশে নিজেদের খুনি হিসেবে পরিচয় দিয়ে দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছে৷ এ ঘটনা কেবল নৃশংস নয়, বরং ব্যক্তি বিশেষ তো বটেই, সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষেও মারাত্মক এক ক্ষতি৷ সুতরাং, তাদের প্রতি কোনো রকম সহানুভূতি ও অনুকম্পা প্রদর্শনের যুক্তি নেই৷ তাছাড়া, অনুকম্পা পাওয়ার কোনো যোগ্যতাও নেই তাদের৷ তাই এ অপরাধের জন্য তাদের প্রত্যেককে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো৷

রায়ে কি কোন সন্দেহভাজনকেই অব্যাহতি দেওয়া হয় নি ?

রায়ে আসামি তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার, দফাদার মারফত আলী এবং এল ডি আবুল হাশেম মৃধার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায়, তাদের এর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷

২০০০ সালের ১৪ই ডিসেম্বর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ কি ধরণের রায় দেয় ?

বিচারপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও, অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জন আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন৷ ২০০১ সালের ৩০শে এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম তাঁর রায়ে ১২ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন৷ মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা কারাবন্দি চার আসামি বজলুল হুদা, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদ একই বছর আপিল দায়ের করে৷ যা আপিল বিভাগ ২০০৭ সালের ২৩শে সেপেম্বর শুনানির জন্য আবেদন গ্রহণ করে৷ পরে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় দীর্ঘদিন আপিল শুনানি ঝুলে ছিল৷ কিন্তু, গত ৪ঠা অক্টোবর আপিলের শুনানি আবারো শুরু হয়৷ ১৫ই অক্টোবর থেকে শুরু হয় যুক্তিতর্ক আর শুনানি শেষ হয় গত বছরের ১২ই নভেম্বর৷

এরপর কি হয় ?

বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আটক পাঁচ আসামির আপিলের রায় রিভিউ-এর আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিমকোর্ট৷ প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ তাফাজ্জাল ইসলামের এই আদেশ দেন৷ ফলে কারাগারে আটক আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকে না৷ বলা হয়, ৩১শে জানুয়ারি মধ্যে কারাগারে আটক আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে৷ আর তারপরেই বুধবার এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়৷ তবে ফাঁসির অপর সাতজন আসামি এখনও পলাতক থাকায়, তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে৷

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে ৩৮ বছর লেগে গেল কেন ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এর মূলে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক হানাহানি৷ ৭৫-এর পট-পরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি দু-ভাগে বিভক্ত৷ স্বাধীনতার পক্ষে এবং বিপক্ষের শক্তি এবং বর্তমান রাজনীতি যেভাবে দুই শিবিরে বিভক্ত - আর তারই পরোক্ষ ফল এই দীর্ঘসূত্রিতা৷

প্রতিবেদক : দেবারতি গুহ

সম্পাদনা : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়