প্রযুক্তির কল্যাণে চোরেদের মাথায় হাত
২১ আগস্ট ২০১৭সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ট্রাক ড্রাইভারদের মনে চুরি অথবা ডাকাতির ভয় জাগে৷ ট্রাক বোঝাই মালপত্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো তাঁদেরই হাতে! টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার অলিভার মেচকে বলেন, ‘‘ট্রাকে ভরা মালপত্র শুধু এক তিরপল দিয়ে ঢেকে অত্যন্ত প্রাচীন পদ্ধতিতে সুরক্ষিত রাখা হয়৷ কাঁচি বা ছুরি দিয়ে কেটে ফেললেই মালপত্র নাগালে চলে আসে৷'' আরেক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাউকে হেন্শ বলেন, ‘‘আজ সব মানুষের নিরাপত্তার চাহিদা রয়েছে৷ বেড়ে চলা অপরাধের প্রেক্ষাপটে সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে৷''
তন্তু ও টেক্সটাইলের বিশেষ প্রয়োগ সম্পর্কে এঁরা দু'জনই বিশেষজ্ঞ৷ পরিবহণ ক্ষেত্রের জন্য তাঁরা এমন তিরপল তৈরি করছেন, যা চুরি বন্ধ করবে৷ সেটি ছিঁড়ে ফেললেই অ্যালার্ম বাজবে৷ শুনতে সহজ মনে হলেও এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া৷ ফ্রাউকে হেন্শ বলেন, ‘‘শুরুতে আমরা সাধারণ তামার তার কাপড়ের মধ্যে বুনে দিয়েছিলাম৷ তামা ও অন্য তার ব্যবহার করতে পেরে আমরা গ্রিড ও গড় মাপও স্থির করতে পারলাম৷''
বিশেষভাবে প্রস্তুত করা তাঁত যন্ত্র সর্বোচ্চ ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ সেন্টিমিটার প্রস্থের গ্রিডের মধ্যে তামার তার বসাতে পারে৷ সেই তার বিদ্যুৎ বহন করতে পারে৷ অর্থাৎ ছুরি চালালে তার নষ্ট হবেই এবং তখন সতর্কবার্তা চলে যাবে৷ আসল চ্যালেঞ্জ হলো এই তন্তুর সঙ্গে অ্যালার্ম ব্যবস্থা যুক্ত করা৷ অলিভার মেচকে বলেন, ‘‘এটাই আসল সমস্যা৷ টেক্সটাইলের মধ্যে কন্ডাকটার পাথ ও চিপের মতো ইলেকট্রনিক উপকরণ ঢোকাতে হবে৷ অর্থাৎ টেক্সটাইলের উপর চিপ প্রয়োগ করতে হবে এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে৷ এখনো পর্যন্ত টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিক্স দুই ভিন্ন জগৎ ছিল৷''
টেক্সটাইল নরম, তার বেশ শক্ত৷ কাপড় ধোয়া যায়, কিন্তু ইলেকট্রনিক উপকরণ ধোয়া চলে না৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে৷ চিপ কীভাবে বসানো হবে? সোল্ডারিং করে, বুনে দিয়ে, ওয়েল্ডিং করে নাকি আঠা দিয়ে? কীভাবে সেটি ওয়াটারপ্রুফ করে তোলা যাবে? আবহাওয়ার চরম তারতম্য ও ৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রার ফারাক সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে৷ পদার্থবিদ ক্রিস্টিনে কালমায়ার বলেন, ‘‘কাপড়ের তিরপলের সহ্যশক্তির সঙ্গে ইলেকট্রনিক উপকরণকে পাল্লা দিতে হবে৷ এক্ষেত্রে কাপড় ধোয়ার প্রক্রিয়া বড় চ্যালেঞ্জ৷ বিস্ময়কর মনে হলেও পানি অথবা সাবান ক্ষতি করে না, ওয়াশিং মেশিনের ওয়াশ টাবের ঘোরার প্রক্রিয়াই আসল সমস্যা৷'' ১,০০০ ঘণ্টার চরম অবস্থা, ৮৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা ও বাতাসে ৮৫ শতাংশ আর্দ্রতা সহ্য করার ক্ষমতা আজ আর কোনো সমস্যা নয়৷ এমন হাইটেক তিরপল চোরেদের দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে৷ সেটি ছিঁড়লেই চালকের আসন অথবা নিরাপত্তা সংস্থার দপ্তরে অ্যালার্ম বেজে ওঠে৷ এই তিরপল ব্যবহার করে ট্রাক ড্রাইভাররা বিশ্রাম করার সময় নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন৷