1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবেশিকা পরীক্ষা ঠেকাতে আদালতে বিরোধী রাজ্যগুলি

২৬ আগস্ট ২০২০

কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পরীক্ষা দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে বিরোধী সাসিত রাজ্যগুলি সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে।

https://p.dw.com/p/3hW6E
ছবি: Imago/Hindustan Times

ভারতে করোনাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পরীক্ষা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি। সোনিয়া গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপরই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর জন্য রাজ্যের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি বিরোধী শাসিত রাজ্যও তাতে যোগ দেবে। এর পাশাপাশি বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে কালো পতাকা লাগাবেন এবং কালো ব্যাজ পরে বিক্ষোভ দেখাবেন।  

ভার্চুয়াল বৈঠকেই ঠিক হয়, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের বিষয় নিয়ে  করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের রাস্তায় যাবে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি।  বৈঠক থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন এই পরীক্ষা পিছিয়ে দেন। কারণ, করোনাকালে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।  মোট সাতজন মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে ছিলেন। সকলেই দাবি করেন, পরীক্ষা পিছতে হবে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেন, ''আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা কেন্দ্রকে ভয় পাব না কি তার সঙ্গে লড়াই করব। ওরা যা কিছু করবে সেটা পূণ্য, আমরা করলেই পাপ?'' সোনিয়া বলেন, কেন্দ্র তো রাজ্যগুলিকে জিএসটির প্রাপ্য টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে না। 

পরামর্শটা দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি ছিল, করোনাকালে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষাকে সব চেয়ে গুরুত্ব দেয়া হোক। তাই পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পরীক্ষা বন্ধ হোক। পরীক্ষা নিতে হলে অনলাইনে নেয়া হোক। জোরালোভাবে এই দাবি তুলে ভর্তির পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য সরকারের ওপর চাপ দেয়া দরকার। মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকে পরীক্ষা বন্ধের দাবি তোলা হোক। সোনিয়া এই দাবি মেনে নেন। তাই মমতা ও সোনিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক হচ্ছে বুধবার। সেই বৈঠকেই জোরালোভাবে এই দাবি তোলা হবে।

সোনিয়া অবশ্য প্রথমে ঠিক করেছিলেন, আর্থিক দাবিদাওয়া ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। কিন্তু মমতাই তাঁকে বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেয়ার প্রতিবাদ করছেন ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মা-রা। তাঁরা মনে করছেন, এই সময় পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেয়া মানে বাচ্চাদের করোনার মুখে ঠেলে দেয়া। মমতা নিজে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। পরীক্ষা বন্ধের দাবিও করেছেন। মমতার প্রস্তাব ছিল, করোনাকালে বৈঠক যখন হচ্ছে, তখন তা লোকের সমস্যা নিয়ে হোক। অর্থনীতি নিয়ে বৈঠক যে কোনো সময় হতে পারে।

করোনায় শিক্ষার্থীরা এখন কর্মজীবী

এই প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান সোনিয়া। এই বৈঠকের যুগ্ম আহ্বায়ক মমতা ও সোনিয়া। ডাক্তারিতে ভর্তির পরীক্ষার নাম এনইইটি। সেখানে এই বছর প্রায় ১৬ লাখ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দেবে। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পরীক্ষা জেইই মেন দেবে ৮ লাখ ৫৮ হাজার জন। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা বিপুল। আর এটা পুরো দেশের সমস্যা। তাই এ নিয়ে দাবি জানালে সারা দেশের লোকের কাছে তা পৌঁছবে।

বিরোধীদের কথার মধ্যে যুক্তিও আছে। করোনার ভয়ে স্কুল, কলেজ সব বন্ধ। কলেজের পরীক্ষা অনলাইন হচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ওপেন বুক পরীক্ষা নিয়েছে। মানে অনলাইনে প্রশ্নপত্র আপলোড করে দেয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে বসে উত্তর লিখে অনলাইনে তা পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা স্নাতকোত্তর ও আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে চান, তাঁদের পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হবে। তবে সেই সংখ্যাটা তুলনায় অনেক কম।

কিন্তু মোদী সরকার বিরোধীদের দাবি মানতে রাজি নয়। তারা এই পরীক্ষা নিতে বদ্ধপরিকর। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক দূরদর্শনেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ''ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের বাবা-মা-রাই এতদিন ধরে প্রশ্ন করছিলেন, কেন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী অ্যাডমিট কার্ড তুলে নিয়েছে।'' নিশাঙ্ক বলেছেন, ''আমরা ছাত্রছাত্রীদের পাশে আছি। ওদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেব। ওদের শিক্ষার বিষয়টিও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রছাত্রীদের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে যেতে হবে। নিজেদের জলের বোতল ও স্যানিটাইজারও সঙ্গে রাখতে হবে।''  

বিরোধীদের প্রশ্ন, ভারতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। পরীক্ষা হবে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। তখন করোনা পরিস্থিতি খুব ভালো হবে এমন নয়। তা হলে এত লাখ ছাত্রছাত্রীকে কেন করোনার ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হবে? কেন অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে না? কেন এ বারের মতো তাঁদের সিনিয়ার সেকেন্ডারি বা হায়ার সেকেন্ডারির ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে না?

জিএইচ/এসজি(ডিডি নিউজ, এনডিটিভি)