1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোকার কামড় থেকে মাংসে অ্যালার্জি!

১৬ ডিসেম্বর ২০২১

শরীরে আচমকা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে এবং তার প্রকৃত কারণ জানা না গেলে চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷ একদল রোগীর ক্ষেত্রে এমন সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে বিস্ময়কর উৎস খুঁজে পাওয়া গেছে৷

https://p.dw.com/p/44Kxp
Chinesische gedämpfte löwenkopf Schweinfleischbällchen
ছবি: kia cheng boon/PantherMedia/Imago Images

অতি সাধারণ এক সন্ধ্যায় ডিনারের সময় গোটা ঘটনার সূত্রপাত৷ এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রথমে ঘুমে ব্যাঘাত, তারপর শরীরে কষ্ট, পেটব্যাথা শুরু হলো৷ আসলে কী ঘটেছিল? নিজের অপ্রিয় অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্লাউডিয়া মলফেলনার বলেন, ‘‘ত্বকে ফুসকুড়ি শুরু হলে তার কারণ সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকে না৷ হৃৎপিণ্ড অস্থির হয়ে ওঠে, পেট কামড়ায় ও তারপর ডায়রিয়া শুরু হয়৷ বলা বাহুল্য তখন মনে ভয় জাগে বৈকি৷''

ক্লাউডিয়ার ধারণা, অ্যালার্জির কারণে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ কিন্তু সেই অ্যালার্জির উৎস কী? তার মতে, মাংসের মধ্যে কিছু ছিল৷ কিন্তু তাঁর ডাক্তাররা এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷

এ বিষয়ে বেশিরভাগ গবেষণার ক্ষেত্রে ইমিউনোলজিস্ট ও চিকিৎসক হিসেবে প্রোফেসর টমাস প্ল্যাটস-মিল্স-এর নাম উঠে আসে৷ তাঁর কাছে আসা বেশিরভাগ রোগীর ধারণা, মাংসের কারণেই তাঁদের অ্যালার্জি হয়েছে৷ প্রফেসর প্ল্যাটস-মিল্স মনে করেন, ‘‘আমাদের পরিচিত অবস্থার তুলনায় সেটা ছিল একেবারে ভিন্ন৷ মাংস খাবার কয়েক ঘণ্টা পর তাদের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ এর কোনো অর্থই পাওয়া যাচ্ছিল না৷''

প্ল্যাটস-মিল্স মাংসের সঙ্গে অ্যালার্জির কোনো সম্পর্ক দেখতে পাননি৷ এর পরেই আরও এক রোগীর ক্ষেত্রেও আবার মাংসের কারণে অ্যালার্জির সন্দেহ দেখা দিলো৷ কিছু ওষুধ পরীক্ষার সময়ে রোগীদের মধ্যে আচমকা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ অথচ তার আগে পর্যন্ত পরীক্ষায় কোনো সমস্যা হয়নি৷ প্রফেসর প্ল্যাটস-মিল্স শুধু হাসপাতালের কাছ থেকে প্রত্যেক রোগীর রক্তের নমুনা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন৷ এছাড়া কোনো উপায় ছিল না৷ সেই রক্তের নমুনায় তিনি শুধু ওষুধের ছোট এক অণুর বিরুদ্ধে অ্যান্ডিবডি খুঁজে পেলেন৷ সেটির নাম আলফা-গাল৷ বোঝা গেল, সেই আলফা-গালের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী৷ কিন্তু সেটি শুধু ওষুধেই প্রয়োগ করা হয় না৷

অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরেও সেটি থাকে৷ তাহলে কি মাংসের কারণে অ্যালার্জির ধারণা ঠিক? প্রো. টমাস প্ল্যাটস-মিল্স বুঝলেন যে মাংসে অ্যালার্জি সংক্রান্ত অদ্ভুত দাবি করা মানুষের শরীরে নিশ্চয় সেই অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে৷

ক্লাউডিয়ার শরীরেও আলফা-গালের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি রয়েছে৷ তিনি অবশেষে এমন এক ডাক্তারের দেখা পেলেন, যিনি প্রোফেসর প্ল্যাটস-মিল্সের কাজ সম্পর্কে জানতেন৷ তিনিই ক্লাউডিয়ার শরীরে মাংসে অ্যালার্জির প্রমাণ পেলেন৷

কিন্তু একটি হিসেব তখনো মিলছিল না৷ রোগীরা তাহলে কোনো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ছাড়াই  সারা জীবন কীভাবে মাংস খেয়ে এসেছেন? প্রো. টমাস প্ল্যাটস-মিল্স খেয়াল করলেন, যে প্রায় সব রোগী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল থেকে এসেছেন৷ তাহলে কি জায়গাটির সঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়ার কোনো সংযোগ রয়েছে? অধ্যাপক প্ল্যাটস-মিল্স জানালেন, যে তাঁরা গুগল ম্যাপে সব রকম সম্ভাব্য কারণের খোঁজ করেছিলেন৷ ছত্রাক, কীট, মানুষের আচরণ এবং অবশ্যই রোগব্যাধীর খোঁজও নেওয়া হয়েছিল৷

অবশেষে বিস্ময়কর এক মিল খুঁজে পাওয়া গেল৷ যে এলাকায় মাংসে অ্যালার্জির ঘটনা ঘটছে, ঠিক সেখানেই অন্য একটি রোগও দেখা যাচ্ছে, যার নাম ‘রকি মাউন্টেন টাইফাস'৷ টিক্স পোকা সেই রোগ বহন করে৷ প্রশ্ন হলো, সেই প্রাণীই কি মাংসে অ্যালার্জির নেপথ্যে আলফা-গালের উৎস?

গবেষকরা রোগীদের টেলিফোন করে টিক্স পোকার কামড় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন৷ দেখা গেল, মাংসে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেবার আগে সত্যি তাঁরা এই পোকার কামড় খেয়েছেন!

টিক্সের লালার মাধ্যমে আলফা-গাল মানুষের রক্তে প্রবেশ করে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা৷ তখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম সেটিকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে৷ খাদ্যের মাধ্যমে আলফা-গাল রোগীদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে প্রবেশ করলে সেটির বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ শুরু হয়৷

ইয়েন্স হানে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য