1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুরভোটে নির্দলদের রুখতে তৃণমূলের দাওয়াই বহিষ্কার 

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

তৃণমূলে টিকিট না পাওয়ায় অনেকে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন৷ জেলায় জেলায় এমনই সমস্যা শাসক দলের৷ কঠোর হাতে অসন্তোষ দমন করতে চাইছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব৷ কেন এত টিকিটপ্রার্থী নির্দল হিসেবে লড়ছেন? 

https://p.dw.com/p/47Hf7
অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে, নির্দলীয় প্রার্থীরা তৃণমূলের বাধায় মনোনয়ন দাখিল করতে পারেননি৷
অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে, নির্দলীয় প্রার্থীরা তৃণমূলের বাধায় মনোনয়ন দাখিল করতে পারেননি৷ছবি: Payel Samanta/DW

২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার ভোট৷ গত ৪ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল প্রার্থী তালিকা বের করার পরপরই শাসক দলের অন্দরে বিদ্রোহ দেখা গিয়েছে৷ বহু নেতা-নেত্রী নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তাঁদের বেশিরভাগই প্রাক্তন কাউন্সিলর, টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন৷ কেউ নিজে থেকে নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন৷ কোনো তৃণমূল নেতা আবার তাঁর অনুগামীকে গোঁজ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন৷ 

নির্দল প্রার্থীদের বড় অংশ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন৷ তবে অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে, নির্দলরা তৃণমূলের বাধায় মনোনয়ন দাখিল করতে পারেননি৷ যদিও নির্দল প্রার্থীদের আটকানো যায়নি৷ তাঁরা মনোনয়ন পেশ করেছেন অধিকাংশ স্থানে, দেওয়াল লিখনের পাশাপাশি প্রচার চালাচ্ছেন পুরোদমে৷  

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তৃণমূল কড়া বার্তা দিয়েছে৷ মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে ফিরহাদ হাকিম বিক্ষুব্ধদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ তাতেও অনেক জায়গায় ফল না মেলায় শীর্ষ নেতৃত্ব বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ নির্দেশ না মানায় দলবিরোধী কাজ করার অভিযোগে পুরুলিয়া, বীরভূম, নদিয়া, কোচবিহার, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো কয়েকটি জেলা থেকে প্রায় ৭০ জনকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ এর মধ্যে নির্দল প্রার্থীদের পাশাপাশি রয়েছেন স্থানীয় স্তরের নেতারাও৷ 

এই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি যেহেতু এখনও অনেকে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে রয়েছেন৷ নির্দল প্রার্থীদের আটকাতে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে জেলায় জেলায়৷ কী বলা হয়েছে নির্দেশিকায়? দুদিনের মধ্যে প্রার্থিপদ ছাড়তে হবে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দলদের এবং সঙ্গে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে নামতে হবে৷ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গিয়েছে৷ সুতরাং বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীর নাম থাকবে৷ সেক্ষেত্রে লিফলেট বিলি করে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব৷ নির্দেশ অমান্য করে ভোটে লড়লে দল তা বরদাস্ত করবে না৷ 

রাজনীতি শুধু জনসেবা নয়, টাকা রোজগারের উপায়ও: নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়

হুঁশিয়ারিতে অনেক জায়গায় কাজও হচ্ছে৷ আলিপুরদুয়ারে অনেক নির্দল প্রার্থী ভোটে না লড়ার অঙ্গীকারপত্র দিচ্ছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে৷ উত্তর ২৪ পরগনার ২৫টি পুরসভায় শাসক দলের ৫৭ জন নির্দল হয়ে ভোটে লড়তে নেমেছিলেন৷ কিন্ত বহিষ্কারের নির্দেশে তাঁদের ২৮ জন সরে আসতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে খবর৷ জেলায় জেলায় এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ 

তৃণমূলের আশঙ্কা কোথায়? নির্দল প্রার্থীর জন্য ভোট কাটাকুটি হলে অনেক ওয়ার্ড হাতছাড়া হতে পারে৷ এমনকী পুর বোর্ডও হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ সেই আশঙ্কা দূর করতে চাইছে তৃণমূল৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দল প্রার্থী জিতলে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান অনেক কমে যাবে৷ ভোট কাটাকুটি হবে৷ বিপুল জয়ের ব্যবধান না হলে রাজ্য বিরোধীহীন দেখানো যাবে না৷’’

তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোটের ব্যবধান যদি কমে যায়, তাহলে তা বিরোধী অস্তিত্বের জানান দেবে৷ তাই কেউ যদি নির্দল হয়ে লড়েন, শাসক দল তাঁকে সরিয়ে দিতে চাইবে৷’’ 

ইতিমধ্যে কলকাতা-সহ পাঁচটি পুরনিগমের ভোট মিটেছে৷ বিধাননগর পুরনিগমে নির্দল প্রার্থীর কাছে হেরেছেন এক তৃণমূল প্রার্থী৷ এক হাজারের বেশি ভোটে নির্দল মমতা মণ্ডল জিতেছেন৷ তৃণমূলের স্থানীয় নেতা মমতাকে বহিষ্কার করা হলেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তিনি৷ আগামী দিনে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন নাকি নির্দল হয়েই থাকবেন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে৷ 

টিকিট না পেলে শুধু কি রাজনৈতিক কারণেই বিক্ষুব্ধরা ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ছেন? এর নেপথ্যে অর্থনৈতিক কারণও দেখছেন নীলাদ্রি৷ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ৷ রাজনীতির মাধ্যমে এ রাজ্যে মানুষ রোজগার করতে চায়৷ দল যখন প্রার্থী করছে না, তখন রোজগার কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ রাজনীতি শুধু জনসেবা নয়, টাকা রোজগারের উপায়ও৷ নির্দল হয়ে জিতে আবার দলে ফিরে আসবেন নেতারা৷’’ তা হলে যাঁরা এরই মধ্যে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য বহিষ্কৃত, তাঁরা জিতলে কি তৃণমূল দলে ফিরিয়ে নেবে?