1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিএসসির প্রশ্নফাঁসে আরও বর্তমান, সাবেক কর্মকর্তার নাম

১১ জুলাই ২০২৪

সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আরও কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা জড়িত বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/4i9UT
একটি দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশ (ফাইল ফটো)
সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)-র আরো কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা জড়িত বলে জানা গেছেছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে পিএসসির একজন শীর্ষ ও একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে বিস্তারিত তথ্য থাকলেও স্বাধীনভাবে তথ্য যাচাই করতে না পারায় তাদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে৷ সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগে শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরকারি অফিসে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল৷ পরে তাকে পিএসসিতে বদলি করা হয়৷

গত রোববার ও সোমবার রাজধানী থেকে পিএসসির পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৭ জনকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য সামনে আসে৷

গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের খবর পাওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইড৷ এ ঘটনায় সোমবার রাতে পিএসসির সাবেক এক সহকারী পরিচালকসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা করা হয়৷

গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত করেছে পিএসসি৷ গ্রেপ্তারকৃত ১৭ জনের মধ্যে ছয় জন মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷

দুর্নীতি দমন কমিশনে পিএসসি' চিঠি

এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গ্রেপ্তার পিএসসির পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছে পিএসসি৷ ওই পাঁচ জন হলেন উপ-পরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডিসপ্যাচ রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম৷ তাদের সম্পদের বিষয়ে দুদককে জানাতেও বলেছে পিএসসি৷

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পিএসসি থেকে দুদকের সচিব বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়৷ পিএসসির প্রশাসন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জামিলা শবনম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র প্রকাশ এবং বিতরণ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী হিসেবে অপরাধ সংঘটনে জড়িত অভিযোগে কর্ম কমিশনের পাঁচজনসহ অন্যদের আসামি করে পল্টন থানার মামলা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে পাঁচজন কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন৷ তাদের নিজ নামে ও তাদের পরিবারের সদস্যের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত ও তাঁদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন মর্মে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে৷ এভাবে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অর্জন দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে অপরাধ হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তপূর্বক উপযুক্ত আদালতে বিচারার্থ মামলা করার লক্ষ্যে সাক্ষ্যপ্রমাণাদি সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন৷ তাই এসব অভিযোগ তদন্ত করে কমিশনকে অবহিত করতে অনুরোধ করেছে সংস্থাটি৷

প্রশ্নপত্র ফাঁসে গ্রেপ্তার উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির এবং পিএসসির কর্মচারী ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামসহ পাঁচজনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পিএসসি৷ওই পাঁচজনকে চাকরি আইন অনুসারে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তারা বিধি অনুসারে খোরপোষ ভাতা পাবেন৷

এ মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চাকরিচ্যুত সৈয়দ আবেদ আলী, খলিলুর রহমান, সাজেদুল ইসলাম, মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন, ব্যবসায়ী সাইম হোসেন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিটন সরকার৷

আর কারাগারে থারা ১০ আসামি হলেন আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান, মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, মো. আলমগীর কবির, সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশিদ, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাপ্রহরী মো. শাহাদত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নিয়ামুল হাসান ও জাহিদুল ইসলাম৷

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর গত রোববার পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সেখানে পিএসসির কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়৷ তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, পিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই এই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অর্থ নিতেন৷ ৫ জুলাই (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন তারা৷ চক্রের সদস্যরা ওই পরীক্ষার আগের রাতে তাঁদের চুক্তি করা শিক্ষার্থীদের অজ্ঞাতনামা স্থানে রেখে ওই প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর দিয়ে দেন৷

এদিকে পিএসসির চাকরিচ্যুত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ আরও কয়েকজন আসামি জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ৫ জুলাইয়ের নিয়োগ পরীক্ষার দুই রাত আগে চাকরিপ্রার্থীদের ‘রিডিং বুথে' আনা হয়েছিল৷ ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করাতে চাকরিপ্রার্থীদের সাভারে একটি ভাড়া বাসা ও রাজধানীর পল্টনে একটি ঘরে আটকে রাখা হতো৷

রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে৷ কেবল এই ছয়জনই নন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হিসেবে পিএসসির আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম সামনে এসেছে; যারা বিভিন্ন সময় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন৷ আবার অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকও আছেন৷

পিএসসি সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে এই পাঁচজনকেই একসময় চাকরিচ্যুত করেছিল পিএসসি৷

এপিবি/কেএম (ডেইলি স্টার বাংলা ও দৈনিক প্রথম আলো)