1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাড়ায় শিক্ষালয় নাকি বিদ্যালয়ে শিক্ষা: পশ্চিমবঙ্গে বিতর্ক

২৯ জানুয়ারি ২০২২

মহামারির দাপটে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা তলানিতে ঠেকেছে৷ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলের বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠছে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’৷ ভারতে এমন উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গেই নেওয়া হলো প্রথম৷

https://p.dw.com/p/46Fti
প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উন্মুক্ত পরিবেশে পাঠদানের প্রক্রিয়া শুরু হবেছবি: Payel Samanta/DW

যদিও কোভিড পরিস্থিতিতে বারবার আইসিএমআর, ইউনিসেফ, ডাব্লিউএইচও, বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তরফে স্কুল খুলে দেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল৷ এবার সরকারের নির্দেশে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য এবার স্কুলের সময়ে পাড়ার খোলা জায়গায় উন্মুক্ত পরিবেশে পাঠদানের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ পঞ্চায়েত, ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটি এর দায়িত্বে থাকবে৷ প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকা, পার্শ্বশিক্ষক এবং শিক্ষা সহায়করা এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশ ও পাঠক্রম মেনে ক্লাস করবেন বলে জানা গিয়েছে৷

কিন্তু এতেই আপত্তি শিক্ষামহল এবং শিক্ষকসংগঠনগুলির একাংশের৷ তারা স্কুল খোলার দাবি জানিয়েছেন৷ কিন্তু কেন? তাদের বক্তব্য, রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের গাইডলাইনে যে নির্দেশ অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে, তাতে পড়ুয়াদের শৌচালয়ের কথা বলা হয়নি৷ এমনিতেই পঞ্চায়েতের ওপর প্রচুর কাজের চাপ, এই বাড়তি চাপ তারা নিতে পারবেন তো? গাইডলাইনের নির্দেশ মতো ছাউনি, জলের ব্যবস্থা করারও তো বিপুল খরচ, তাছাড়া সর্বত্র তা করা অসম্ভব৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগেই বা কী হবে? বরং স্কুলে এসবের ব্যবস্থাই তো রয়েছে৷ তাহলে স্কুল খোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন?

সব অনুকূলে হলে স্কুল অবশ্যই খোলা হবে: অজিত নায়েক

সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বলেছেন এ রাজ্যে ৫০ হাজারের উপর প্রাথমিক স্কুল, ১৫,৫৯৯টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, ১ লক্ষ ৮৪ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক, ২১ হাজার প্যারাটিচার, ৩৮ হাজার সহায়ক-সহায়িকা রয়েছে৷ এত বড় গর্বের পরিকাঠামো ব্যবহার করে, কোভিডবিধির গাইডলাইন মেনে, প্রয়োজনে পড়ুয়াদের পালা করে এনে স্কুলেই এই শিক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিল৷ বরং শিক্ষা দেওয়ার সেই কাজটাই সহজতর হত৷’’

যদিও স্কুল খোলা নিয়ে এখনই কথা বলতে নারাজ রাজ্য সরকার৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রাইমারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অজিত নায়েক বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন সব অনুকূলে হলে স্কুল অবশ্যই খোলা হবে৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷’’

এতেই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষানুরাগীরা৷ অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স এন্ড হেডমিস্ট্রেস সংগঠনের সভাপতি ডঃ হরিদাস ঘটক বলেন, ‘‘শপিং মল, বাজার সব খোলা আছে যখন স্কুল খোলার অসুবিধা কোথায়? অভিভাবক এবং শিক্ষকরাও তাই চাইছেন৷ স্কুলের পরিবেশ, ক্লাস টিচিংয়ের বিকল্প হয় না৷’’

সত্যিই কি ক্লাস টিচিংয়ের বিকল্প হয় না? তাহলে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে গাছের তলায় পড়াশুনোর চল শুরু করেছিলেন? সরকারের তরফে এই প্রশ্ন তোলেন অজিত নায়েক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সৌভাগ্যবান যে বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতনের মতো গাছের তলায় পড়াশুনো করার সুযোগ চালু হতে চলেছে৷ দুটো স্লটে ভাগ করা হবে পঠনপাঠন৷ শৌচাগার বা অনান্য কিছুরও সাময়িক ব্যবস্থা থাকবে৷ তবে শিক্ষকদের অনুরোধ করব, প্রশ্ন না তুলে কোভিড পরিস্থিতিতে ছাত্রদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় নজর দিন৷’’

‘ব্যবসা সফল হবে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা পঙ্গু হলে’

শিক্ষক সংগঠনগুলির অনেকের অভিযোগ, রাজ্য সরকার করোনা সংক্রমণের অজুহাতে স্কুল বন্ধ রেখে বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পথেই প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে চাইছে৷ বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা বলেন, ‘‘লকডাউনে অভিভাবকেরা কাজ হারিয়েছেন, ফলে বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর সামর্থ তাদের নেই৷ এতেই তিন বছরে ৬ লক্ষ পড়ুয়া বেড়েছে প্রাইমারি স্কুলে৷ ফলে ৩০:১ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে ২০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে এখনই৷ উপরন্তু এই ছাত্রদের জন্য মিড-ডে মিল, জামা জুতো ছাতা দিতে হবে৷ স্কুল যদি না খোলে তাহলে এসব খরচ নেই৷’’ পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষা ব্যবস্থায় আস্থা নেই অভিভাবকদের৷ সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে অভিভাবকরা ফের বাচ্চাদের বেসরকারি স্কুলেই পড়াতে নিয়ে যাবেন৷ অনলাইন শিক্ষা চালু করার জন্য নানা অ্যাপস চালু হয়েছে৷ দুই ক্ষেত্রেই ব্যবসা সফল হবে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা পঙ্গু হলে৷’’

ইতিমধ্যে দু'বছর বিদ্যালয় বন্ধ রাখার ফলে স্কুলছুট বেড়েছে৷ বেড়েছে পড়ুয়াদের ঘাটতি৷ তাই স্কুল খোলা এবং পাড়ায় শিক্ষালয় দুটোকেই একসঙ্গে স্বাগত জানাচ্ছেন সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী৷ তারা ‘মিনি ক্লাসরুম’ নামে খেলার মাঠে, গাছের তলায় শিক্ষাদানের কাজ শুরু করে দিয়েছেন৷ তার মতে, ‘‘প্রাইমারি এবং আপার প্রাইমারির পড়ুয়ারা এত পিছিয়ে রয়েছে যে অতিরিক্ত পাঠদানের মাধ্যমে তাদের ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ তাই স্কুল খুলে গেলেও আমাদের অতিরিক্ত শিখন সহায়তা হিসেবে মিনি ক্লাসরুম চলবে৷’’

গত বছরের নভেম্বরের ছবিঘর দেখুন...

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান