পাহাড়ের গুহায় জ্বালানি উৎপাদন
৯ জানুয়ারি ২০১৮ভবিষ্যতে জ্বালানি সরবরাহের অভিনব এক পথ প্রদর্শন করছেন দুই গবেষক৷ সুইজারল্যান্ডের দক্ষিণে তিচিনো অঞ্চলে তাঁরা জ্বালানি সংরক্ষণের এক নতুন প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছেন৷ এক পরিত্যক্ত সুড়ঙ্গে তাঁরা এক কমপ্রেস্ড এয়ার স্টোরেজ তৈরি করেছেন৷ টিলার গভীরে এই ভাণ্ডারে জ্বালানি কমপ্রেস্ড এয়ারের রূপে জমা রাখা সম্ভব৷ আলাকায়েস কোম্পানির গিভ সানগানে বলেন, ‘‘আমাদের আইডিয়া প্রয়োগ করতে গেলে চাই গুহার মধ্যে কমপ্রেস্ড পরিবেশ৷ এই গুহা ব্যবহারের সুযোগ আদর্শ পরিবেশ এনে দিয়েছে৷ গোটা পাহাড়টিকেই স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে৷''
এই প্রক্রিয়ার আওতায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে একটি গুহার মধ্যে এয়ার কম্প্রেশন করা হয়৷ প্রয়োজনে সেই বাতাস বার হতে দিলে তা দিয়ে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব৷ জ্বালানি সংরক্ষণের লক্ষ্যে দ্রুত নতুন পদ্ধতির খোঁজ চলছে৷ কারণ বাতাস না থাকলে বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলতে পারে না৷ অথবা সূর্যের আলো ছাড়া সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রও চলে না৷
এতকাল পাম্প স্টোরেজ প্লান্ট বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কে জ্বালানি যোগানের তারতম্য সামলে এসেছে৷ তবে কমপ্রেস্ড এয়ার স্টোরেজের বাড়তি সুবিধা রয়েছে৷ গিভ সানগানে বলেন, ‘‘পাম্প স্টোরেজ প্লান্টের তুলনায় আমাদের ব্যয় প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম৷ তাছাড়া প্রকৃতির ক্ষতি করে আমাদের কোনো বড় বাঁধ বা জলাধার তৈরি করতে হয় না৷ সবকিছুই পাহাড়ের মধ্যেই তৈরি করা হয়৷ ফলে শুধু অর্থনৈতিক সুবিধার কারণে নয়, পরিবেশের জন্যও এটা ভালো৷''
প্রায় কোনো অংশই বাইরে চোখে পড়ে না৷ নির্মাণের কাজও যথেষ্ট পরিমিত৷ গিভ সানগানে বলেন, ‘‘৫ মিটার দীর্ঘ সিমেন্টের তৈরি কোন গুহার মধ্যে চাপ ধরে রাখে৷ ডানদিকে ইস্পাতের তৈরি দুর্ভেদ্য দরজা৷ পাহাড়ের মধ্যেও কোনো ফাঁকফোকর নেই৷ পাহাড় থেকে অবিরত পানি ঢুকছে, অর্থাৎ কোনো বাতাস বার হচ্ছে না৷''
গুহার মধ্যে প্লান্টের একটা অংশ হলো তাপ ধরে রাখার এক স্টোরেজ৷ এটাই গোটা প্রকল্পের আসল উদ্ভাবন৷ এর ফলে দক্ষতা ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশ হয়ে দাঁড়ায়৷ সাইকেলের পাম্পের মতো এ ক্ষেত্রেও বাতাস কমপ্রেশনের ফলে উত্তাপ সৃষ্টি হয়৷ সেই উত্তাপ হিট স্টোরেজে জমা হয়৷
জেনারেটরের মাধ্যমে বাতাস বার করে দিলে তাপমাত্রা কমে যায়৷ হিট স্টোরেজে রাখা জ্বালানি তখন জেনারেটরটিকে শীতে জমে যেতে দেয় না৷ গোটা প্লান্ট এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে৷ গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লান্ট ঠিকমতো চলছে৷ আন্দ্রেয়াস হাসেলবাখার বলেন, ‘‘আমরা নিখুঁতভাবে হিট স্টোরেজ, গুহার দেওয়াল এবং গোটা প্লান্টের কাজ পরীক্ষা করতে পেরেছি৷ ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে যথেষ্ট আস্থা তৈরি হয়েছে৷''
পরের পদক্ষেপ হবে এমন এক প্লান্ট তৈরি করা, যা এই আইডিয়ার লাভজনক প্রয়োগের দৃষ্টান্ত৷ বিশেষ করে বিদ্যুতের উচ্চ মূল্যের কারণে ইউরোপে এই প্রযুক্তি যথেষ্ট লাভজনক হতে পারে৷
ফ্রিৎস মুরি/এসবি