1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাখি ও মাছ ঝাঁক বেঁধে চলে কেন?

৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আকাশে পাখি বা পানিতে মাছের ঝাঁক দেখলে অসাধারণ বিন্যাস চোখে পড়ে৷ তাদের এই আচরণের কারণ এতকাল অজানা ছিল৷ এবার আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে গবেষণার মাধ্যমে সেই রহস্যমোচনের চেষ্টা শুরু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/34CGD
Israel Stare Murmuration
ছবি: Reuters/R. Zvulun

একঝাঁক স্টার পাখি, দেখলে মনে হবে কেউ যেন জাদুকাঠি দিয়ে তাদের সুন্দর এক নক্সা অনুযায়ী সাজিয়ে তুলছে৷ হাজার হাজার পাখি আকাশে যেন নাচছে৷ পানিতেও এমন নক্সা দেখা যায়৷ প্রাণীরা দলবদ্ধভাবে নিখুঁত কারুকার্য সৃষ্টি করে, যা মানুষের ক্ষমতার বাইরে৷

কিন্তু প্রাণীরা কীভাবে এবং কেন এমনটা করে? জার্মানির কনস্টানৎস শহরে মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স জর্ডান সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷ তিনি মাছের ঝাঁক নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তাদের মাঝে সাঁতার কাটার জাদুময় অভিজ্ঞতা সত্যি ভোলার নয়৷ অ্যালেক্স স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘‘তারা ছন্দময় এক প্যাটার্নে আমার চারিপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল৷ সাঁতার কাটতে কাটতে আমি তার শব্দ শুনতে পেলাম৷ চোখের সামনে শুধু মাছেদের প্রাচীর দেখতে পেলাম৷ নাটকীয় ও অসাধারণ সেই অভিজ্ঞতা৷''

এ যেন নৃত্যপরিচালক ছাড়াই কোরিওগ্রাফি! কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব হয়? অতীতে মানুষ সহজ নিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রাণীদের ঝাঁকের আচরণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতো৷ যেমন, সবাই নাকি সর্দারকে অনুসরণ করে! অথবা শত্রুকে এড়িয়ে যেতে প্রাণীরা নাকি ঝাঁকে ঘোরাফেরা করে৷ আজ সেই মনোভাব বদলে গেছে৷ অ্যালেক্স জর্ডান বলেন, ‘‘আমরা জানি, এমন প্রণালীতে প্রত্যেক প্রাণীর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ তারা যেভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করে বা প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা মোটেই এক নয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আচরণে স্বয়ংক্রিয় কোনো প্রক্রিয়া নেই৷ আজ আমরা তাদের পর্যবেক্ষণ করার সময়ে প্রত্যেকটি প্রাণীর উপর লক্ষ্য রেখে আলাদা করে তাদের গতিবিধি বিশ্লেষণ করতে পারি৷ তার ভিত্তিতে প্রশ্ন করতে পারি৷''

ব্যক্তি নিয়ে কীভাবে সমষ্টি সৃষ্টি হয়? সেটা জানলে সেই জ্ঞান মানুষের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ তখন নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো সমষ্টিতে মানুষের আচরণ বোঝা যাবে৷

আফ্রিকার মধ্যভাগে টাঙ্গানাইকা হ্রদে সিচিল্ডস গোত্রের মাছের ঝাঁকের আচরণ অ্যালেক্স জর্ডানের কাছে বিশেষ আগ্রহের কারণ হয়ে উঠেছে৷ কখনো তারা ঝাঁক বেঁধে এগিয়ে যায়, কখনো আলাদা থাকে৷ তাই তারা পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত৷

কনস্টানৎস শহরের ল্যাবেও সেটা সম্ভব৷ সেখানে গবেষকরা আফ্রিকার হ্রদের একটা অংশ গড়ে তুলেছেন৷ তাতে নানা প্রজাতির সিচিল্ডস মাছ মিলেমিশে রয়েছে৷ তাদের মধ্যে কিছু মাছ অত্যন্ত সামাজিক আচরণে অভ্যস্ত, বাকিরা একেবারেই নয়৷ অ্যালেক্স জর্ডান বলেন, ‘‘এই প্রজাতির মাছ আমার মতো অনধিকার প্রবেশকারীকে বরদাস্ত করবে, এমন সম্ভাবনা অনেক কম৷ তারা আমাকে ধারেকাছে আসতেই দেবে না৷''

এই মুহূর্তে এই মাছগুলি কেন ঝাঁকে ঘোরাফেরা করছে না? এমন আচরণের ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যালেক্স বলেন, ‘‘পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর৷ সেখানে একা ও আত্মকেন্দ্রিক হলে কঠিন পরিস্থিতেতে পড়তে হতে পারে৷ সেই নিরাপদ পরিবেশে হয়তো নিয়ম মানার ও সংঘদ্ধ হয়ে কিছু করার চাপ অনেক শিথিল হয়ে পড়ে৷ তখন সবাইকে নিজের মতো আচরণ করতে দেখা যায়৷''

এই গবেষণার অন্যতম ফল হিসেবে জানা গেছে, যে প্রাণীরা টিকে থাকতেই ঝাঁকের মধ্যে ঘোরে৷ অ্যালেক্স জর্ডান ভিডিও ক্যামেরায় মাছেদের গতিবিধির ছবি তোলেন৷ এক সফটঅয়্যার সেই ছবিতে প্রত্যেকটি মাছকে আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে৷ অ্যালেক্স বলেন, ‘‘এমনই একটি দৃশ্য দেখে কম্পিউটার অ্যালগোরিদম একটি মাছের আচরণ তুলে ধরতে পারে৷ তার পরিচয়, তার অবস্থান, ঝাঁকে একটি মাছের আচরণের ফলে পরিবর্তন সম্পর্কে বাকিদের প্রতিক্রিয়া কী হয়, সে সব জানিয়ে দিতে পারে৷''

মাছেরা কখন ঝাঁকের মধ্যে বাকিদের অনুসরণ করবে, কখনই বা আলাদা হয়ে যাবে – কীভাবে তারা সেই সিদ্ধান্ত নেয়? এই প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি৷ তবে সিচিল্ডস মাছ যে দলবদ্ধ হয়ে বেশ মজা পায়, তা বেশ স্পষ্ট৷ ঝাঁকের মধ্যে তারা যে শক্তিশালী, সেই বোধ হয়তো তাদের আছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য