1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিপাকিস্তান

পাকিস্তানের নির্বাচনে সামরিক ছায়া

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারাবাস ও পিটিআই নেতাদের ধরপাকড়ে পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে৷ এই নির্বাচন কি দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাবে কোন পরিবর্তন আনবে?

https://p.dw.com/p/4c63e
২৮ জানুয়ারি পেশোয়ারে ইমরানের মুক্তির দাবিতে তার সমর্থকদের বিক্ষোভ
দুর্নীতি ও রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য ফাঁসের মামলায় কারাদণ্ডের কারণে পাকিস্তানের নির্বাচনে লড়ছেন না ইমরান খানছবি: Abdul Majeed/AFP

পাকিস্তানের ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল কী হবে সেটি অনেকটাই নির্ধারিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷ ডয়চে ভেলেকে ভোটারদের কেউ কেউ জানিয়েছেন দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনী যেকোন মূল্যে ইমরান খানকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে চান বলে মনে করেন তারা৷ ইসলামাবাদের বাসিন্দা আলিয়া দুররানি বলেন, ‘‘আমার ভোট দিতে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই৷ আমি ইমরান খানের সমর্থক, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না৷ যে কারণে এই নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই৷’’

পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হয়েও ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না ইমরান৷ দুর্নীতি ও রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য ফাঁসের একাধিক মামলায় তাকে কয়েক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ তারপরও জনমত জরিপে পিটিআই-এর তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির পাকিস্তান পিপল'স পার্টির চেয়ে এগিয়ে আছে তার দল৷

বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তানের মহাসচিব হারিস খালিকের মতে পিটিআই ‘নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের শীর্ষ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের একটি৷ তিনি মনে করেন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দলটি বড় শহরগুলোর বেশিরভাগ আসনে জয় পাবে৷ তারপরও পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মতো আসন লাভ নিয়ে তার সন্দেহ আছে৷ সামাজিক মাধ্যমে পিটিআই-এর প্রতি যে সমর্থন ও ইমরান খানের যে জনপ্রিয়তা তার মধ্যে অতিরঞ্জন আছে বলে মনে করেন এই মানবাধিকারকর্মী৷

২৮ জানুয়ারিতে করাচিতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ছেন এক নিরাপত্তা সদস্য
ইমরান খানকে কারাদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান পিটিআই সমর্থকেরাছবি: Asif Hassan/AFP

সামরিক বাহিনীর সাথে ইমরানের দ্বন্দ্ব

ইমরান খান অংশ না নিলেও এই নির্বাচনে ইমরান খানের প্রভাব থেকে যাচ্ছে৷ দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী৷ যদিও ২০১৮ সালে ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পেছনে সামরিক শক্তির মদদ আছে বলে অভিযোগ করেছিল বিরোধীপক্ষ৷ কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেই সামরিক শক্তির সাথেই ইমরান খানের বিরোধ তৈরি হয় এবং ২০২২ সালে বিরোধীরা অনাস্থা ভোটে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়৷ এজন্য ইমরান বরাবরই সামরিক বাহিনীকে দায়ী করে আসছেন৷ অবশ্য দেশটির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়৷ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বরাবরই পাকিস্তানের রাজনীতিতে তারা প্রভাব বিস্তার করে এসেছে৷

ইমরান খান তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে সামরিক বাহিনী ও বিরোধী দলগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশেরও অভিযোগ করেছেন, যা অস্বীকার করে আসছে ওয়াশিংটন৷

সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বছরব্যাপী রেশারেশির পর ইমরান খানের সমর্থকেরা মাঠে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, যা এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয়৷ সামরিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় হামলার ঘটনাও ঘটে৷ রাওয়াল পিন্ডিতে পিটিআই-এর নেতা শাহরিয়ার রিয়াজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটা জনগণ ও কর্মীদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ছিল৷ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকলেও আমার বিশ্বাস এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় একটি পার্থক্য গড়ে দিয়েছে৷’’

এই ঘটনার কয়েক মাস পর কর্তৃপক্ষ পিটিআই নেতাকর্মীসহ সন্দেহভাজন বিক্ষোভকারীদের সামরিক আদালতে তোলে৷ এতে পিটিআই-এর শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের কয়েকজন নেতা দল থেকে পদত্যাগ করে সামরিক বাহিনীর প্রতি সমর্থন জানায়৷

অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার ওয়াকার হাসান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইমরান খান অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় থেকেই পিটিআই একটি অ্যাখ্যান তৈরি করে৷ ৯ মে আমরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম৷’’

সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে পিটিআই-এর সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার সংবাদ খবর এসেছে৷ ক্রিকেট ব্যাটকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না পিটিআই এমন রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ এসব ঘটনায় এই নির্বাচন ঘিরে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ ইমরান খানের সমর্থক ও বিভিন্ন বিশ্লেষকেরা নির্বাচন পূর্ববর্তী কারচুপির অভিযোগ করছেন৷

হারিস খালিক বলেন, ‘‘নির্বাচন হতে হবে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও  স্বচ্ছ উপায়ে৷ যে-ই নির্বাচিত হোক তাদের এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যা মানুষের জীবন যাপনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷’’

করাচিভিত্তিক সাংবাদিক নোরিন শামসের মতে, পাকিস্তানের গোটা ইতিহাসই ‘কারচুপির নির্বাচনের' ইতিহাস৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন যা ঘটছে তা আগের নির্বাচনেও ঘটেছে৷ আগে যারা ক্ষমতার পছন্দের ছিলেন এখন তারা খলনায়ক হয়ে গেছেন৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা খলনায়ক ছিলেন (সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ) এখন তারা পছন্দের হয়ে গেছেন৷’’

শামস আরো জানান, পাকিস্তানের সরকার কাঠামো বরাবরই হাইব্রিড ছিল৷ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সামরিক বাহিনীর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে চলেছে৷

ভবিষ্যৎ কোন পথে

পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন শুধু দলগুলো বা তাদের নেতাদের জনপ্রিয়তা মাপার জন্যই গুরুত্বপূর্ন নয়৷ অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ইস্যুগুলোতেও এই নির্বাচনের প্রভাব থাকবে৷  

কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের ঘাটতিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে৷ ইসলামাবাদের স্কুল শিক্ষক সায়রা খান বলেন, ‘‘কে ক্ষমতায় আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ যেই ক্ষমতায় আসুন না কেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো উচিত, আর তা মানুষের আস্থা অর্জন ছাড়া সম্ভব নয়৷ কাজেই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ৷ যদিও তা খুব একটা পরিবর্তন আনবে এমন আশাবাদী হতে পারছি না৷’’

বর্তমান পরিস্থিতিতে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নওয়াজ শরীফের জয়ের সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে৷ পিটিআই ক্ষমতায় ফিরলে পাকিস্তানের রাজনীতি ও অর্থনীতি সেই চাপ নিতে পারবে না বলে দাবি করছে তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ পার্টি৷

দলটির নেতা তারিক ফজল চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খান ও তার দল তাদের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে৷ তারা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেবে না৷’’

গত বছর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পিটিআই-এর উপর থেকে থেকে তাদের সমর্থন সরিয়ে নিলেও ইমরান খানের জনপ্রিয়তা তারা থামাতে পারেনি৷ এটি নিশ্চিত যে নির্বাচনে জয়লাভ করে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাকে দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথেই হাত মিলিয়ে চলতে হবে৷ আর সেটি যদি পিটিআই হয় এবং সামরিক বাহিনীর সাথে যদি তারা দ্বন্দ্ব মেটাতে সক্ষম না হয়, তাহলে পাকিস্তান আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েই এগুবে৷

শামিল শামস/এফএস

ইমরান খানের দণ্ড নিয়ে যা বলছেন পাকিস্তানীরা

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান