1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে শিল্প ও শিল্পীদের হত্যা করছে জঙ্গিরা

হোসাইন আব্দুল হাই১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

জাতিতে পস্তুন মুজাহিদ গত মাসে আফগানিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ পেশোয়ার থেকে তালেবান আদলের ইসলামী জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/Gsl6
পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মকে সংগীত-বিনোদন থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা৷ছবি: AP

মুক্তি পাওয়ার পরে অভিনেতা মুজাহিদ তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীসহ অসংখ্য ভক্তকে নিরাশ করে তাঁর অবসর নেয়ার ঘোষণা দেন৷ মঞ্চে ‘জানান' নামে খ্যাত পাকিস্তানী অভিনেতা আলমযেব মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বললেন, আমি অভিনয় জগত থেকে অবসর নিচ্ছি৷ শত শত টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে অভিনয় করা ৩৮ বছর বয়সী এ জনপ্রিয় তারকা অভিনয় ছেড়ে এখন পুরোপুরি ধর্মচর্চায় মনোনিবেশ করেছেন৷ তাঁর জীবনের এ পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশে অনিচ্ছুক মুজাহিদ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন যে, তিনি ধর্ম প্রচারে নিয়োজিত মিশনারি দল তাবলীগ জামাতে যোগ দিতে যাচ্ছেন৷ তিনি গম্ভীরভাবে বলেন, প্রভূ আগেও আমার রুজির ব্যবস্থা করেছেন, এখনও তিনিই রুজির ব্যবস্থা করবেন৷ মুজাহিদ খুব সৌভাগ্যবান কারণ অন্যান্য যারা জঙ্গিদের কবলে একবার পড়েছে তারা কেউ আর দ্বিতীয় সুযোগ পায়নি৷

Videoladen in Kandahar
নব্বই শতাংশ সুর-সংগীতই বন্ধ হয়ে গেছে (ফাইল ফটো)৷ছবি: AP

জানুয়ারি মাসে রাস্তায় জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী শাবানার উপরে চড়াও হয়েছিল জঙ্গিরা৷ সেসময় রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তরে সোয়াত উপত্যকার মিঙ্গোরা শহরে তাকে গুলি করা হয়েছিল৷ এদিকে ডিসেম্বরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে দীর জেলায় সশস্ত্র জঙ্গিরা পস্তুন সঙ্গীত শিল্পী সরদার ইউসুফজায়ীকে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ সে যাত্রা তিনি বেঁচে যান কিন্তু তাঁর হারমোনিয়াম বাদক আনোয়ার গুল মারা যান এবং অপর চারজন মারাত্মকভাবে আহত হন৷

ইসলামী দলগুলো পরিবহনে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে এবং নারী ছবি সম্বলিত সিনেমার পোস্টারসমূহ ছিঁড়ে ফেলে৷ শুধু তাই নয় জঙ্গিরা ওয়াজিরিস্তানের মতো উপজাতীয় অঞ্চলসমূহে সঙ্গীতের দোকান সমূহ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে৷ গত জুনে অস্ত্রধারী তালেবান যোদ্ধারা খোলা ট্রাকে করে প্রাদেশিক রাজধানী পেশোয়ারের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গান-বাজনার ব্যবসায়ীদের তাদের প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিতে বলে অন্যথা তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হবে বলে হুমকি দেয়৷

পাকিস্তানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মধ্যেই তাদের এ তৎপরতা সারাদেশে বিস্তৃত হয় এবং সরকারও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়৷ সে অনুযায়ী সেনা সদস্যরা বাজাউর ও মোহমান্দসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিন্তু কোন এক এলাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অন্য এলাকায় দেখা দেয় নিরাপত্তাহীনতা৷

এক বছর আগে নির্বাচনে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে গোঁড়া ইসলামী দলগুলোর পরাজয়ের ফলে মানুষের মনে ক্ষীণ আশা জেগেছিল যে, হয়তোবা এ অঞ্চলে আবারো নাচ, গানসহ চিত্তবিনোদনের উপকরণগুলো চালু হবে৷ মানুষ আবার প্রাণ খুলে হাসতে পারবে৷ কিন্তু প্রাদেশিক সরকারে থাকা ধর্ম নিরপেক্ষ পস্তুন দল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এমন পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে৷ ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রাদেশিক মন্ত্রী সৈয়দ অকিল শাহ বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রত্যেককে সোচ্চার হতে হবে৷ একা সরকারের পক্ষে এদের দমন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুশীল সমাজসহ গোটা জনগোষ্ঠীকেই এ সমস্যা মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে৷

ইতিমধ্যে এ অঞ্চল থেকে বেশ কিছু শিল্পী ও অভিনেতা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং আরো অনেকে একই পথ বেছে নেয়ার কথা ভাবছে৷ জঙ্গিদের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিল্পী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমরা খুবই আতংকিত অবস্থায় রয়েছি৷ সে কারণে বিদেশে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করছি৷ সঙ্গীত ছেড়ে ফল ও সব্জির দোকান দিয়েছেন এমন একজন শিল্পী বললেন, এখানে নব্বই শতাংশ সুর-সংগীতই বন্ধ হয়ে গেছে৷