পাকিস্তান সরকারের মেয়াদ শেষ
১৫ মার্চ ২০১৩পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে আসন্ন নির্বাচনের আগেও পাকিস্তানের পরিস্থিতি ২০০৮ সালের তুলনায় বিশেষ বদলায়নি, যখন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পদত্যাগ করেন৷ বর্তমান সরকার কোনোরকম সামরিক অভ্যুত্থান ছাড়াই পাঁচ বছরের কর্মকাল শেষ করে পেরেছে বটে, কিন্তু সব প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পারেননি৷
পাকিস্তান আজও বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে অন্যতম৷ উত্তর-পশ্চিমের উপজাতিক এলাকাগুলিতে এবং দক্ষিণে বালুচিস্তান প্রদেশে নিয়মিত রক্তাক্ত সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনা ঘটে, যার লক্ষ্য হল সরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়৷ পাকিস্তানি তালেবান কিংবা অপরাপর জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে নিরস্ত বা পরাজিত করার ক্ষমতা নিরাপত্তা বাহিনীর নেই৷ ঈশ্বরনিন্দা আইনের দোহাই দিয়ে খ্রিষ্টানদের নিপীড়নও নিত্যকার ঘটনা৷ মালালা ইউসুফজাই-এর মতো সাহসী কিশোরী-তরুণীদের হত্যার প্রচেষ্টাও এই পরিবেশে অস্বাভাবিক নয়৷ অর্থাৎ পাকিস্তানের সমাজকে পরমতসহিষ্ণু বলার কোনো উপায় নেই৷
সরকার পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর বিভাগ আইএসআই'কে বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনার যেটুকু প্রচেষ্টা করেছিলেন, তা ব্যর্থ হয়েছে৷ সামরিক বাহিনী ও আইএসআই মর্জ্জিমতো আফগানিস্তান এবং ভারতের ব্যাপারে তাদের প্রথাগত স্বার্থের নজরদারি করতে পেরেছে৷ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেও রাজনীতিকরা সামরিক বাহিনী এবং আইএসআই'এর এই নিজস্ব ক্ষমতা ও অস্তিত্বকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি৷ এমনকি পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রগুলির নিয়ন্ত্রণও ঐ সামরিক বাহিনীর হাতে৷
অর্থনীতির দুরবস্থা
দেশের অর্থনীতির চরম দুরবস্থা৷ বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রাত্যহিক৷ কোটি কোটি ডলারের মার্কিন সাহায্য ছাড়া পাকিস্তান অনেকদিন আগেই দেউলিয়া হয়ে যেতো৷ একদিকে চরম দারিদ্র্য, অন্যদিকে বিত্তশালীদের প্রায় কোনো কর দিতে হয় না৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হয় অবর্তমান, নয়তো অকার্যকরী৷ শিক্ষাক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ কিশোর-কিশোরী মাদ্রাসার শিক্ষা ছাড়া আরো কোনো শিক্ষা পায় না কিংবা জানে না৷
সব কিছুর মূলে দুর্নীতি
এই প্রায় অসহ্য পরিস্থিতির জন্য অধিকাংশ পাকিস্তানি দুর্নীতিকেই দায়ী করে থাকেন, যা সমাজের সব স্তরে৷ স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধান আসিফ আলি জরদারি'কে ‘‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট'' বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে৷ বর্তমানে জারদারি তাঁর ২৪ বছর বয়সী পুত্র বিলাওয়াল'কে ভুট্টো বংশের নতুন ঝাণ্ডাধারী হিসেব প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী৷ বিলাওয়ালের মা বেনজির ভুট্টো পাঁচ বছর আগে আততায়ীদের হাতে নিহত হন৷
যেখানে প্রগতি ঘটেছে
পাকিস্তানের আইন ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিচারক এবং আইনজীবীরা বিগত কয়েক বছরে একটি অপ্রত্যাশিত এবং অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রায় একক প্রচেষ্টাতেই মোশাররফ শাসনের অন্ত ঘটিয়েছে৷ সেযাবৎ সুপ্রিম কোর্ট দু'জন প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে৷ বিচারকরা অসীম প্রতাপশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তেও পিছপা হন না৷ আগামীতে মুক্ত এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করতে পারলেও, এক হিসেবে তার গ্যারান্টিও এই আদালত৷