1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাঁচ মাসে ৩৮ জঙ্গি আটক, ৪৫ জনকে খুঁজছে র‌্যাব

২৫ জানুয়ারি ২০২৩

গত পাঁচ মাসের ধারাবাহিক অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র ৩৮ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব৷ সংস্থাটি মনে করে, একই সংগঠনের অন্তত ৪৫ জন সদস্য এখনও আত্মগোপন করে আছেন৷

https://p.dw.com/p/4MfXE
ছবি: picture-alliance/dpa

সোমবার কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় গোলাগুলির পর ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে মাসুদ ওরফে রণবীরসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব৷ ওই অভিযান নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামাতুল আনসারের নিরুদ্দেশ সদস্যের সংখ্যা নিয়ে ধারণা দেওয়া হয়৷

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযানে জামাতুল আনসারের ৩৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব৷ এদের মধ্যে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আট তরুণের মধ্যে চারজন রয়েছেন৷

“এখন পর্যন্ত নিরুদ্দেশ ৪৫ জনের মতো৷ অভিযানের কারণে অনেকেই দলছুট হয়েছে৷ কতজন প্রশিক্ষণ নিয়ে সমতলে এসেছে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়৷”

র‌্যাবের ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গিদের সহায়তা ও সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ'র (বম পার্টি) ১৪ জনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷

কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র গত ২৩ আগস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর না ফেরায় থানায় জিডি করেছিল পরিবার৷ পরে ঢাকার এক তরুণ ১ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফিরে আসেন৷ তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একমাস ধরে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র আত্মপ্রকাশের কথা জানতে পারে র‌্যাব৷

‘জঙ্গিবাদে' জড়িয়ে গত দুই বছরে বাড়ি ছাড়া ৫৫ তরুণের খোঁজ পাওয়ার কথা গত ১০ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরেছিল র‌্যাব, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে এই বাহিনী৷

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, র‌্যাব এখন পর্যন্ত যে ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে অক্টোবরের ওই তালিকার নিখোঁজ ব্যক্তিরা যেমন আছে, সেই তালিকার বাইরের ব্যক্তিও আছে৷

সংগঠনটি সম্পর্কে র‌্যাব এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছে, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে এ দিন খন্দকার আল মঈন বলেন, “গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে র‌্যাব জানতে পেরেছে- সংগঠনটির আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ৷ এছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ছয়জন শুরা সদস্য রয়েছে, যারা সংগঠনের দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে৷

“এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ দেয় কেএনএফ৷ কেএনএফ'র প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম, আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লেফটেন্যান্ট কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত আরেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময়-এর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলে৷”

তবে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয় জানিয়ে আল মঈন বলছেন, “তারা জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরেই অভিযান শুরু হয়৷”

সোমবার কুতুপালং ক্যাম্প এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে র‌্যাবের গোলাগুলির পর জামাতুল আনসারের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও সংগঠনটির সঙ্গে কোনো রোহিঙ্গার সম্পৃক্ততা এখনও মেলেনি বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক৷ তিনি বলছেন, “রোহিঙ্গাদের রিক্রুট করা হয়েছে-এ রকম কোনো তথ্য আমরা পাইনি৷”

প্রশিক্ষনের ভিডিও

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের পরিচালক আল মঈন জানান, সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া রণবীরের মোবাইল ফোনে ৮ মিনিটের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে৷

“জঙ্গিরা ২০২১ সালে এই ভিডিওটি তৈরির কাজ শুরু করে৷ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফুটেজ এই ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে৷ ভিডিওতে তারা বেশ কিছু প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের কসরত, থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখিয়েছে৷”

পরবর্তীতে তরুণদের আকৃষ্ট করা, সাহায্য চাওয়া বা সংগঠনের সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ হিসেবে ভিডিওটি তৈরি করা হচ্ছিল জানিয়ে কমান্ডার আল মঈন বলেন, “ভিডিও তৈরির প্রাথমিক উদ্দেশ্য একটা জানান দেওয়া এবং মোরাল বুস্টআপ বা সদস্যদের মানসিক শক্তি বাড়ানো৷ এটি একটি প্রশিক্ষণ ভিডিও৷ সামরিক শাখায় যারা অন্তর্ভুক্ত হবেন, তাদের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই এই ভিডিওটি দেখানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের৷

“এছাড়া সমতলে যাদেরকে তারা উগ্রবাদে দীক্ষিত করেছে, তাদের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মনোবল বাড়াতে এই ভিডিওটি বানায় তারা৷ তবে ভিডিও তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি৷ ভিডিওটি তারা নিজেদের প্রচার-প্রচারণার কাজে লাগানোরও পরিকল্পনা করেছিল৷ ভিডিওটি তাদের সংগঠনের আরও অনেকের কাছেই রয়েছে, তবে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি দেখা যায়নি৷”

বান্দরবানের  থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দুটি পাহাড় ও দুটি ক্যাম্পে ভিডিওটি ধারণ করা হয় জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “এখানে তালিকাভুক্ত নিখোঁজ অনেককেই অভিনয় করতে দেখা গেছে৷ এদের মধ্যে ঘরছেড়ে আবার ঘরে ফেরা এক কিশোরের গৃহ শিক্ষক আল-আমিনসহ কয়েকজন রয়েছে৷ এই ভিডিওটা মূলত তাদের শারীরিক কসরত, বিভিন্ন সংকেত, কাছে ডাকা, দলগতভাবে চলা, ধীরে চলা, অস্ত্র বহন ইত্যাদি বিষয় দেখানো হয়েছে৷”

ভিডিওতে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল হাতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমান্ডার আল মঈন বলেন, “পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা (কেএনএফ বা বম পার্টি) টাকার বিনিময়ে তাদের ওই অস্ত্রগুলো সরবরাহ করেছে৷”

কেএনএফ প্রধান নাথান বম এখন কোথায়, এ প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, “সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া (জামাতুল আনসারের) সামরিক শাখার প্রধান রণবীরকে নাথান বম সম্পর্কে  জিজ্ঞসা করা হয়েছিল৷ রণবীরের বক্তব্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর থেকে নাথান বমের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই৷”

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)