1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে দাবি আদায়ে কৃষক আন্দোলনের প্রভাব

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ নভেম্বর ২০২১

কৃষকদের অবিচল আন্দোলনে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে দীর্ঘ সময় আন্দোলন করে আসা পেশাজীবীরা এখন তাদের সাফল্যে উজ্জীবিত৷ 

https://p.dw.com/p/43HtA
নার্সদের প্রতিবাদ চলছে এসএসকেএম হাসপাতালেছবি: Payel Samanta/DW

ভারতের কৃষক আন্দোলনে নজর ছিল সারা বিশ্বের৷ সেই আন্দোলন সাফল্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে৷ পশ্চিমবঙ্গেও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে৷ মূলত স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে আন্দোলন বারবার নজর কেড়েছে৷ এখন নার্সদের প্রতিবাদ চলছে এসএসকেএম হাসপাতালে৷ সমকাজে সমবেতন ও বদলি নীতির প্রতিবাদে গত জুলাই-আগস্টে ১২ দিনের জন্য অনশন আন্দোলন করেন নার্সরা৷ বেতন বৈষম্যসহ বদলির বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের দাবিপূরণ এখনো হয়নি৷

প্রথম দফার আন্দোলনের পর তিন মাস কেটে গেলেও রাজ্য দাবিদাওয়া মানেনি বলে নার্স সংগঠনের অভিযোগ৷ তাই তারা ফের আন্দোলনে নেমেছেন৷ শনিবার নার্সদের আন্দোলন ষষ্ঠ দিনে পড়েছে৷ নার্সেস ইউনিটির পক্ষে ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হোক৷ না হলে মন্ত্রী বলুন, মিথ্যে বলেছিলাম৷ রোগী পরিষেবা বজায় রেখেই আন্দোলন চালাচ্ছি৷ কৃষকদের আন্দোলন আমাদের ১০০ শতাংশ উজ্জীবিত করেছে৷ যেভাবে তারা মাটি কামড়ে পড়েছিলেন, তা শিক্ষণীয়৷’’

অংশুমান মিত্র

কৃষক আন্দোলনের সাফল্যে অনমনীয় নেতৃত্বই কৃতিত্বের দাবিদার৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও কৃষকরা লড়াই ছাড়েননি৷ আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছেন, সংসদে আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলবে৷ এই জেদি মানসিকতা কি পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলনকারী নেতৃত্বের মধ্যে দেখা যাচ্ছে?  সিংঘুতে উপস্থিত হয়ে কৃষক আন্দোলনের পাশে ছিলেন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার এর সম্পাদক  চিকিৎসক অংশুমান মিত্র৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কৃষিজীবীরা টানা অবস্থানে বসে আছেন৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নার্সরা ডিউটি জারি রেখে আন্দোলন করছেন কয়েক বছর ধরে৷ আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা শুধু জনবিরোধী নয়, কর্মীবিরোধীও বটে৷ কম লোকবলে কাজ করতে হয়৷ তার মধ্যেও দীর্ঘ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়৷’’

এ রাজ্যেই আছে যুগান্তকারী আন্দোলনের সাম্প্রতিক অতীত৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম বিশ্বের নজর কেড়েছিল৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভাস্কর সিংহরায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কৃষকদের উপর কিছু চাপিয়ে দিতে গেলে কী ফল হয়, তার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রে৷ এই আন্দোলনের জেরে বদলে যায় দেশের জমি অধিগ্রহণ আইন৷ কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সেই ধারাতেই সফল হয়েছে৷’’

এই একই একাগ্রতা কি পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারবিরোধী আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে, প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা৷

শিক্ষকরা বছরভর আন্দোলনে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে রাজ্য সরকারকে৷ স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগের দাবিতে হবু শিক্ষকেরা দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ শিক্ষক বাছাই প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে মামলা হওয়ায় নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা বেড়েছে৷ চলতি সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘোষণা করেছেন, ‘‘আদালতের জট কাটিয়ে আগামী দু মাসে ১৫ হাজার নিয়োগ হবে এসএসসিতে৷’’

রোগী পরিষেবা বজায় রেখেই আন্দোলন চালাচ্ছি৷

লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের পার্শ্বশিক্ষকরাও৷ বিধানসভার গেট টপকে অন্দরে প্রবেশের চেষ্টা থেকে আদিগঙ্গায় সাঁতার কিংবা বিষপান, নানা নাটকীয়তায় ভরা এই আন্দোলন৷ প্রতিবাদের ঝাঁজ আছে যথেষ্ট, কিন্তু সেই অনুযায়ী ফল মিলেছে কি?

শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা, শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের মইদুল ইসলাম সহ এই নজরকাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা সরাসরি যোগ দিতে চলেছেন শাসক দল তৃণমূলে৷ ঘটনাচক্রে মইদুল ও বিষপানকারী পাঁচ শিক্ষিকার এই সিদ্ধান্ত সামনে এসেছে শুক্রবার, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দিনেই৷ এতে কি এ রাজ্যে আন্দোলনের নেতৃত্ব বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে না?  শিক্ষক নেতা কিঙ্কর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া কারো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু যারা প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বিষপানের মতো পদক্ষেপ করলেন, এমন কী ঘটল যে তারা সরাসরি শাসক শিবিরে নাম লেখালেন?  ভোটের আগে এদের কেউ কেউ সরকারবিরোধী ভূমিকা নিয়েছেন৷ এখন আবার ক্ষমতার দিকে ঢলে পড়েছেন৷'' অংশুমানের ভাষায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অনেক আন্দোলন হচ্ছে যা রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট৷ ফলে ক্ষমতার ভাগ নেওয়ার লোভ থাকবেই৷ তবে তাতে সব আন্দোলনের উপরই প্রশ্নচিহ্ন বসবে না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান