1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্তুগালে অক্টোপাস ধরার পদ্ধতি হুমকির মুখে

১৭ নভেম্বর ২০২১

গতানুগতিক খাদ্যাভ্যাস ছেড়ে মানুষ আজকাল নানা পদ চেখে দেখতে চাইছে৷ সেই বাড়তি চাহিদা মেটাতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতিও কম হচ্ছে না৷ পর্তুগালের দক্ষিণে অক্টোপাস ধরার পেশার উপরেও তার প্রভাব পড়ছে৷

https://p.dw.com/p/435Is
Oktopus
ছবি: Imago/Chromorange

পর্তুগালের দক্ষিণে রাত নেমে এলে মাউরিসিউ নোগেইরা বেরিয়ে পড়েন৷ ভিলা রেয়াল দে সান্তু আন্তুনিউ শহরের উপকূল থেকে দুই নটিকাল মাইল দূরে তাঁর মাছ ধরার ক্ষেত্র৷ আলগার্ভে অঞ্চলের অনেক জেলের মতো তিনিও অক্টোপাস ধরেন৷ নিজের পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে মাউরিসিউ বলেন, ‘‘আমার প্রপিতামহ, পিতামহ ও বাবাও অক্টোপাস ধরতেন৷ আমার ভাইয়েরাও সেই কাজ করে৷ সেটা রক্তের মধ্যেই থাকতে হবে৷ এই পেশা বড়ই কঠিন৷ সমুদ্র সব শক্তি শুষে নেয়৷''

এই রাতে ঝোড়ো বাতাস ও বিশাল ঢেউ কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে৷ মাউরিসিউ পুরোপুরি ঐতিহ্য মেনে চলেন৷ ৪৪ বছর বয়সি এই জেলে চিরায়ত পদ্ধতিতে অক্টোপাস ধরেন৷ দড়ি দিয়ে বাঁধা  মাটির পাত্রের সারি সমুদ্রে নামিয়ে দেন তিনি৷ কপিকল দিয়ে তিনি সেই হাঁড়িগুলি টেনে তোলেন৷ রাতে অনেক অক্টোপাস পাত্রে আটকা পড়ে৷ মাউরিসিউ মনে করেন, ‘‘মাছ ধরার এই পদ্ধতি অনেক বেশি ন্যায্য৷ অক্টোপাস হাঁড়ির মধ্যে ঘুমাতে যায়৷ যে কোনো সময়ে সেটি বেরিয়ে পড়তে পারে৷ একেবারেই কোনো ফাঁদ নয়৷''

বাস্তবে সত্যি মাছ ধরার ফাঁদের ব্যবহার বাড়ছে৷ মাউরিসিউর মতে, সে কারণেই গোটা অঞ্চলে অক্টোপাসের পরিমাণ কমে চলেছে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘'৪০ বছর আগে ফাঁদ ছিল না, শুধু মাটির হাঁড়ি ব্যবহার করা হতো৷ বাবা বলতেন, তখন সারা বছর ধরেই অক্টোপাস পাওয়া যেত৷ আজ হাঁড়ির বদলে আরও বেশি ফাঁদ পাতা হচ্ছে৷ ফলে কয়েক রাতে খালি হাতেই আমাকে ফিরতে হচ্ছে৷''

পর্তুগালে অক্টোপাস নিয়ে দুর্ভাবনা

আলগার্ভে অঞ্চলের অক্টোপাস কেন্দ্র বলে পরিচিত সান্টা লুসিয়ায় জেলেরা সব ধরনের পদ্ধতি ভালোই রপ্ত করেছেন৷ যেমন ইওয়াকিন ওলিভেইরা টোপ ভরা ফাঁদ বেছে নিয়েছেন৷ ৫৭ বছর বয়সি এই জেলের মতে, সেই পদ্ধতি অনেক কার্যকর ও সহজ৷ দিনের যে কোনো সময়েই সেই ফাঁদ তুলে নেওয়া যায়৷ ইওয়াকিন বলেন, ‘‘অক্টোপাস এখানে ঢুকলে আর বের হতে পারে না৷ ২০০০ সাল পর্যন্ত আমি মাটির হাঁড়ি নিয়ে কাজ করেছি৷ তারপর পরিশ্রম কমাতে অক্টোপাসের ফাঁদ বেছে নিয়েছি৷ ধরার কাজ অনেক সহজ, পরিমাণও বেশি৷''

ফাঁদ ব্যবহার করা জেলেদের সঙ্গে মাউরিসিউ পাল্লা দিতে পারছেন না৷ এই রাতেও বেশি অক্টোপাস ধরা পড়ে নি৷ মাত্র ৫০টি প্রাণী, মোট ওজন ৭০ কিলো৷ অথচ বছরের পর বছর ধরে চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ মাউরিসিউ বলেন, ‘‘অক্টোপাসের বিপুল চাহিদা৷ মানুষ এই প্রাণী খেতে চাইছে৷ পর্তুগাল ও স্পেনে এই পদের যথেষ্ট চল রয়েছে৷''

অক্টোপাস ধরার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটছে৷ আরও বেশি ফাঁদ ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে৷ মাটির হাঁড়ির বদলে প্লাস্টিকের খাঁচার প্রয়োগও বাড়ছে৷

আলগার্ভে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী হিসেবে মাফালদা রানখেল এমন প্রবণতার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷ বিশেষ করে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পর্কে তিনি সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ সমুদ্র এমনিতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকে ভরে গেছে৷ প্লাস্টিক জঞ্জালের উৎস সম্পর্কে গবেষণা তুলে ধরে তিনি আরও টেকসই পদ্ধতির পক্ষে সওয়াল করছেন৷ এক প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি আঞ্চলিক জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ মাফালদা বলেন, ‘‘বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে ভাসমান প্লাস্টিকের প্রায় ২৭ শতাংশের জন্য নাকি জেলেদের কার্যকলাপ দায়ী৷ এমন আধার সমুদ্রে হারিয়ে গিয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিলে সেটা হবে বিশাল এক সমস্যা৷''

বাজারের চাহিদা ও সমুদ্রের অবস্থার কারণে প্রতিযোগিতার চাপও কম নয়৷ তা সত্ত্বেও মাউরিসিও আশাবাদী৷ রাতে সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে ভোরে ঘরে ফেরার চাপ সত্ত্বেও তিনি এখনো পুরানো পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে রাখতে চান৷ মাউরিসিউ বলেন, ‘‘অনেক পরিশ্রম ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মাসের শেষে মোটামুটি কিছু আয় করা যায়৷ তবে শীত ও খারাপ আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে৷ তাহলেই উপার্জন সম্ভব৷''

মাউরিসিউ-র মতে, ভবিষ্যতেও তাঁর অক্টোপাস ধরার পদ্ধতি চালু থাকবে৷ তার আশা, সমুদ্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে এই ঐতিহ্য কোনো এক সময়ে আলগার্ভে অঞ্চলে বাধ্যতামূলক হয়ে উঠবে৷

নর্মান স্ট্রিগেল/এসবি