মুখোমুখি সংঘর্ষ
১৩ জানুয়ারি ২০১৩বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘‘বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি ২০১৩'' শীর্ষক রিপোর্টটির ভিত্তি হলো একটি জরিপ: প্রতিবছর এ বিষয়ে অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও সুশীল সমাজের এক হাজারেরও বেশি বিশেষজ্ঞকে প্রশ্ন করা হয়৷ তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই এবার বলেছেন, ইনকাম ডিসপ্যারিটি বা ধনি-দরিদ্রের আয়ের ব্যবধানটাকেই তাঁরা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করেন এবং আগামী দশ বছরের মধ্যে সেটা আরো স্পষ্ট বোঝা যাবে৷
তবে যে ঝুঁকিটা সত্যি সত্যি ঘটলে তার সর্বাধিক ব্যাপক ফলশ্রুতি হবে, সেটা হলো, যদি কোনো কারণে বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে৷ ‘ফলশ্রুতি' এবং ‘ঘটার সম্ভাবনা', এই দুইয়ের বিচারে প্রথম পাঁচটি ঝুঁকির মধ্যে আরো থাকছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী বাজেট ঘাটতি, এবং জলাভাব৷
গতবছর যুক্তরাষ্ট্র্রে স্যান্ডি ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ অথবা চীনে ভয়াবহ বন্যার পর, বিশেষজ্ঞদের কাছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সম্ভাব্য ঝুঁকি হলো গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন বৃদ্ধি৷ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রস্তুতির যে অভাব, তাকেই পরিবেশ ঝুঁকি নাম দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ আগামী দশকগুলিতে এর গুরুতর ফলশ্রুতি উপলব্ধি করা যাবে৷
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের কার্যনির্বাহক এবং ‘‘বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি ২০১৩'' রিপোর্টটির সম্পাদক হলেন লি হাওয়েল৷ তাঁর দৃষ্টিতে এই রিপোর্টটি হলো আমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলির জন্য এক ধরণের সতর্কতা সংকেত৷ কনসালটেনসি কোম্পানি অলিভার ওয়াইম্যান গ্রুপের প্রধান জন ড্রিজেক বলেন, ‘‘আমরা দেখছি, কিভাবে দু'টো বড় ঝুঁকি এদিকে আসছে: একটি পরিবেশগত ঝড় আর একটি অর্থনীতি সংক্রান্ত ঝড়৷ আমরা দেখছি, এ দু'টোর মুখোমুখি ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা আছে৷''
কাজেই এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলিতে বিনিয়োগ না করলে ভবিষ্যত প্রজন্মের মানব-মানবীদের জন্য বিশ্বব্যাপী সমৃদ্ধি বিপন্ন হতে পারে৷ বলতে কি, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার জন্য যতটা করা সম্ভব ছিল, ততটা করা যায়নি, আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজ দীর্ঘমেয়াদি বিপদটাকে আমল দিতে চায়নি শুধু আর্থ-সামাজিক ক্ষতির আশঙ্কায়৷ অথচ বিপদ তো একটা নয়, এমনকি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাত্রাধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কুফল, কিংবা বিশ্বায়িত ‘গ্লোবাল ভিলেজে' প্যানডেমিক বা বিশ্বজনীন মহামারীর আশঙ্কা, এ সবই থেকে যাচ্ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷
শেষমেষ নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আসতে পারে, তা যে সবসময় শান্তিপূর্ণ হবে, এমন কোনো কথা নেই৷ ইউটিউবের একটি ভিডিও থেকেই পৃথিবীর অপর প্রান্তে মুহূর্তে আগুন লাগতে পারে৷ তবুও বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এই জরিপটির গুরুত্ব সম্পর্কে লি হাওয়েল বললেন, ‘‘জরিপটা সত্যিই বিশ্বব্যাপী৷ চীন সমেত পূর্ব এশিয়া থেকে আমরা বিশেষজ্ঞদের ঠিক ততটাই মতামত নিয়েছি, যেমন ধরা যাক উত্তর আ্যামেরিকা থেকে৷ তার ফলে জরিপটা সত্যিই মূল্যবান হয়ে উঠেছে৷''
জরিপ থেকে তাঁর সিদ্ধান্ত হলো, ‘‘আমরা যখন বিশেষজ্ঞদের দশ বছর পরের পরিস্থিতিটা ভেবে দেখতে বলি, তখন দেখা যায়, আগের বছরের জরিপের তুলনায় অর্থনৈতিক ঝুঁকিগুলো এবার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে – বিশেষ করে আয়ের বৈষম্য এবং আর্থিক ভারসাম্যের অভাব৷''
সুইজারল্যান্ডের সুইশ রে বীমা কোম্পানির ডাইরেক্টর ডেভিড কোল, যিনি ঠিক এই ঝুঁকির ব্যাপারটা দেখেন, তাঁর বক্তব্য আরো সহজ, ‘‘আমাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিষেধ অনেক বেশি কার্যকর৷ এবং তা এ সব বিশ্বব্যাপী সমস্যার ক্ষেত্রেও৷''