1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের জার্মান পরিকল্পনা এক ছটা আশার আলো

৩ জুন ২০১১

৩০শে মে জার্মান পরিবেশমন্ত্রী নরবার্ট ব়্যোটগেন ঘোষণা করছেন যে, আগামী এক দশকের মধ্যে জার্মানি তার সব’কটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷ জার্মানির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল আলোচনা চলেছে দেশে-বিদেশে৷

https://p.dw.com/p/11TG5
Supporters and activists of the anti-nuclear power movement
উত্তর জার্মানির বকডর্ফে পারমাণবিক পরিকল্পনা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনের একাংশছবি: AP

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার নির্ধারিত সীমার মধ্যে বেঁধে রাখার বিষয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে গত বছর এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি কার্বন গ্যাস নিঃসরণ করেছে পৃথিবীর মানুষ৷ ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচার পথ ক্রমশই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে৷ আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা, আইইএ-র একটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান৷ আর ঠিক এমন সময়েই জার্মানির এই ঘোষণা৷

শিল্প প্রযুক্তিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ জার্মানি সবসময়েই পরিবেশবান্ধব৷ অর্থাৎ পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় সবসময়েই সোচ্চার৷ ৩০শে মে জার্মান পরিবেশমন্ত্রী নরবার্ট ব়্যোটগেনের ঘোষণাটি যে হঠাৎ করে আসলো তা কিন্তু নয়, পরমাণু শক্তির বিরুদ্ধে জার্মানিতে অনেকদিন ধরেই প্রতিবাদ চলছিল৷ পরিবেশ রক্ষায় সবুজ আন্দোলনের উৎসস্থল এই জার্মানি৷ আর জাপানের পরমাণু বিপর্যয়ের ফলে জার্মানির বড় বড় শহরগুলোতে মানুষ যেন পরমাণু শক্তির বিরুদ্ধে আরো বেশি সোচ্চার হয়ে উঠে৷ তারই প্রেক্ষিতে ঘোষণা এলো জার্মানিতে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র আর নয়৷

সরকারের এই নীতি বদলের কথা ঘোষণার পরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, তিনি মনে করেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৩ বছর আগে সব পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে জার্মানি সারা বিশ্বের কাছে একটি সুন্দর উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে ৷

জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘আমি এই কথা ইতোমধ্যেই জানিয়েছি যে, আমরা জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি এবং এই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বড় রকমের ঐক্যমত্য রয়েছে৷ এমন এক জ্বালনি, যার ব্যয়ভার আমরা মেটাতে পারবো৷ যে জ্বালানি হবে নিরাপদ, এবং তার সরবারহ হবে নিশ্চিত৷ স্বভাবতই পরিবেশ বান্ধব জ্বলানি একইভাবে প্রধান্য পাবে৷''

চ্যান্সেলর ম্যার্কেল আরো বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জার্মানি সবার কাছে পথপ্রদর্শক হয়ে থাকতে পারে৷ কেননা পুরো বিশ্বকে জার্মানিই প্রথমবারের মতো দেখাবে, কী করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পাশাপাশি এটা রপ্তানি করা যায়, এর উন্নয়ন করা যায়, এবং এই খাতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা যায়৷

Superteaser NO FLASH Deutschland Energiereise Angela Merkel in AKW Lingen
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল এবং জার্মান সংসদ এই সিদ্ধান্তে আসতে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছেন৷ছবি: AP

ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আমরা সঠিক পথেই এগুচ্ছি৷ তবে এই ক্ষেত্রে বহু প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে৷ কোনোকিছু থেকে বের হয়ে আসতে হলে নতুন জিনিসটি যে ঠিকভাবে কাজ করবে, সে বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে৷ একই সঙ্গে আমরা কিভাবে একটি টেকসই ও স্থায়ী বিদ্যুৎ শক্তির দিকে যেতে পারি সে বিষয়টিও প্রমাণ করতে হবে৷''

ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হলো ফ্রান্স৷ দেশটিতে মোট ৫৮টি পরমাণু চুল্লি রয়েছে৷ যেখানে জার্মানিতে রয়েছে ১৭টি৷ ফ্রান্স বলছে, পরমাণু বিদ্যুতের কারণে ইউরোপের যে কোনো দেশের তুলনায় সেখানে বিদ্যুতের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ কম৷ বলা বাহুল্য, ফ্রান্স বলেছে, জার্মানির এই সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করলেও এপথ তারা অনুসরণ করবে না৷

জার্মান পরিবেশমন্ত্রী তাঁর ঘোষণায় বলেন, সবচেয়ে পুরোনো সাতটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ক্রুয়েমেল পরমাণু কেন্দ্রটি আর কখনোই চালু করা হবে না৷ এছাড়া বাকি ছয়টি ২০২১ সালের মধ্যে এবং সম্প্রতি স্থাপিত কেন্দ্রটি ও সর্বনতুন আরো তিনটি কেন্দ্র ২০২২ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে৷

তিনি বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের কোন নড়চড় হবেনা৷ সর্বশেষ নির্মিত তিনটি কেন্দ্র ২০২২ সালের মধ্যে বন্ধ করা হবে এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি৷''

ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপর্যয়ের পর চ্যান্সেলর ম্যার্কেল পরমাণু শক্তি কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি বিশেষ প্যানেল গঠন করেন৷ প্যানেল রোববার পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ থেকে সরে আসার জোর সুপারিশ করে৷ তারই প্রেক্ষিতে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল তাঁর জোট সরকারের অন্য শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে৷ আর তারপরেই এই সিদ্ধান্ত৷

জার্মানির পরমাণু বিদ্যুৎ শিল্প মহল অবশ্য এই সিদ্ধান্তে খুশি নয়৷ তারা মনে করে, আগেভাগেই পরমাণু শক্তি কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হলে তা দেশের শিল্পের ভিতটার সমূহ ক্ষতি করবে৷

বিশ্বে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষের আশা যখন ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে, জার্মানির এই সিদ্ধান্ত কিছুটা আশার আলো বৈকি!

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক