1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পণ্যের দাম বেঁধে দিতে আদৌ কি পারবে মন্ত্রণালয়?

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয় ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার ঘোষণার পর ২০ দিন পার হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি৷ কবে হবে তাও নিশ্চিত নয়৷ এইসব পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে৷ ব্যবসায়ীরাও এর প্রবল বিরোধিতা করছেন৷

https://p.dw.com/p/4HB6c
Bangladesch | Dhaka Karwan Market
ছবি: Samir Kumar Dey/DW

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে,দাম বেঁধে দিতে পারলে তা ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক হবে, ইচ্ছে মত দাম আদায় করতে পারবেনা ব্যবসায়ীরা৷
গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল, চিনি, রড, সিমেন্ট, চাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল ও ডিম এই নয়টি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ 

জটিলতায় মন্ত্রণালয়:
কিন্তু দাম বেঁধে দিতে গিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালায় আইনি বাধ্যবাধকতায় পড়েছে৷ কারণ দেশে প্রচলিত আইনে মন্ত্রণালয় সরাসরি দাম নির্ধারণ করতে পারে না৷ তাই ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়৷ কিন্তু ট্যারিফ কমিশনও সব পণ্যের দাম নির্ধারণের জন্য ম্যান্ডেট প্রাপ্ত নয়৷ ট্যারিফ কমিশন ১৭ ধরনের আমদানি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে৷ শেষ পর্যন্ত তাদের  ভোজ্যতেল, চিনি, রড, সিমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়৷ ভোজ্য তেল ও চিনির দাম তারা আগে থেকেই নির্ধারণ করে আসছিলো৷ রড ও সিমেন্টে যেহেতু আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তাই  তাদের ম্যান্ডেটের মধ্যে পাড়ায় তারা এই দুইটি পণ্যের দাম নির্ধারণেও কাজ করছে৷ আর কৃষি পণ্য হিসেবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে পাঁচটি পণ্যের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷ এই পাঁচটি পণ্য হলো চাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল ও ডিম৷

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোনো আদেশ পায়নি:

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আঃ গাফফার খান বলেন, ‘‘আমাদের তো আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি বলতে পারে না৷ আমাদের বলবে কৃষি মন্ত্রণালয়৷ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এখনো ওই পাঁচটি পণ্যের দামের ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য কোনো আদেশ পাইনি৷’’

‘আমাদের সরাসরি বলতে পারে শুধু কৃষি মন্ত্রণালয়’

তার কথা, ‘‘আমরা প্রতিদিনই কৃষিপণ্যের দাম আপডেট করি, খুচরা কত দাম হবে তা আমরা আমরা প্রতিদিনই আমাদের ওয়েব সাইটে দেই৷ তাই নতুন করে আমাদের দাম নির্ধারণের কিছু নাই৷ যে পাঁচটি পণ্যের কথা বলা হচ্ছে ওই পাঁচটি পণ্য আমাদের কৃষি পণ্যের আওতায় রয়েছে৷’’ তিনি জানান, ‘‘কৃষিপণ্য বিপণন অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা প্রতিদিন বাজারে গিয়ে দাম নির্ধারণ করেন৷ উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ হিসাব করে শতকরা ৫-১০ টাকা লাভ রেখে  খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়৷ কিন্তু এখানেও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে৷ তারা নানা অজুহাতে আরো বেশি দামে বিক্রি করে৷’’

কৃষিপণ্য বিপণন অধিদপ্তরের তালিকা অনুযাীয় বুধবার খুচরা বাজারে সরু চাল ৭০ টাকা কেজি, আটা ৫৭ টাকা কেজি ও ডিমের হালি ৪৫ টাকা৷

ট্যারিফ কমিশন যা করছে:

ট্যারিফ কমিশন এরইমধ্যে ভোজ্যতেল ও চিনির দামের সুপারিশ করেছে এবং রড ও সিমেন্টের দাম নিয়ে তারা কাজ করছে বলে জানান কমিশনের সদস্য শাহ  মো. আবু রায়হান আলবেরুনী৷ তারা পাম তেল লিটারে ১২ টাকা এবং চিনি কেজিতে বর্তমান বাজার দরের চেয়ে চার টাকা কমানোর সুপারিশ করেছেন৷ ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, পাম তেলের দাম ১৪৫ টাকা লিটার নির্ধারণ করা আছে৷ ভোজ্যতেলের দাম লিটারে অন্তত ১২ টাকা কমিয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে৷ বিশ্ব বাজারে সয়াবিন তেলের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি, তবে পাম তেলের দাম কমে এসেছে৷ তাই এই তেলের দাম স্থানীয় বাজারে কমানোর সুযোগ আছে৷ আর সয়াবিন তেল যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা যৌক্তিক৷ ২৩ আগস্ট প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেঁধে দেয়া হয় ১৭৫ টাকা৷ পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম করা হয় ৯৪৫ টাকা৷

চিনির দাম সবশেষ গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷ ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রতিকেজি খোলা চিনির খুচরা মূল্য ৮৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত ৮৮ টাকা হওয়া উচিত৷ তবে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তথ্য বলছে, খোলা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়৷ ব্র্যান্ড ভেদে দাম আরও বেশি৷

শাহ  মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, ‘‘রড ও সিমেন্টের দামের ব্যাপারে সুপারিশ করতে আমাদের আরো সময় লাগবে, আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি৷ কারণ আগে আমরা এই দুইটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করতাম না৷ আমদানি করা ১৭টি পণ্যের দাম আমরা নির্ধারণ করি৷ তবে এই দুইটি পণ্যের কাঁচামাল যেহেতু আমদানি করা হয় তাই আমাদের ম্যান্ডেটের মধ্যেই আছে৷ আমদানি পণ্যের দাম নির্ধারণে ডলারের দাম, পরিবহন খরচ, আমদানি করতে সময়-এই সব বিষয় আমরা বিবেচনায় নিই৷’’
দুই দপ্তরের এই দুই কর্মকর্তাই জানান, দাম নির্ধারণ স্থায়ী কোনো বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজার বিবেবচনা করে সমন্বয় করতে হয়৷
ব্যাসায়ীরা দাম বেঁধে দেয়ার বিরোধী:

ক্যাব-এর সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসেন  মনে করেন, শুধু এই নয়টি নয়, আরো অনেক পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া উচিত৷ এতে ভোক্তারা উপকৃত হবেন৷ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত দাম নিতে পারবেন না৷ তবে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা না রাখলে এই ভালো উদ্যোগও কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করেন তিনি৷
তার অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সব সময়ই নিজেদের স্বার্থে দাম বেঁধে দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়৷ তারা যাতে এবার সফল হতে না পারে সে ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে৷
এফবিসিসিআই’র পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন জানান, কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার সুযোগ নেই৷ এটাকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে৷ মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দেয়া যায় না৷ তবুও বিশেষ বিশেষ সময়ে আমরা এটা মেনে নিই৷ কিন্তু সব সময়ের জন্য এটা হতে পারে না বলে তিনি মনে করেন৷