1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্ভয়ার চার ধর্ষকের ফাঁসি

২০ মার্চ ২০২০

সাত বছর পর নির্ভয়ার চার ধর্ষকের ফাঁসি হল। শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হল অক্ষয় কুমার, বিনয় শর্মা, মুকেশ সিং, পবন গুপ্তাকে।

https://p.dw.com/p/3Zl0o
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma

ভারতের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম চারজনকে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হল। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে চলন্ত যাত্রীশূন্য বাসে নির্ভয়াকে গণধর্ষণ ও পৈশাচিক অত্যাচার করার চরম শাস্তি পেতে হল চার ধর্ষককে। নয়া দিল্লির তিহার জেলে ভোর সাড়ে পাঁচটায় চার ধর্ষককে একসঙ্গে ফাঁসিকাঠে ঝোলালেন মিরাটের পবন জহ্লাদ। সাত বছরেরও বেশি আগে যে ভয়ঙ্কর ঘটনা পুরো দেশকে স্তম্ভিত করেছিল, নড়িয়ে দিয়েছিল জাতির বিবেককে, শেষ পর্যন্ত তার যবনিকা পতন হল।

চার ধর্ষকের ফাঁসির পর নির্ভয়ার মা আশা দেবী বলেছেন, ''খবর পাওয়ার পর আমি মেয়ের ছবিটাই জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, আজ ন্যায় হল। দেরি হল ঠিকই। কিন্তু নির্ভয়া ন্যায় পেল। বিচারবিভাগ বুঝিয়ে দিল, এই ধরনের জঘন্য অপরাধ হলে সাজা পেতেই হবে। কেউ বাঁচবে না।'' কিন্তু এখানেই থেমে থাকছেন না আশা দেবী ও নির্ভয়ায় বাবা বদ্রীনাথ সিং। তাঁরা বলেছেন, ''আমাদের লড়াই জারি থাকবে। আমাদের মেয়ে আর নেই। আর আসবে না। কিন্তু দেশের বাকি বাচ্চাদের জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আইনে কিছু ফাঁক আছে। যার জন্য এই দেরি হল। আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব। তারপর দাবি করব, আইনে সংশোধনের জন্য।'' নির্ভয়ার মা-র আবেদন, ''মেয়েদের বিরুদ্ধে কিছু হলে, সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নিন। দোষীরা যাতে সাজা পায় সেটা দেখুন।''

শুক্রবারেও যাতে ফাঁসি না হয়, তার জন্য শেষ চেষ্টা চালিয়েছিলেন ধর্ষকদের আইনজীবীরা। গত ২৪ ঘণ্টায় সুপ্রিম কোর্ট, দিল্লি হাইকোর্ট ও পাতিয়ালা হাউস কোর্টে পাঁচটি আবেদন জমা পড়ে। হাইকোর্টে শুনানির পর বিচারপতিরা যাবতীয় আবেদন খারিজ করে দেন মধ্যরাতের পর। সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায় দেয় রাত আড়াইটের সময়। ফাঁসি দেওয়ার ক্ষেত্রে শেষ বাধাও দূর হয়।

সাড়ে তিনটের সময় তিহারে ডেকে তোলা হয় মুকেশ, অক্ষয়, পবন, বিনয়কে। নিয়মমাফিক তাদের আলাদা সেলে রখা হয়েছিল। পুরো রাত তারা প্রায় জেগেই ছিল। বিশেষ কিছু খায়নি। তাদের আদালতের নির্দেশের কথা জানানো হয়। শুরু হয়ে যায় ফাঁসির প্রস্তুতি। ২০১৫ সালের পর আবার তিহারে ফাঁসি হল। নিয়মমাফিক তাদের আধঘণ্টা ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। তারপর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য।

জেলের বাইরে ভোর রাতেও সমবেত হয়েছিলেন কয়েকশো মানুষ। তার মধ্যে প্রচুর মহিলা। হাতে জাতীয় পতাকা। ফাঁসির খবর আসার পর শুরু হয় তাদের উল্লাস। মিষ্টি বিতরণ শুরু হয়ে যায়।

Indien: Vier Männer wegen Vergewaltigung einer Studentin hingerichtet
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma

ধর্ষকদের পরিবারের ছবিটা স্বভাবতই আলাদা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে পাতিয়ালা হাউস কোর্টে অজ্ঞান হয়ে যান অক্ষয়ের স্ত্রী পুনিতা দেবী। পরে তিনি নিজের চপ্পল দিয়ে নিজেকে মারতে মারতে বলতে থাকেন, ''আমাকেও ফাঁসি দেওয়া হোক। আমার বাচ্চাকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দাও।'' কিছুদিন আগে অবশ্য তিনি বিহারের আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছেন, ধর্যকের স্ত্রীর পরিচয়ে থাকতে চান না বলে।

দক্ষিণ দিল্লির গরিব এলাকা রবিদাস ক্যাম্পে বিনয়ের মা'র রাগ গিয়ে পড়ে সাংবাদিকদের ওপর। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ''আপনারা এ বার কী লিখবেন? আপনারা লিখে কিছু করতে পারবেন? যা ঈশ্বর চাইবেন তাই হবে।'' মুকেশের মা ওই বস্তি ছেড়ে রাজস্থানে নিজের গ্রামে চলে গিয়েছেন। পবনের পরিবার কোনও কথা বলেনি।

ফাঁসি দেওয়া ঠিক বা ঠিক নয়, তা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। বিশ্বের অনেক দেশই এই চরম সাজা দেয় না। কিন্তু নির্ভয়ার ঘটনা এমনই ভয়াবহ ছিল যে, দেশজুড়ে দাবি উঠেছিল, অপরাধীদের চরম সাজা দিতে হবে। সাত বছর আগে ধর্ষণ ও অত্যাচারের ঘটনার পর অভাবিতভাবে নতুন দিল্লির ইন্ডিয়া গেট থেকে রষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত পুরো রাস্তা বেশ কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে গিয়েছিল। এই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে সংসদ আইন সংশোধন করে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়। সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে ফাঁসিকে রাখা হয়।

নির্ভয়াকে গণধর্ষণ ও ভয়ঙ্কর অত্যাচার করেছিল মোট ছয়জন। তার মধ্যে একজন রাম সিং জেলে আত্মহত্যা করেছে। আরেকজন সেই সময় নাবালক ছিল। ১৮ বছর বয়স হতে কয়েক মাস বাকি ছিল। তাই তাকে তিন বছর সংশোধনাগারে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি নির্ভয়া তাঁর বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন। তারপর রাত হয়ে যায়। বাড়ি ফেরার সময় ওই ঘটনা ঘটে। ফাঁকা বাস নিয়ে ফিরছিল ধর্ষকরা। তারাই নির্ভয়ার বাড়ির দিকে যাবে বলে নির্ভয়া ও তার বন্ধুকে বাসে তুলে নেয়। তারপর বন্ধুকে মেরে অজ্ঞান করে বাসের পিছনে ফেলে রাখে। নির্ভয়ার ওপর চলে গণধর্ষণ। ওখানেই থামেনি ধর্ষকরা। নির্ভয়ার যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে পেঁচিয়ে পুরো অন্ত্রটাকেই বাইরে বের করে আনে। তারপর বিবস্ত্র, রক্তাক্ত, অজ্ঞান নির্ভয়াকে বাস থেকে বইরে ফেলে দেওয়া হয়। ওই অবস্থাতেও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানে নির্ভয়া। সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয়।

ফাঁসির পর আশা দেবী বলেছেন, 'আমি নির্ভয়াকে বাঁচাতে পারিনি। তবে ন্যায় পেয়েছি। আমি চাই, আর কেউ যেন নির্ভয়ার মতো এভাবে কষ্ট না পায়, অত্যাচারিত না হয়।' সম্ববত পুরো দেশবাসীর সমবেত প্রার্থনার প্রতিফলনই ঘটেছে আশা দেবীর কথায়।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই,এএনআই)