1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনের উত্তাপে উপেক্ষিত শীতার্তরা

শামীমা নাসরিন
শামীমা নাসরিন
২২ ডিসেম্বর ২০২৩

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে গুটি গুটি পায়ে এসে গেছে পৌষ মাস। কাগজে-কলমে ছয় ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ-মাঘ এ দুই মাস শীতকাল। সে হিসেবে শীত এসে গেছে। কিন্তু নির্বাচনের উত্তাপে এ বছর শীতার্তরা খানিকটা উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

https://p.dw.com/p/4aTQg
বাংলাদেশে শীতকালের ছবি
শীতের দুর্ভোগ নিয়ে খবর কমই চোখে পড়ছে- লিখেছেন শামীমা নাসরিনছবি: Mortuza Rashed/DW

ঢাকায় অবশ্য এখনো শীত সেভাবে জাঁকিয়ে বসতে পারেনি। অন্যান্য বছর পৌষের শুরু থেকে শীত কাঁপন ধরালেও এ বছর যে তার কিছুটা ব্যতিক্রম হবে তা আগেই বলেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। কারণ, পরপর কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় এবং এল নিনোর প্রভাব। ফলে শীতের তীব্রতা বাড়তে দেরি বা তীব্রতা কিছুটা কমও হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন তারা। তবে আবহাওয়াবিদরা যাই বলুন, ঢাকার বাইরে শীত কিন্তু বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহে গ্রামে কয়েক দিন থাকতে গিয়ে সেটা বেশ ভালোই অনুভব করেছি। সঙ্গে দুই বাচ্চা ছিল। শীত মোকাবেলার জন্য তাদের মোটা একাধিক জ্যাকেট, হাত মোজা, পা মোজা, টুপি সবই পরাতে হয়েছে।

উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। পঞ্চগড়ে ১৯ ডিসেম্বর তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দরিদ্র, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ। শীতজনিত নানা রোগ বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের দুর্বল করে ফেলছে। প্রতি বছরের মত এবারও এসবই ঘটছে। কিন্তু একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এ বছর দেশের নানা প্রান্ত থেকে শীতের দুর্ভোগ এবং শীতার্ত মানুষের খবর খুব একটা পাচ্ছি না।

বরং পত্রিকার পাতাজুড়ে শুধু নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার খবর। আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশজুড়ে চলছে তার জোর তোড়জোড়। মানুষ ভোট নিয়েই খবর জানতে চাইছে। তাই পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদম্যাধমের পাতা আর টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নির্বাচনের খবরই প্রাধান্য পাচ্ছে। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে সারা দেশে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে শীতে মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে গুরুত্বে সঙ্গে খবর প্রকাশ হয়। সে সব খবরের প্রভাব সামাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়ে। তারা খাবার, কম্বল ও শীতবস্ত্র নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান।

হাসপাতালগুলো হাঁপানি, সর্দিজ্বর ও ডাইরিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত মানুষে ভরে ওঠার খবর পাওয়া যায়। যে খবর পরিবারে সচেতনতা বাড়ায় এবং শিশু ও বয়স্কদের প্রতি এ সময়ে যত্নশীল হয়ে ওঠার কথা মনে করিয়ে দেয়।

শুধু দুর্ভোগের চিত্র নয়। বরং শীত ঘিরে নানা আনন্দ-আয়োজনের খবরেও এ সময় পত্রিকার পাতা ভরে উঠতো। শহুরে শীতে কনসার্ট, পিঠা উৎসব আর গ্রামে মেলা ও যাত্রাপালা। এবার অবশ্য নির্বাচন ঘিরে দেশে রাজনীতির ময়দায় উত্তপ্ত থাকা এবং নানা ধরণের নাশকতার খবর শীত ঘিরে অনুষ্ঠান আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তাই এ ধরণের এখবর এবার এমনিতেই কম থাকবে।

অনুষ্ঠান আয়োজন না হয় কম হলো, কিন্তু মানুষের ভোগান্তি তো আর ভোটের উত্তাপে কমে যায়নি। বরং অন্য বছরগুলোর মতই ভোগান্তি হচ্ছে। তাই এ সময়ে শুধু নির্বাচনের খবরই নয় বরং শীতার্তদের খবরও প্রকাশ করা উচিত বলে আমার মনে হয়। না হলে আমরা তো স্রোতে গা ভাসানো মানুষ। এবার সব স্রোত নির্বাচনের দিকে। আমরা তাতে গা ভাসাতে গিয়ে শীতের সামনে অসহায় হয়ে পড়া মানুষগুলোকে যেনো ভুলে না যাই।