1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্দেশ অগ্রাহ্য করে প্রতিবাদে পথে স্কুল পড়ুয়ারা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ আগস্ট ২০২৪

চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে পথে স্কুল পড়ুয়ারা। শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ উপেক্ষা করে চলছে প্রতিবাদ। আন্দোলনে সামিল শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

https://p.dw.com/p/4jxrY
কলকাতার আরজি কর হাসপাতাল।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাৈদে এখন রাস্তায় নামছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। ছবি: Satyajit Shaw/DW

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর থেকে টানা আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষজন অরাজনৈতিক মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। এর সঙ্গে জুড়েছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নামছে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুলের পঠনপাঠনের সময় মিছিল হচ্ছে। তাও আবার স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই।

প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা

চিকিৎসকের হত্যার পর থেকেই অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতি শুরু করেছেন হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা। স্বাধীনতার রাত দখলের অভিযান দেখেছে শহর থেকে জেলা।

রাজনৈতিক দলগুলি ছাড়াও সংস্কৃতি কর্মী থেকে আইনজীবী, সকলেই নেমেছেন পথে। প্রথমে স্কুল পড়ুয়াদের প্রতিবাদ সেভাবে দেখা যায়নি। এখন তারাও সামিল হওয়ায় প্রশাসনের মাথাব্যথা বেড়েছে।

গত সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে। কয়েকটি স্কুলের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল শিক্ষা কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠাতেই প্রতিবাদ বেড়ে গিয়েছে।

শুক্রবার হাওড়ার বলুহাটি হাই স্কুল, বলুহাটি গার্লস হাই স্কুল এবং ব্যাটরার রাজলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা প্রতিবাদে নামেন। এরপর স্কুল পরিদর্শক তিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ নোটিশ পাঠান।

স্কুলশিক্ষা দপ্তর এনিয়ে জেলার শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল। জেলাশাসকদের কাছে রাজ্যের মুখ্যসচিবের বার্তাও পৌঁছয়। স্কুলের সময়ে যাতে ইউনিফর্ম পরে কেউ মিছিল না করে, সেটা দেখতে বলা হয় বার্তায়। এভাবে মিছিল হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শনিবার কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়।

শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী মিরাতুন নাহার ডিডাব্লিউকে বলেন, "স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে কেন এরকম সার্কুলার জারি করা হল? তাহলে কি তারাও শাসকদলের দলদাসে পরিণত হয়েছে! এটা সত্যি হলে তা ধিক্কারযোগ্য।"

মিছিলে পড়ুয়ারা

চুঁচুড়ার হুগলি গার্লস হাই স্কুলের পড়ুয়ারা খুন ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে পদযাত্রা করেন। পিপুলপাতি মোড়ে বিবেকানন্দ মূর্তির সামনে জমায়েত হয়। যোগ দেন প্রাক্তনীরা। প্রতিবাদের জন্য শোকজ করার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান তারা।

প্রতিবাদ মিছিল করে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না দক্ষিণ আনুখা মোক্ষদা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিক তপন দাস মিছিলের অনুমতি দেননি। ক্ষোভে পড়ুয়ারা গেটে তালা লাগিয়ে দিলে শিক্ষকরা এক ঘণ্টার বেশি স্কুলে ঢুকতে পারেননি।

নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় স্কুলের ছেলেমেয়েরা প্রতিবাদ করেছে। সরকারি নির্দেশিকা সত্ত্বেও প্ল্যাকার্ড হাতে ইউনিফর্ম পরা পড়ুয়াদের মিছিলে দেখা যায়। নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ পানশিলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও শান্তিপুরের বাগআচরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সহ জেলার কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হন কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষিকা। 

অনেক স্কুলে প্রধান শিক্ষক সরকারি নির্দেশ মানলেও পড়ুয়ারা তা উপেক্ষা করছে। বীরভূমের নলহাটির কুরুমগ্রামের মিত্রভূম উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ গেটের তালা ভেঙে মিছিলে সামিল হয়।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ হাই স্কুলের প্রাক্তনীদের ডাকে কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়ারা মিছিলে সামিল হয়। সেখানে যোগ দেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরাও। ছিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সহপাঠীরা। তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, "সন্দীপ তুই বদলে গেলি, কী করে তোকে বন্ধু বলি!"

প্রতিবাদের মুখ মোনালিসা

স্কুল পড়ুয়া ও শিক্ষকদের প্রতিবাদে মুখ হয়ে উঠেছেন হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতি। ২০ আগস্ট নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের নিয়ে তিনি মৌন মিছিল করেন। 

শিক্ষা দপ্তর কি জানে রাজ্যের স্কুলগুলোতে শিক্ষাকর্মী, শিক্ষক নেই: চন্দন মাইতি

এর আগে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে মোনালিসা ছাত্রীদের বলছেন, "নিজেদের অধিকারের জন্য নির্যাতিতের পাশে দাঁড়াও। নইলে নিজেদের অধিকার খুঁজে পাবে না কোনো দিন।"

মোনালিসার দাবি, সাড়ে ৪০০ জন ছাত্রী তার কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানায় যে, তারা প্রতিবাদে নামতে চায়। তিনি মিছিলের সামিল না হলেও ওরা রাস্তায় নামত। ছাত্রীদের এই নাছোড় মনোভাব দেখে প্রধান শিক্ষিকা তাদের পাশে দাঁড়ান।

এজন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পেলেও অসুবিধা নেই মোনালিসার। বলেন, "চিঠি পেলে আমি উত্তর দেব। এই ধরনের গণ আন্দোলন শোকজ বা বদলি করে থামানো যাবে না।"

অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘শিক্ষা দপ্তর থেকে যে সার্কুলার জারি করা হচ্ছে, তাতে প্রধান শিক্ষকদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। শিক্ষা দপ্তর কি জানে রাজ্যের স্কুলগুলোতে শিক্ষাকর্মী, শিক্ষক নেই? এসব নিয়ে কোনো কথা নেই। শুধু ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারা বলছেন।"

ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের মধ্যে অন্যায্য কিছু দেখছেন না শিক্ষকদের একটা অংশ। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী ডিডাব্লিউকে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত রাস্তায় নেমে বিচার চাইছেন, ছাত্রছাত্রীরাও তো একই কথা বলছে। তারা তো স্কুল থেকে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে চলে যাচ্ছে না। তারা বিচারের দাবি করলে অপরাধ কোথায়? আমরা শিক্ষক হিসেবে এটা কোনোমতেই চাপা দিতে পারি না।"