1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলি করার কারণ অনুসন্ধান

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ সেপ্টেম্বর ২০২২

নারায়ণগঞ্জে বৃহস্পতিবার বিএনপির মিছিলে এমন কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে এমন কী হয়েছিল যে পুলিশকে গুলি করতে হলো? আর বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই বা কেন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন?

https://p.dw.com/p/4GMSz
ছবি: bdnews24.com

ঘটনায় যুবদলের একজন নিহত এবং শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে৷ আর পুলিশ বলছে তাদের কর্মকর্তাসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ রাজা আহমেদ শাওন নিহত হওয়ার ঘটনায় তার ভাই মিলন সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন৷ সেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে আর বলা হয়েছে, বিএনপির মিছিলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে তিনি মিছিল অতিক্রম করার সময় ইট এবং আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন৷ পুলিশও তাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অ্যাডিশনাল এসপি আমির খসরু৷ পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ডিআইটি এলাকার আলী আহমেদ চুনকা পৌর পাঠাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে উত্তরে দুই নাম্বার রেলগেটের দিকে রওয়ানা হন৷ রেলগেটের কাছে গেলে পুলিশ বাধা দেয়৷ পুলিশের বাধায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইট-পাটকেল ছোঁড়ে৷ পুলিশ লাঠিপেটা করার পাশাপাশি টিয়ার গ্যাস ও গুলিও ছোঁড়ে৷ গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন নিহত হন৷

ওই মিছিলে ছিলেন নারাণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি৷ তিনি নিজেও আহত হয়েছেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘ওই খানে পুলিশের গুলি ছোড়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি৷ আমরা আগেই সমাবেশ করার জন্য জেলা প্রশাসক, মেয়র এবং সদর থানার ওসির কাছে লিখিত আদেন করি৷ কিন্তু তারা আমাদের হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি৷ আমরা বৃহস্পতিবার রেলগেটের কছাকাছি গেলে পুলিশের অ্যাডিশনাল এসপিসহ অন্য কর্মকর্তারা গিয়ে আমাদের রাস্তার এক পাশ ছেড়ে দিতে বলেন৷ কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহন চলে না৷ তারপরও আমরা এক পাশ খালি করে দিই৷ কিন্তু এরপরই তারা বলেন, আপনারা সমাবেশ করতে পারবেন না৷ এক পর্যায়ে পুলিশের বাধার মুখে আমাদের নেতা-কর্মীরা লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে চাষাড়ার দিকে যেতে চাই৷ সেখান থেকেই বাসে করে আমাদের নেতা-কর্মীরা যার যার এলাকায় চলে যাবেন৷ এর কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ করে আমাদের মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ গুলি করলো৷ আমার মুখে ছররা গুলি লাগলো৷ শওন ছেলেটা আমার সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়৷ সে-ই আমাকে বলেছিল চাচা আপনি সরে যান, পুলিশ বন্দুক উঁচু করেছে, গুলি করবে৷ আমি সরে গেলাম, আমার কর্মীটা আমার সামনেই গুলিতে মারা গেল৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছোঁড়ে সত্য, তবে তা শাওন নিহত হওয়ার পর৷’’

গুলি ছোঁড়া কি জরুরি ছিল?

তবে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডিশনাল এসপি আমির খসরু বলেন, ‘‘মিছিল নিয়ে রেল গেটের কাছে যাওয়ার পর পুলিশ রাস্তা ছেড়ে দিতে বলে৷ ওই একটি রাস্তা দিয়েই নারায়ণগঞ্জের যানবাহন বাইরে চলাচল করে৷ তখন তারা রাস্তা না ছাড়লে ধাক্কাধাক্কি হয় পুলিশের সঙ্গে৷ এরমধ্যে তারা চার-পাঁচ হাজার লোক হয়ে যায়৷এরপর তারা ইট পাটকেল ছুঁড়লে পুলিশও লাঠিচার্জ করে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে৷ এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়৷ পুলিশ শট গান দিয়ে গুলি করে৷’’

গুলি করার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিলনা- বিএনপির এই দাবির জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ১২-১৪ জন পুলিশ সদস্য রেলগেটের পাশে পুলিশ বক্সে আটকা পড়েন৷ বক্সটি চার দিক থেকে ফাইবার গ্লাস দেয়া৷চারপাশ ঘিরে যখন ইটপাটকেল ছোঁড়া হয় তখন একজন সাব ইন্সপেক্টরের মাথা ফেটে যায়৷ অবস্থা ছিল ব্যাঙ যখন পানিতে পড়ে, উপর থেকে ইট মারলে যা হয়, সেই অবস্থা৷ তখন পুলিশ সদস্যরা সারভাইব করার জন্য শট গানের গুলি করেছে৷ চার দিক থেকে ঘিরে যখন ইটপাটকেল ছুঁড়ছিল তখন তারা আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি করেছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মামলার এজাহারে শাওনের ভাই অভিযোগ করেছেন আগ্নেয়াস্ত্র ও ইটের আঘাতে শাওন নিহত হয়েছে৷’’

সে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না, পুলিশ তো শটগান দিয়ে গুলি করেছে৷’’

এদিকে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মিছিলে বাধা দেয়ার শুরুতে একজন অ্যাডিশনাল এসপির নেতৃত্বে ওই খানে ২০-২৫ জন পুলিশ ছিল৷ আর বিএনপির নেতা-কর্মী ছিল দেড় হাজারের মত৷ তখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের সামনে টিকতে না পেরে ১০-১৫ জন পুলিশ গিয়ে পুলিশ বক্সে আশ্রয় নেয়৷ বাকিরা পিছু হটে যায়৷ এই খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে পাঠানো হলে সংঘর্ষ চরম আকার ধারন করে৷ এক ঘণ্টা ধরে এই সংঘর্ষ হয়৷ অতিরিক্ত পুলিশ আসার পর গুলিতে শাওন নিহত হন৷

পরিবারের সবাই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আমার ভাই কীভাবে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল জানি না: শাওনের ভাই ফরহাদ হোসেন

বুকে গুলি লেগেছে

নিহত শাওনরা তিন ভাই এক বোন৷ শাওন ছিল ভাইদের মধ্যে ছোট৷ শাওনের ভাই ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের বাম বুকে গুলি লেগেছে৷ আমরা হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহ পাই৷ আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশি নিরাপত্তায় আমার ভাইয়ের দাফন হয়েছে৷ পুলিশই হাসপাতাল থেকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে লাশ নিয়ে যায়৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আমরা ভাই কীভাবে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল জানি না৷ তার ফেসবুকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনেক ছবি আছে৷ সে মেকানিকের কাজ করতো৷ বৃহস্পতিবার সকালে আমরা একই সঙ্গে কাজে বেরিয়ে যাই৷’’

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, ‘‘শাওন স্থানীয় ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পদক ছিলেন৷’’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘শাওন নিহত হওয়ার পর লাশ পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়৷ আর মামলাও পুলিশ তাদের মতো করিয়েছে৷’’

এদিকে শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জে নিহত শাওনের বাসায় গেলেও আওয়ামী লীগের পরিচিত কোনো নেতা যাননি বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান৷