সচল হয়নি নন্দিগ্রাম
১৭ মার্চ ২০১৩পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলা৷ জনসংখ্যা ৩ লাখের বেশি৷ জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত শিবির ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে যে সহিংস প্রতিবাদ শুরু করে তার শিকার হয়েছে এই উপজেলাও৷ ৩ মার্চ পুড়িয়ে দেয়া হয় বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলার প্রশাসনিক ভবনসহ ১৬টি দপ্তর৷ আর সেই সাথে পুড়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, দলিল, আসবাবপত্র সব কিছু৷ উপজেলা চেয়ারম্যান আর নির্বাহী কর্মকর্তার গ্যারেজে আগুন দেয়ায় তাদের গাড়ি ২টিও পুড়ে যায়৷ হামলা ও আগুন দেয়া হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে৷ পুরো উপজেলা পরিষদে এখনো নেই তাণ্ডব আর নৃংশসতার চিত্র৷
তবে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা আবার সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছেন৷ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহসান ডয়চে ভেলেকে জানান, অফিসার্স ক্লাব ও শিল্পকলা একাডেমীসহ কিছু ভবন এই ভয়াবহ তাণ্ডবের হাত থেকে রক্ষা পায়৷ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা এখন সেখানে কোনভাবে গাদাগাদি করে বসে অফিস করছেন৷ পৌর মেয়র কিছু আসবাবপত্র কিনে দিয়েছেন৷ তাই তারা ব্যবহার করছেন৷ কিন্তু অফিসিয়াল কাগজপত্র , কম্পিউটার, দলিলপত্র পুড়িয়ে দেয়ায় কাজ এগোনো যাচ্ছেনা৷ টিআর এবং কাবিখার বরাদ্দপত্র পুড়ে যাওয়ায় নতুন করে তালিকা তৈরি করতে হচ্ছে৷ আর এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ কৃষি অফিস পুরে যাওয়ায় ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছেনা৷ আর সম্ভব হচ্ছেনা কর্মসংস্থান প্রকল্পের কাজ৷ কারণ এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের তালিকাও পুড়ে গেছে৷ নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তারা চেষ্টা করছেন জেলা থেকে পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র, দলিল এবং নথি সংগ্রহ করতে৷ কিন্তু তা কতদিনে সম্ভব হবে বলা যায়না৷
এছাড়া পুড়িয়ে দেয়া ভবনগুলোর ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করছে কমিটি৷ হয়তো ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলে আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হবে৷ তাতে অনকে সময় লেগে যাবে৷ আর ততদিন এই উপজেলার বাসিন্দারা বঞ্চিত হবেন নানা ধরনের সেবা থেকে৷
উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, সকালে হামলার সময় পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি৷ সহায়তা চাওয়া হয়েছিল এই আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যেরও, কিন্তু তিনিও ছিলেন নির্বিকার৷ উপজেলা চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, হামলায় জামায়াতের সঙ্গে বিএপির নেতা-কর্মীরাও অংশ নেয়৷ তাই বিএনপি নেতাদের একাংশ থানায় গিয়ে জানায় হাজার হাজার লোক আক্রমণ করেছে৷ সেখানে গেলে পুলিশ বিপদে পড়বে৷ এ কারণেই পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল৷ তিনি প্রমাণ হিসেবে বলেন, ১৬টি অফিস পোড়ানো হলেও ২ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের অফিস অক্ষত আছে৷ এমনকি তাদের নাম ফলকেরও কোন ক্ষতি হয়নি৷ এই দুই ভাইস চেয়ারম্যানই বিএনপির নেতা৷ তিনি বলেন, কম করে হলেও ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে৷ তাছাড়া যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে তাতো টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাবেনা৷
তবে এখনো সরকারের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি নন্দিগ্রাম পরিদর্শন করেননি৷ কাজ শুরুর জন্য দেয়া হয়নি কোন সহায়তা৷ স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য হামলার পর গণশুনানি করেছে৷ আর মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫ জনকে৷