নটী বিনোদিনীর নামে স্টার থিয়েটার, ১৪১ বছর পর স্বীকৃতি
স্টার থিয়েটারের জন্মের ১৪১ বছর পর তার নাম হলো বিনোদিনী থিয়েটার। ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
স্টার থিয়েটার এখন বিনোদিনীর নামে
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর কলকাতা পুরসভা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, স্টার থিয়েটারের নাম বদল করে বিনোদিনী থিয়েটার রাখা হলো। তারপর নামবদল করে নতুন ফলকও লাগানো হয়েছে। নটী বিনোদিনীর উদ্য়োগেই ১৮৩৩ সালে বিডন স্ট্রিটে স্টার থিয়েটার তৈরি হয়। তিনি এই থিয়েটারের জন্য টাকা জোগাড় করেছেন, নির্মাণের সময় মাটি পর্যন্ত বয়ে নিয়ে ফেলেছেন। পরে স্টার থিয়েটার চলে আসে বর্তমানে বিধান সরণীতে।
কে এই নটী বিনোদিনী?
নটী বিনোদিনীকে বলা হয়, বাংলা নাটকের সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী। ১৮৬১ সালে তার জন্ম। ১২ বছর বয়সে অভিনয়ের জগতে প্রবেশ। ২৩ বছর বয়সে খ্যাতির শীর্ষে থেকে অভিনয় ছেড়ে দিলেন তিনি। ততদিনে প্রমীলা, সীতা, দ্রৌপদী, রাধা, আয়েশা, কৈকেয়ী, মতিবিবি, কপালকুণ্ডলায় তার অভিনয় দেখে মোহিত হয়েছেন নাট্যপ্রেমীরা।
কেন অভিনয় ছাড়লেন?
এই নিয়ে নানান মত আছে। কেউ বলেন, বিনোদিনীকে বলা হয়েছিল, স্টার থিয়েটার তার নামে হবে 'বি থিয়েটার'। কিন্তু তা রাখা হয়নি। অভিমানে মঞ্চ ছাড়েন তিনি। কেউ বলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংসের সংস্পর্শে আসার পর তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝোঁকেন বলে নাটক করা ছেড়ে দেন। বিনোদিনী তার আত্মকথায় লিখেছেন, নানান মনোভঙ্গের কারণে থিয়েটার করা দুরূহ হয়ে উঠলো। তিনি তাই অবসর নিলেন।
বিনোদিনীর আত্মকথা
নিজের জীবনের কথা কিছুটা লিখে রেখে গেছেন নটী বিনোদিনী। প্রথম খণ্ড লেখার পর দ্বিতীয় খণ্ড আর লিখে যেতে পারেননি। অভিনয় নিয়ে তার ভালোলাগা, তার জীবনের যন্ত্রণা, ক্লেশ,নানান ঘটনার কথা অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে লিখেছেন। সেই সময়, সেই সমাজ, সেই সময়ের নাটক, কুশীলবদের 'সত্য কথা' ছড়িয়ে আছে বইয়ের পাতায় পাতায়।
গুরু গিরীশ চন্দ্র ঘোষ
নাটকের জগতে নটী বিনোদিনীর গুরু ছিলেন গিরীশ চন্দ্র ঘোষ। তার পরিচালনায় বিনোদিনী অভিনয়. করেছেন একের পর এক নাটক। সারা জীবন গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গেছেন বিনোদিনী। গিরীশ ঘোষও ছাত্রী নটী বিনোদিনীর আত্মকথার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে অনেক সত্য ঘটনার উল্লেখ না থাকায় বিনোদিনীর পছন্দ হয়নি। তিনি নতুন করে লিখতে বলেন। গুরু সম্মত হলেও তা আর লিখে যেতে পারেননি।
বিনোদিনীকে সম্মান
সারা জীবন ধরে অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করেছেন বাংলা রঙ্গমঞ্চের এই সেরা অভিনেত্রী। বড় অভিমান নিয়ে তার আত্মকথা লিখেছেন। কিন্তু তার অভিনয়ে সেসময় মজে ছিল কলকাতা। সেই বিনোদিনী এতদিন পর সম্মান পেলেন। যে স্টার থিয়েটার তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বানিয়েছিলেন, যে থিয়েটারের নাম তার নামে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তার জন্মের ১৪১ বছর পর সেই থিয়েটার অবশেষে বিনোদিনীর নামে হলো। তার নামে কলকাতায় একটি রাস্তাও আছে।
নটী বিনোদিনীকে নিয়ে
নটী বিনোদিনীর জীবন নিয়ে তিনটি বাংলা সিনেমা হয়েছে। তার মধ্যে একটির মুক্তি আসন্ন। অসংখ্য যাত্রা ও নাটক হয়েছে। প্রচুর বই লেখা হয়েছে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে অভিনয় ছেড়ে দেয়া এক নারীর জীবনের সাফল্য, যন্ত্রণা, নাটকীয় ঘটনা এতটাই বেশি ছিল যে, তিনি বারবার ফিরে এসেছেন সিনেমা যাত্রা, নাটকে। উপরের ছবিটি নটী বিনোদিনীর নামে একটি আর্ট গ্যালারির।
শ্রীলেখা মিত্রর প্রতিক্রিয়া
অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলেছেন, ''বিনোদিনী যেহেতু কোঠা পটভূমির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই তার নামে থিয়েটারের নাম দেয়ায় বাকিদের আপত্তি ছিল। তখন থিয়েটারে ছেলেরাই মেয়েদের অভিনয় করতো। মেয়েরা অভিনয় করলে তাকে খারাপ চোখে দেখা হতো। এখানেই বিনোদিনী অনন্যা। তাকে দেখে আরো নারী অভিনয়ের জগতে এসেছে। তাকে নিয়ে আমার একটা অন্য অনুভূতি কাজ করে। ২০১৫ সালে 'কাদম্বরী' ছবিতে আমি বিনোদিনীর ভূমিকায় অভিনয় করি।''
'অবদান ভোলার নয়'
অভিনেতা রজতাভ দত্ত বলেছেন, ''শুধু যারা নাটকের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের জন্য শুধু নয়, প্রতিটি বাঙালির কাছেই এটা খুশির খবর। নটী বিনোদিনীর প্রতি বঞ্চনা ও অন্যায়ের জন্য সবার মনেই দুঃখ-কষ্ট এবং রাগ জমা হয়েছিল। অনেক আগেই এটা করা যেত। তবে শেষ পর্যন্ত বিনোদিনী তার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি পাচ্ছেন, এটাই আনন্দের। অভিনয়ের জগতে বিনোদিনীর অবদান কখনো ভোলা যাবে না।''
'শুধু নাটক হোক'
বিধান সরণীর স্টার থিয়েটার আগুন লেগে পুড়ে যায়। তারপর নবগিত স্টার থিয়েটারে সিনেমা ও থিয়েটার দুটোই হয়। তাই সুরজিৎ বন্দ্য়োপাধ্যায়, দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নাট্যকর্মীদের দাবি, বিনোদিনী থিয়েটারে শুধু নাটকই হোক। বিনোদ